ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৮০৭ বার
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘তোষণ বন্ধ না করলে’ মানুষ এক সময় গণমাধ্যম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।
বুধবার এক দলীয় অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “টেলিভিশনে, পত্রিকার পাতায় মিথ্যা কথা লিখলে জনগণ কি সেটা সত্য ভাবে? জনগণ সরাসরি আক্রান্ত। সেই আক্রান্ত হওয়ার কথা না উঠে যদি বলা হয়- ‘জনগণ নিরাপদ’, তাহলে জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে। একটা সময় আসবে- এই সরকারের তোষণ করতে করতে এই মিডিয়া কিন্তু জনগণ দেখবে না, পত্রিকা পড়বে না।”
দেশের ‘৮০ শতাংশ’ যুবক-কিশোর এবং মাঝ বয়সী মানুষ এখনই বাংলাদেশের টেলিভিশন না দেখে ভারতীয় টেলিভিশন দেখে বলে দাবি করেন গয়েশ্বর।
“ওই স্টার জলসা দেখে, স্টার প্লাস দেখে, স্টার মুভিজ দেখে। কেন দেখে? কারণ ওখানে বিনোদন আছে, বিনোদন দেখে। আর আমাদের এখানকার বিনোদন হল মিথ্যা কথার বিনোদন, মিথ্যা কথা শুনে সুস্থ লোকও অসুস্থ হয়ে যায়।
“আমার কথা জরিপ করে দেখেন, সন্ধ্যার পরে যে কোনো বাড়ির টেলিভিশনের সামনে বইসেন। দেখবেন যে মানুষ বাংলাদেশের কোনো টিভি চ্যানেল দেখে না।”
সাম্প্রতিক সময়ে চিত্রনায়িকা পরীমনির গ্রেপ্তার হওয়ার খবর সংবাদমাধ্যমে যেভাবে আসছে, তা নিয়েও সমালোচনা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা।
“আমাদের এখানে মিডিয়া-পত্রিকা বড় বড় বিষয় থুইয়া কখনো পরীমনি, কখনো খুকু মনি- এসব লইয়া বাজার মাত করে। এগুলো তো পাবলিকের সাবজেক্ট না। আর যেসব কথা পরীমনিরা বলে, এসব কথা প্রকাশ পেলে এরা (ক্ষমতাসীনরা) তো বোরখা পরারও সময় পাবে না”
গয়েশ্বরের ভাষায়, “এগুলো রাজায় রাজায় দ্বন্দ্ব, ভৃত্যে ভৃত্যে দ্বন্দ্ব। তাদের দ্বন্দ্বের ফাঁক দিয়া পরীমনিরা বের হয়ে যায়, মাঝে মধ্যে মিডিয়ার মাধ্যমে একটা বাজার মাত করে…। কিন্তু ওইটা আমার পেটের খোরাক দেবে না, আমার রাজনীতির খোরাকও দেবে না।”
বর্তমান সরকার ‘করোনাভাইরাসে তীব্রভাবে আক্রান্ত হয়েছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এই সরকারের বিরুদ্ধে কী আন্দোলন করবেন? এই সরকারকে কীই বা ধমক দেবেন?
“আমি আগেই বলছি, এই সরকার ভেন্টিলেশনে আছে। এই ভেন্টিলেশনটা খুইলা গেলে সরকারটা নাই। ওরা আতঙ্কে আছে, ওদের হারাবার যন্ত্রণা সারাক্ষণ, ওদের প্রাপ্তির কোনো বিষয় নাই।”
ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সমালোচনা করে গয়েশ্বর বলেন, “তারা প্রতিদিন টেলিভিশনের ছোট বাক্সের মধ্যে নানা কথা বলে, নানা কথা বলে ওরা খুব একটা আত্মতৃপ্তি পায়। বিশেষ করে তথ্যমন্ত্রী তো তথ্যের ভাণ্ডার।…”
“আর ওবায়দুল কাদের যেটা বলেন, এটা পুঁথি পাঠের মত। আমরা জানি, ছোট বেলার কবিতা- সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি। আর উনি পুঁথি পাঠ করে সকালে উঠিয়া আমি প্রকাশ্যে বলি- মিথ্যা কথা ছাড়া যেন সত্য কথা নাহি বলি।”
সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “আজকে দেশে যে পরিমাণ টাকা লুটপাট-দুর্নীতির মাধ্যমে মজুদ হয়েছে, এই আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীরা যেই টাকা লুটপাট করছে ১২ বছরে, তার একশ ভাগের পাঁচ ভাগ টাকা খরচ করলে এই ভ্যাকসিনের সমস্যা হয় না।”
আর মহামারীর মধ্যে মানুষকে সহায়তার জন্য বিএনপির কর্মসূচির কথা তুলে ধরে গয়েশ্বর বলেন, “আমাদের এই কর্মসূচি শুরু। আমরা সব সময় জনগণের পাশে আছি, পাশে থাকব।”
ঢাকার কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে উপজেলায় ‘করোনা হেল্প সেন্টারের’ উদ্বোধন এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। লকডাউনের পর উপজেলা পর্যায়ে এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা উন্মুক্ত অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অনুষ্ঠানে বলেন, “করোনায় আক্রান্ত রোগীরা আধুনিক চিকিৎসা পাচ্ছে না। কিছু বেসরকারি হাসপাতালে আধুনিক চিকিৎসা সেবা থাকলেও সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নাই। মফস্বলের অবস্থা আরো ভয়াবহ। না আছে ঔষধ, না আছে ডাক্তার।
“যেখানে গড়ে প্রতিদিন আড়াইশ জনের বেশি লোক যারা যাচ্ছে বলে সরকারই বলছে। গ্রামে গঞ্জে যারা মারা যাচ্ছে, তাদের তো হিসাবই নাই। একবার লকডাউন দেয়, আরেকবার উঠিয়ে নেয়। আজকে মানুষের জীবন-জীবিকাকে তারা বিপন্ন করে দিয়েছে। জনগণের প্রতি তাদের ন্যূনতম দায়বদ্ধতা নেই বলে সরকার যখন যা খুশি তাই করছে।”
কেরানীগঞ্জ বিএনপির সভানেত্রী নিপুণ রায় চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোসাদ্দেদ আলী বাবুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে দলের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন মাস্টার বক্তব্য দেন।