ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

যেকারণে নরসিংদীর কৃষকরা ঝুঁকছেন লটকন চাষে

বিনোদন ডেস্ক


প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ১০৮৭ বার


যেকারণে নরসিংদীর কৃষকরা ঝুঁকছেন লটকন চাষে

অল্প খরচে বেশি লাভজনক হওয়ায় নরসিংদীর অনেক কৃষকই ঝুঁকছেন লটকন চাষে। লটকন চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে সাফল্যও পেয়েছে অনেকে। এছাড়া এই লটকন দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানী হচ্ছে দেশের সীমানা পেড়িয়ে বিদেশেও।

জেলায় এবছর ১ হাজার ৬শত ১০ হেক্টর জমিতে লটকনের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লটকন চাষ হয়েছে শিবপুর উপজেলায়। সুস্বাধু লটকন ঔষধিগুণ সম্পন্ন হিসেবে জনপ্রিয়তা পাওয়ায় এর চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। এছাড়া অন্যান্য ফসলের তুলনায় কয়েকগুণ লাভ বেশি হওয়ায় লটকন চাষে ঝুঁকছে কৃষকরা। বাজারে আকার ভেদে প্রতি কেজি লটকন বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত।

নরসিংদী জেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার শিবপুর, বেলাব ও রায়পুরা উপজেলার লাল মাটিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও খনিজ উপাদান বিদ্যমান, তাই এখানে লটকনের ভালো ফলন হয়। চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৬শত ১০ হেক্টর জমিতে লটনকনের বাগান করা হয়েছে। যা হেক্টর প্রতি ১৫ টন হারে ২৪ হাজার মেট্রিক টন লটকনের ফলন পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী কৃষি বিভাগ। আর উৎপাদিত এ লটকন পাইকারি ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যার মূল্য পাওয়া যাবে প্রায় ১৬৮ কোটি টাকা।

কৃষি অধিদপ্তর জানায়, রোপণের তিন বছরের মধ্যে লটকন গাছে ফলন আসে। প্রতিটি গাছ ফল দেয় টানা ২০ থেকে ৩০ বছর। লটকন গাছের রোগবালাই তেমন দেখা যায় না। ফল সংগ্রহের ৬০ দিন আগে গাছ প্রতি ৫০ গ্রাম পটাশ পানির সঙ্গে মিশিয়ে গাছের গোঁড়ায় দিলে ফলের মিষ্টতা ও আকার বৃদ্ধি পায়। এ ফল চাষের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো বিক্রির জন্য কোন টেনশন করতে হয় না। পাইকারী ব্যবসায়ীরা লটকন কাঁচা থাকা অবস্থায় চাষিদের কাছ থেকে বাগান খরিদ করে নেয়। বাগান খরিদের পদ্ধতিতে রয়েছে ভিন্নতা। প্রথমে বাগানের মালিকের কাছ থেকে একদল পাইকার দাম-দর করে বাগান ক্রয় করেন, পরে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা পাকা লটকন বাগান থেকে সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করেন। প্রকারভেদে পাইকারি মণ প্রতি দাম ওঠে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। যা খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ৮০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

এদিকে মৌসুমী এ ফলের বেচাকেনাকে ঘিরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রায়পুরার মরজাল, বেলাবরের বাড়ৈচা, পলাশের রাবান ও শিবপুর উপজেলা সদরে ও যোশরে বসছে লটকনের পাইকারী বাজার। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি ক্রেতারা এসে এসব বাজার থেকে কিনে নিয়ে যায় লটকন। পর্যায়ক্রমে হাত বদল হয়ে লটকন যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার বাজারে। অনেকে সরাসরি বাগান থেকে লটকন কিনে সরবরাহ করছেন।

নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শোভন কুমার ধর জানান, লটকন চাষ বৃদ্ধিতে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চারা উৎপাদন করাসহ কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশের বাজারে রপ্তানি হওয়াতে কৃষকরা লটকনের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন । চলতি মৌসুমে ১৬১০ হেক্টর জমিতে লটকনের আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১৫ মেট্রিকটন ফলন হিসেবে লটকনের মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৪ হাজার মেট্রিকটন যার পাইকারি ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রয় মূল্য দাঁড়ায় ১৬৮ কোটি টাকা।

মানুষের শরীরে একদিনে যে পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ প্রয়োজন মাত্র তিন থেকে চারটি লটকন সে চাহিদা মেটাতে পারে। ছোট এ ফলটি ভিটামিন ‘বি-টু’, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহসহ বিভিন্ন খনিজ উপাদানে ভরপুর। যা এই করোনাকালে আমাদের সবার শরীরের জন্য খুবই উপকারী বলে জানান তিনি।
 


   আরও সংবাদ