বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৯৬৯ বার
জেলায় চলতি মৌসুমের শুরুতেই ‘সোনালি আঁশ’ পাটের মূল্য গত বছরের চেয়ে বেশি পাচ্ছে। ভালো মূল্য পাওয়ায় এ জেলার ছয় উপজেলার কৃষকের মুখে এখন হাসির ঝিলিক। করোনার সংকটময় সময়ে স্বস্তি ও খুশিতে আত্মহারা পাটচাষিরা। এতে কৃষক পরিবারে বইছে আনন্দ। সব শঙ্কা কাটিয়ে এবার হাসি ফুটেছে হাজারো পাটচাষির মুখে।
কুষ্টিয়ায় পাট প্রধান চাষ এলাকা সদর, মিরপুর, দৌলতপুর, খোকসা উপজেলার কৃষকরা জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর পাটের দাম বেশি। গত বছর এ সময় প্রতি মণ পাটের দাম ছিল ১ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু এ বছর মৌসুমের শুরুতেই বাজারে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকায়।
প্রতি বিঘায় শুধু পাট বিক্রি করেই কৃষক লাভবান হচ্ছেন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। সেই সঙ্গে পাটখড়ির দাম যুক্ত করলে প্রতি বিঘায় এখন কৃষকের লাভ হচ্ছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। করোনাভাইরাসের সংকটময় সময়ে গত বছরের চেয়ে বেশি দামে পাট বিক্রি করে ভালো লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। এতে পাটচাষিদের মধ্যে খুশির বন্যা বইছে। সবার মুখে ফুটেছে হাসি। কৃষি বিভাগ থেকে সার্বিক সুযোগ-সুবিধা এবং ভালো দাম পেলে আগামীতে পাটের চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।
কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলার ছয়টি উপজেলায় এ বছর ৪০ হাজার ৯৯৬ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। গত বছর ৩৯ হাজার ৫১৭ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছিল। জমিতে দেশি, রবি-১, মোস্তা, জেআরও এবং তোষা জাতের পাট চাষ করা হয়েছে। তবে উচ্চ ফলনশীল তোষা জাতের পাট চাষ হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে পাট কাটা, জাগ দেওয়া, পাটকাঠি থেকে পাট ছাড়ানো ও শুকানো নিয়ে ব্যস্তসময় পার করছেন কুষ্টিয়ার চাষিরা। বৃষ্টিতে নদী-নালা, খাল-বিল ও ডোবাতে পানি থাকায় পাট জাগ দেওয়ার কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি তাদের। গত বছরের তুলনায় আবহওয়া অনুকূলে থাকায় পাটের চাষ বেড়েছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর পাটের দাম ও ফলন বেশি হয়েছে। ফলে লাভবান হচ্ছেন পাটচাষিরা। সূত্র আরও জানায়, চলতি মৌসুমে প্রতি বিঘায় আট থেকে দশ মণ পাট উৎপাদিত হচ্ছে। গত বছরের এ সময় প্রতি মণ পাটের দাম ছিল ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা। এ বছর প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ী ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ এলাকায় পাটচাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ জমি থেকে পাট কাটছেন, কেউ পাটের বোঝা বাঁধছেন, কেউ কেউ মাথায় করে সেই বোঝা নিয়ে যাচ্ছে নদী-খাল কিংবা পুকুরে। আবার অনেক জায়গায় পাট জাগ দিচ্ছেন কৃষকরা। অনেকে আঁশ ছাড়িয়ে, পানিতে ধুয়ে শুকিয়ে বিক্রির জন্য বাজারে নিচ্ছেন। দৌলতপুর উপজেলার খলিসাকুন্ডি ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের কৃষক সুজন আলী বলেন, গত বছরের চেয়ে এ বছরের পাটের দাম বেশি।
গত পাটের মণ ছিল ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা। এ ছাড়া এবার ফলনও ভালো। এতে আমরাও খুব খুশি। একই উপজেলার কৃষক হামিদুর হক বলেন, এ বছর চার বিঘা পাটের চাষ করেছি। বিঘাপ্রতি ১২ মণ পাট উৎপাদন হয়েছে। খরচ বাদে ডাবল লাভ হয়েছে।
দাম ভালো পাওয়ায় আমরা লাভবান। মিরপুর উপজেলার চাষি খাদেমুল ইসলাম বলেন, গত বছর দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। তাতে ১২ মণ পাট উৎপাদন হয়েছিল। এবার দুই বিঘায় ২০ থেকে ২২ মণ পাট ঘরে তুলেছি। এবার লাভে ভালো হয়েছে। কারণ আগের বছরের চেয়ে দামও বেশি, ফলনও বেশি।
এলাকার কৃষকরা জানান, বিগত বছরের তুলনায় দাম ভালো পেয়েছেন তারা। ফলনও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। আবহাওয়াও উপযোগী ছিল। ভালো দাম পেলে আগামীতেও আগ্রহ বাড়বে। ফলে পাট চাষ বাড়বে।
পাটের সঙ্গে সঙ্গে পাটখড়ির চাহিদাও বেশি। প্রতি বিঘায় প্রায় পাঁচ হাজার টাকার পাটখড়ি পাওয়া যায়। সব মিলে চাষিরা খুশি। জ্বালানির কাজ ও বেড়া দেওয়ার কাজে পাটখড়ির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ জন্য দিন দিন পাটখড়ির দাম ও চাহিদা বাড়ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শ্যামল কুমার চৌধুরী জানান, গত বছরের চেয়ে উৎপাদন, চাষের পরিমাণ ও দাম এ বছর বেশি। পাট চাষের উপযোগী আবহাওয়ার ফলে ফলন বেশি পেয়েছেন কৃষক। বাজারে পাটের দাম ভালো যাচ্ছে। আশা করি আগামী বছর কৃষকরা পাট চাষে উদ্বুদ্ধ হবেন। আগামীতে আবাদ আরও বাড়বে। বাসস