ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

বীজ উৎপাদন করেই কোটিপতি হায়দার

বিনোদন ডেস্ক


প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর, ২০২১ ১৬:০২ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৬১০ বার


বীজ উৎপাদন করেই কোটিপতি হায়দার

পাবনার চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়নের চলনবিল অধ্যুষিত গ্রাম কাটেঙ্গা। পানি নামলেই এখানে জেগে ওঠে কৃষিজমি। দুই দশকের বেশি সময় আগে কাটেঙ্গায় কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেন কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল খালেক। আর সেই প্রশিক্ষণ দেখে দেখে বীজ উৎপাদন করেই এখন কোটিপতি হায়দার।

জানা যায়, কৃষিক্লাবে যখন প্রশিক্ষণ চলতো, তখন বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতেন হায়দার আলী নামে এক কৃষিশ্রমিক। নিজের জমি-জমা না থাকা এবং অন্যের ক্ষেতে কাজ করায় ‘কৃষক’ পরিচয় দিতেও হীনম্মন্যতায় ভুগতেন। ফলে প্রশিক্ষণ নিতে ক্লাবে প্রবেশ করতেন না। বাইরে দাঁড়িয়ে শুনতেন কৃষি কর্মকর্তার কথা।

তাতে মন ভরছিল না হায়দার আলীর। একদিন কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল খালেককে বলেন, ‘স্যার আমাকে কী একটু প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় না।’ আকুতি শুনে হায়দারকে কৃষিক্লাবে ভর্তি করেন আব্দুল খালেক। অন্য কৃষকদের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নেন হায়দারও। ওই প্রশিক্ষণই হায়দারের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

পলিসমৃদ্ধ জমিতে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করে কৃষিশ্রমিক হায়দার আলী এখন স্বাবলম্বী। ১৩ বছর পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করে এখন অর্ধকোটি টাকার মালিক।হায়দার আলী লেখাপড়া করেননি। পোড় খাওয়া জীবনে অনেক কষ্ট ভুলে গেছেন। তবে যে কৃষি প্রশিক্ষণ তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে, তা এখনো ভোলেননি। কৃষি কর্মকর্তা খালেকের নির্দেশনা এখনো তার কানে বাজে।

নিঃস্ব থেকে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠা হায়দার আলী চাটমোহরের চলনবিল পাড়ের কাটেঙ্গা গ্রামের সরু প্রামাণিকের ছেলে। বীজ উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠা এ কৃষক তার সাফল্যের গল্প জানাতে গিয়ে জাগো নিউজকে এসব কথা জানান।

হায়দার আলী জানান, পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন দিয়ে শুরু করলেও পরে তিনি কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল খালেকের কাছ থেকে ধান, সবজি, পাট, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও রসুন চাষ ও এর বীজ উৎপাদনের প্রশিক্ষণ নেন। বর্তমানে তিনি পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে বেশি নজর দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালে চার কাঠা জমিতে পেঁয়াজ বীজ করেছিলেন। ১৬ কেজি ফলন পেয়েছিলেন। তার পরের বছর ১৬ কাঠা জমিতে ৯৩ কেজি পেঁয়াজ বীজ হয়েছিল। এর মধ্যে ৮৫ কেজি বিক্রি করেছিলেন। বাকি আট কেজি নিজে আবাদের জন্য রাখেন। পেঁয়াজ বীজ (কদম চাষ) চাষ করার পর যে পেঁয়াজ পাওয়া যায়, তা বিক্রি করেই আবাদের খরচ ওঠে।’

হায়দার জানান, চলতি বছর তার ঘরে এসেছে আট মণ ২০ কেজি পেঁয়াজ বীজ। মৌসুমের শুরুতে যদি তিনি এ পেঁয়াজ বীজ বিক্রি করতেন, তবুও অন্তত চার লাখ টাকা পেতেন। বীজ ঘরে সংরক্ষণ করায় মৌসুমের শেষে এসে বীজের দাম বেড়েছে। কেজিপ্রতি চার হাজার টাকা দরে বিক্রির আশা করছেন তিনি। প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম পেলে এবার প্রায় ১০-১১ লাখ টাকার পেঁয়াজ বীজ বিক্রি করতে পারবেন হায়দার।

সফল এ কৃষক বলেন, ‘মূলত আমি লাখপতি হয়ে উঠেছি ২০১২ সালেই। ওই সময় আমার চাষি হিসেবে সফল হয়ে ওঠার শুরু। প্রায় এক যুগ পর এখন আমার নিজের নামে আড়াই বিঘা জমি। বাড়ির সঙ্গে জমি কিনেছি। কিছু জমি লিজ নিয়েছি। ঘর পাকা করেছি, মাছ চাষের জন্য পুকুর খনন করেছি। বাড়িতে গরু পালন করছি। পুরো বাড়িটা এখন খামার। অথচ এক সময় আমি অন্যের বাড়িতে কাজ করতাম।’

হায়দার আলী আরও বলেন, ‘আধুনিক কৃষি প্রশিক্ষণে আমার ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে। কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল খালেকের পরামর্শে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করেই সফলতা এসেছে। বছরে এখন সর্বসাকুল্যে আমি প্রায় ৬০ লাখ টাকা আয় করতে পারছি। নিজে পড়ালেখার সুযোগ না পেলেও সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছি। তাদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাই।’

জানতে চাইলে কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল খালেক বলেন, ‘অন্যের বাড়িতে কাজ করে আইপিএম প্রশিক্ষণ নেওয়াটা হায়দার আলীর জন্য অনেক কঠিন ছিল। তার আগ্রহের কারণে তাকে পরামর্শ দিয়ে আজকের অবস্থানে আনা সম্ভব হয়েছে।’

চাটমোহর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন জানান, ‘আমি নিয়মিত হায়দার আলীর কৃষিকাজের খোঁজখবর রাখি। গত মৌসুমেও হায়দারকে এক একর পেঁয়াজ বীজ করার প্রদর্শনী প্লটের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল। সেখানেও তিনি সফল হয়েছেন।’
 


   আরও সংবাদ