ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

অধিক লাভে আখ চাষের দিকে ঝুঁকছেন গাজীপুরের চাষিরা

বিনোদন ডেস্ক


প্রকাশ: ২১ অক্টোবর, ২০২১ ০৯:৫৯ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৯৭ বার


অধিক লাভে আখ চাষের দিকে ঝুঁকছেন গাজীপুরের চাষিরা

গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জে আখ চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে ওই এলাকার কৃষকরা খুবই খুশি। তারা বাজারে ন্যায্য মূল্যও পাচ্ছেন ভালো। এতে কৃষকদের আখ চাষে আগ্রহ বাড়ছে।

স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গতবছর ৬০ হেক্টর জমিতে ৩ হাজার ৬১৪ টন আখের আবাদ হয়েছে। এ বছর তা বেড়ে ৬২ হেক্টর জমিতে ৩ হাজার ৭৩৫ টন আখের আবাদ হয়েছে।

উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নেই কমবেশি আখের চাষ হয়। তবে বাহাদুরসাদী, জামালপুর, মোক্তারপুর ও কালীগঞ্জ পৌরসভায় একটু বেশি চাষ হয়ে থাকে। এ উপজেলায় বিভিন্ন জাতের আখ চাষ হলেও ঈশ্বরদী ১৬ ও ৩৬, টেনাই, বিএসআরআই ৪১ ও ৪২ জাতের আখ বেশি চাষ হচ্ছে। দিন দিন আখ চাষে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে যে আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে, এ ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে।

এখন আখের ভরা মৌসুম। গরম কিংবা শীত যে কোনো ঋতূতেই পাওয়া যায় আখ। আর এই আখ বাংলাদেশে চিনি উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল। আখের রস হালকা থেকে গাঢ় সবুজ বর্ণের মিষ্টি তরল পানীয়। আখ বা আখের রস হলো প্রাকৃতিক মিনারেল ওয়াটার, যা আমাদের শুধু তৃষ্ণা নিবারণ করে না, বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধেও কার্যকরী ভূমিকা রাখে। আখ চাষে ৭/৮ মাসের মধ্যে বাজারজাত করা যায় এবং ফলনও পাওয়া যায় বলে এ ফসল চাষ করে অনেক কৃষক স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের বাশাইর গ্রামের আখ চাষি আব্দুর রহমান জানান, তিনি গত বছর ১০ শতাংশ জমিতে আখের চাষ করেছেন। ওই পরিমাণ জমিতে চাষ করতে খরচ হয়েছিল ৩৪ হাজার টাকা। তিনি পাইকারী ৪০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। এবছর একই পরিমাণ জমিতে আখের চাষ করে ৪৪ হাজার টাকা খরচ করে তিনি ৫৫ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন।

একই ইউনিয়নের খলাপাড়া গ্রামের আরেক আখ চাষি ইসলাম সরকার বলেন, ‘আমি নিজেই সব কাজ করি। এজন্য খরচ খুব একটা হয় না। তবে ৯ শতাংশ জমিতে আমার মাত্র ১০/১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গত বছর একই পরিমাণ জমিতে একই খরচে ৮০ হাজার টাকা বিক্রি করলেও এ বছর ওই জমির আখ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি।’ একই গ্রামের আব্দুল বাতেন জানান, তিনি মাত্র ৫ শতাংশ জমিতে আখ চাষ করেছেন। গত বছরও তিনি একই পরিমাণ জমিতে আখ চাষ করেছেন। তবে ৩২ হাজার টাকা বিক্রি করলেও এ বছর বিক্রি করেছেন ৪০ হাজার টাকা।

উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নে দেউলিয়া গ্রামের আখ চাষি আবেদ আলী জানান, এবার প্রথম তিনি ৪ বিঘা জমিতে আখের চাষ করেছেন। গত বছর প্রতিবেশীকে দেখে আখ চাষে তিনি উদ্বুদ্ধ হন। ফলন এবং ন্যায্য মূল্যে খুশি বলেও জানান ওই আখ চাষি।
কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ঘোনাপড়া গ্রামের আক্তার হোসেন বলেন, ‘প্রতিবেশী দুলাল হোসেন, মাজু মিয়া, পনির হোসেন, আকরাম হোসেন মিলে স্থানীয় একজনের কাছ থেকে ৪ বিঘা জমি বর্গা হিসেবে নিয়ে আমরা ৫ জন মিলে আখের চাষ করছি। তবে ফলন এবং ন্যায্য মূল্যে আমরা সবাই খুশি।’

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. সাইফুল ইসলাম জানান, আখের রসে ক্লান্তি দূর করার পাশাপাশি ত্বকের জন্যও এটি সমান কার্যকরী। এছাড়াও আখের রসকে প্রাকৃতিক এনার্জি ড্রিংকসও বলা হয়। আখের রস গর্ভবতী নারীদের খাদ্য তালিকায় যুক্ত করলে উপকার লাভ করা যায়। এটি গর্ভধারণে সাহায্য ও নিরাপদ গর্ভাবস্থা নিশ্চিত করে। আখের রসে প্রচুর ফলিক এসিড বা ভিটামিন বি ৯ থাকে, যা স্পিনা বিফিডার মতো জন্মগত ত্রুটি থেকে সুরক্ষা দেয়।

এছাড়াও নারীর ডিম্বস্ফোটনের সমস্যা কমায় এবং গর্ভধারণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। দাঁত ক্ষয়ের পাশাপাশি নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধের সমস্যাও আখের রস পান করার মাধ্যমে পূরণ করা যায়। রসে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের মতো খনিজ উপাদান থাকে, যা দাঁতের এনামেল গঠনে সাহায্য করে। শিশুরা যদি আখ চিবিয়ে রস পান করে, তাহলে দাঁতের সমস্যা কম হয়। আখের রসে ক্যালসিয়াম থাকে, যা দাঁত ও হাড়ের শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। পেটের সমস্যায় আখ খুব উপকারী।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম বলেন, ‘উপজেলার যেসব এলাকায় আখ চাষ বেশি হচ্ছে, স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে ওই এলাকার আখ চাষিদের প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনী দেয়াসহ আখ মাড়াই যন্ত্র দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি আখ লাগানো থেকে শুরু করে উঠানো পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে-ধাপে সার প্রয়োগ ও রোগ-বালাই নিয়ে পরামর্শ দিচ্ছে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা।’


   আরও সংবাদ