ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৩ নভেম্বর, ২০২১ ১৫:৩৬ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৮১ বার
পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি : দেশের বিভিন্ন স্থানে ইউপি নির্বাচনের হাওয়া বইছে । অনুরপ অবস্থা রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলাতেও । আগামী ১১ নভেম্বর রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার ১০ ইউনিয়নের ইউপি নির্বাচন । দশ ইউনিয়নে ইউপি নির্বাচন হবে তার মধ্যে ১ নং চৈত্রকোল ইউনিয়নও অন্তর্ভুক্ত । এ ইউনিয়নেরও নির্বাচন হবে চলতি সনের আগামী ১১ নভেম্বর ।
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে উত্তর-পশ্চিম কর্নারে এ ইউনিয়নটির অবস্থান । ইউনিয়নটির পুর্বে ভেন্ডাবাড়ী, দক্ষিণে মদনখালী, দক্ষিণ-পশ্চিমে উপজেলার টুকুরিয়া, উত্তরে মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়া মাসিমপুর ও পশ্চিমে মিলনপুর ইউনিয়ন অবস্থিত।
বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, উনবিংশ শতাব্দী ও তার পুর্বে এ ইউনিয়ন সহ তৎসংলগ্ন এলাকা মূলত হিন্দু অধিষ্ঠিত এলাকা ছিল। তৎকালীন ভারতবর্ষের প্রশাসনিক ব্যবস্থা অনুযায়ী বড়লাটের নিয়ন্ত্রনে জমিদাররাই তখন এই এলাকা শাসন করত। সেই আমলে হিন্দু ধর্মীয় প্রথা অনুযায়ী এ ইউনিয়নে হিন্দুদের দেহদাহর উদ্দেশ্যে একটি গণদাহ চুল্লি নির্মাণ করা হয়েছিল। সংস্কৃত ভাষায় এই দাহ চুল্লিকে চিতা বা চিত্রা বলা হত। এর থেকেই এই এলাকার নাম হয় 'চিত্রকোল'। পরবর্তিতীতে ১৯৩০ সালে ব্রিটিশ সরকার থেকে যখন এই এলাকার জরিপ করা হয়, তখন চিত্রের নিকটস্থ বিলের নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রশাসনিক দপ্তর বিলের নিকটে অবস্থিত হওয়ায় সেই সময ঐ ইউনিয়নের নামও চিত্রকোল বলে অভিহিত হয়। ১৯৪০ সালে চূড়ান্ত জরিপের পর সংস্কৃত ভাষা অনুযায়ী নামটি সংশোধন করে চৈত্রকোল নামটি পরিচিতি লাভ করে।
ইউনিয়নটিতে মোট গ্রামের সংখ্যা ২১ টি । গ্রাম গুলি হচ্ছে, চৈত্রকোল, গোবিন্দপুর, ভরট্ট জানপুর, খালিশা, বাসুদেবপুর. উত্তরদুর্গাপুর, জলাইডাঙ্গা, ভাদুরাঘাট, অনন্তরামপুর, খাসতালুক, চকবরখোদা, ঝাড়আমবাডী, ভাবুনচুডা,পালগড, ছিলিমপুর, শাল্টী,দানিশনগর, ঝাড়বিশলা, হাজীপুর, রামচন্দ্রপুর ও চককৃঞ্চপুর
ইউনিয়নটিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৭ টি। এর মধ্যে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭টি, রেজি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫টি, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪ টি ও মাদ্রাসা ৫টি ।
ইউনিয়নটিতে অন্যান্য প্রতিষ্টানের মধ্যে মধ্যে রয়েছে মসজিদ মসজিদ ৫৭ টি, মন্দির ৫ টি, গীর্জা ৩ টি, ঈদগাহ্ মাঠ ১৬ টি । স্বাস্থ্য কেন্দ্র ১টি, দাতব্য চিকিৎসালয় ১টি, কমিউনিটি ক্লিনিক ৩ টি, ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র ১ টি ও কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র-২টি ।ইউনিয়নটিতে রয়েছে ৩ টি হাট বাজার । সেগুলো হচ্ছে,কলোনী বাজার, পীরের হাট ও সাল্টী সমসদিঘী বাজার ।
দর্শনীয় স্থান হিসেবে ইউনিয়নটিতে রয়েছে অষ্টাদশ শতাব্দীর শ্রেষ্ট বাঙ্গালী সাধক কবি কাজি হেয়াত মামুদ এর মাজার শরীফ । যেটির অবস্থান বড় দরগাহ মহা সড়ক হইতে এগার কি: মি: পশ্চিমে ভেন্ডাবাডী হয়তে ২কি.মি দক্ষিণে সোনামতি ব্রিজ হতে ১কিমি পশ্চিমে ঝাড় বিশলা গ্রামে । বিনোদনের জন্য রয়েছে একটি ইকো পার্ক । যেটি ভেন্ডাবাডী হইতে ৩কি.মি. পশ্চিমে দানিশনগর গ্রামে অবস্থিত । রয়েছে খৃষ্টানদের উপাসনালয় মারিয়া গীর্জা। যেটি ভেন্ডাবাডী হইতে ৩কি.মি. দক্ষিণে ঝাড়ামবাডী হইতে ৪ কিমি পশ্চিমে ছিলিমপুর হইতে ১ কি.মি. দক্ষিণে খালিশায় ।
এ ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা- ১৭ হাজার ৮ শত ৬৫ জন ্। এর মধ্যে পুরুষ ৮ হাজার ৯শত ৮৫ এবং মহিলা ৮ হাজার ৮ শত ৮০ জন । চেয়ারম্যান পদে প্রতিদন্ধিতা করছেন ৫ জন । সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১৩ জন এবং সাধারন সদস্য পদে ৪৫ জন ।
গত নির্বাচনে নৌকা প্রতিকে এখানে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন জিয়াউর রহমান সবুজ । তিনি উক্ত ইউনয়ন আ’লীগের সভাপতি । এবারেও তিনি দলীয় মনোনয়ন নৌকা প্রতিক চেয়েছিলেন কিন্তু পাননি । দলীয় নৌকা প্রতিক পেয়েছেন ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারন সম্পাদক আরিফুজ্জান আরিফ । তিনিই নৌকা প্রতিকে নির্বাচনে প্রতিদন্ধিতা করছেন । চেয়ারম্যান পদে অপর যে ৪ জন প্রতিদন্ধিতা করছেন তারা হলেন আব্দুস সালাম (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ), খায়রুল ইসলাম(সতন্ত্র) এবং রুহুল আমিন (জাকের পার্টি) ও আরিফুল ইসলাম (সতন্ত্র) । অপর দিকে ৩টি সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১৩ জন মহিলা প্রতিদন্ধিতা করছেন । যারা প্রতিদন্ধিতা করছেন তারা হলেন, মাকছুদা বেগম, নারগীছ বেগম, কোহিনুর বেগম, বেবি আক্তার,বিলকিছ বানু, রয়ন্তি, মোরশেদা বেগম, শাহানা বেগম, সাইফুন নেছা, শাহিনুর খানম, কহিনুর বেগম, মোছলেমা বেগম ও রুপালী বেগম । এছাড়া ৯টি সাধারন সদস্য পদে ৪৬ জন প্রার্থী প্রতিদন্ধিতা করছেন । যারা প্রতিদন্ধিতা করছেন তারা হলেন,শাহিদুল ইসলাম, খাজা ময়েন উদ্দিন, বুলু মিয়া, সাইদুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, শরিফুল ইসলাম, সেকেন্দার আলী, নওশা মিয়া, মোকতার হোসেন, শাহজাহান মিয়া, সুবল মিয়া, তোফাজ্জল হোসেন, আলমগীর হোসেন, পিটার লাকড়া,খোকা মিনজ, মোস্তাফিজার রহমান, মতিয়ার রহমান, আনোয়ার হোসেন, তারিকুল ইসলাম, ইমদাদুল হক, নুর আলম, সাহাদত মিয়া, আব্দুর রহিম, হযরত আলী, আব্দুর রহিম, রেজাউল করিম, শওকাত হোসেন, মনিরুজ্জামান, বাবলু মিয়া, মোফাখেরুল ইসলাম, আল মিজান শ্যামল, আব্দুল কায়েম, মোদাবেরুল ইসলাম, মোফাজ্জল হোসেন, নুরুন্নবী, আব্দুল কাশেম মিয়া, গোলাপ হোসেন, আশিকুল ইসলাম, শহিদুল মিয়া, রাশেকুল মওলা, খাদেমুল ইসলাম, রাজন, আকতার হোসেন ও মোস্তাফিজার রহমান বাবলু ।
ইউপি সদস্য প্রার্থী অনেকের সঙ্গে কথা হলে তারা অনেকে সুষ্ট নির্বাচন নিয়ে এখনও সন্দিহান । তারা সকলেই একটা সুষ্ট নির্বাচনের প্রত্যাশা করছেন ।
প্রতিদন্ধি চেয়ারম্যান প্রার্থীদের কাছে প্রশ্ন ছিল- আপনি কেমন নির্বাচন প্রত্যাশা করেন এবং জয়ের ব্যাপারে কতটা আশাবাদী ?
এ ব্যাপারে আরিফুজ্জামান শাহ তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমার বিশ^াস নির্বচন সুষ্ট হবে এবং আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ।
আব্দুস সালাম মিয়া তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, গত নির্বাচনে যে অনিয়ম হয়েছে এবারের নির্বাচনে যেন তেমনটা না হয় , আমরা সেটাই চাই ।
আরিফুল ইসলাম তার প্রতিক্রিয়ায় সুষ্ট নির্বাচনের আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, সুষ্ট নির্বাচন হলে আমি জয়ের ব্যাপারে অনেকটাই আশাবাদী ।
সর্বপরি এখন পুরো ইউনিয়নে চলছে নির্বাচনী আমেজ । ভোটারেরাও অপেক্ষা করছেন ১১ নভেম্বর দিনটির জন্য । যে দিন তারা তাদের ইউনিয়নের জন্য নির্বাচিত করবেন প্রতিনিধি ।
নিউজ/বি