ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

খেলাপি ঠেকাতে প্রণোদনা সহায়তা হচ্ছে মেয়াদি ঋণ

আটকে যাচ্ছে বিনিয়োগ

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ০৮:৩০ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫২৩ বার


খেলাপি ঠেকাতে প্রণোদনা সহায়তা হচ্ছে মেয়াদি ঋণ

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কম সুদে এক লাখ কোটি টাকার ওপরে প্রণোদনা কর্মসূচির মাধ্যমে ঋণ দেয়া হয়েছিল। 

এ জন্য সরকার সাড়ে চার শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদহারের ওপর ভর্তুকি দিয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী এক বছর পর এসব ঋণ পরিশোধের কথা থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা অনাদায়ী থেকে যাচ্ছে। এমনি পরিস্থিতিতে অনাদায়ী এসব ঋণখেলাপি ঠেকাতে মেয়াদি ঋণে পরিণত করছেন ব্যাংকাররা। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, মেয়াদি ঋণ পরিণত না করলে খেলাপি ঋণ আরো বেড়ে যাবে। আর খেলাপি ঋণ বাড়লে মুনাফা দিয়ে বাড়তি প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে। এতে ব্যাংকের কমে যাবে নিট আয়।

গত বছরের প্রণোদনা ঋণ কাক্সিক্ষত হারে আদায় না হওয়ায় এ বছর নতুন করে ঋণ বিতরণে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, কুটির ও এসএমই ঋণ বিতরণ করা হয়েছে মাত্র তিন হাজার কোটি টাকা। যেখানে পাঁচ মাসে বিতরণ করার লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা।

এ বিষয়ে ব্যাংকারদের শীর্ষ সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়্যাল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান গতকাল  জানিয়েছেন, গত বছরে বিতরণ করা প্রণোদনা ঋণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আদায় করা যাচ্ছে না। ঋণগ্রহীতারা তা পরিশোধ করতে না পারায় ব্যাংকের খাতায় ওই সব ঋণ এখন অনাদায়ী থেকে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে খেলাপি ঠেকাতে এখন ওইসব ঋণ এক বছরের জন্য নবায়ন করা হচ্ছে। কেউ কেউ মেয়াদি ঋণে পরিণত করছে। তবে, এ সময়ের জন্য গ্রাহকরা সুদহারের ওপর কোনো ছাড় পাবেন না। ৯ শতাংশ সুদেই বকেয়া ঋণ পরিশোধ করতে হবে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে। তবে, ডিসেম্বর প্রান্তিকে কিছু কমবে। কারণ, ডিসেম্বর প্রান্তিকে পুরো বছরের লাভ-ক্ষতির হিসাব করা হয়। বছরের শেষ মাসে ব্যাংকগুলো সাধারণত. ঋণ আদায়ের ওপর বেশি হারে জোর দেন। তবে মার্চ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ আবারো বেড়ে যাবে। কারণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শিথিলতা চলতি মাসেই শেষ হচ্ছে। আগামী বছর থেকে স্বাভাবিক নিয়মেই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এতে খেলাপি ঋণের বড় ধরনের চাপ বেড়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো গ্রাহক প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ক্ষুদ্র ঋণ নিলে সুদহারের ওপর ৫ শতাংশ ছাড় পেতেন। অর্থাৎ ৫ শতাংশ সরকার ঋণ বিতরণ করা ব্যাংকগুলোকে পরিশোধ করছে। বাকি ৪ শতাংশ গ্রাহক ব্যাংককে পরিশোধ করছে। আর সেবা ও বৃহৎ ঋণের ক্ষেত্রে গ্রাহক সাড়ে চার শতাংশ সুদহারের ওপর ভর্তুকি পাচ্ছেন। তবে এ সুযোগ এক বছরের জন্য। নীতিমালা অনুযায়ী, এসব ঋণ এক বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে না পারলে আরো এক বছরের জন্য পরিশোধের সুযোগ পাবেন। তবে এ ক্ষেত্রে সুদহারের ওপর কোনো ভর্তুকি পাবেন না।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, গত বছর প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় এক লাখ কোটি টাকার ওপরে ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ক্ষুদ্র ঋণ ছিল সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা। বাকি, সেবা, বৃহৎ, রফতানি খাতসহ বিভিন্ন পুনঃঅর্থায়ন ছিল। কিন্তু এসব ঋণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ গ্রাহকরা পরিশোধ করতে না পারায় চলতি অর্থবছরের জন্য নতুন করে এসব ঋণ বিতরণ আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন তারা। এ কারণে এ কর্মসূচির আওতায় নতুন ঋণ বিতরণ অনেকটাই স্থিমিত হয়ে পড়েছে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এ বছর ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে অধিক সাবধানতা অবলম্বন করা হচ্ছে। ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ ছাড়া গত বছর উদ্যোক্তাদের বড় একটি অংশ প্রণোদনার ঋণ গ্রহণ করেছেন। নীতিমালা অনুযায়ী একবার প্রণোদনার ঋণ নিলে দ্বিতীয়বার তা নেয়া যাবে না। যদিও, প্রথম বছর ঋণ নেয়ার কোঠা শেষ না হলে বাকি অংশ পরের বছর গ্রহণের সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতিমালায় বলা হয়েছিল, একজন গ্রাহক তার আগের মোট ঋণের ৩০ শতাংশ প্রণোদনা কর্মসূচির ঋণ নিতে পারবে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে তা ধাপে ধাপে বাড়িয়ে শতভাগ করা হয়।
 
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, কোঠার অর্ধেক বা বেশি অংশ ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করতে না পারলে পরের বছর এ ঋণ গ্রহণ করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। এর ফলে এ কর্মসূচির আওতায় নতুন ঋণ বিতরণে গতি পাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করা হয়েছে মাত্র তিন হাজার কোটি টাকা, যেখানে পুরো বছরের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। এ হিসেবে পাঁচ মাসে ঋণ বিতরণের কথা ছিল সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা।


   আরও সংবাদ