ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৮ ডিসেম্বর, ২০২১ ১১:৩৯ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৪০ বার
চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। তবে এ সময় ঋণ আদায় কমেছে ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার ধাক্কা সামলে নতুন করে যাত্রা শুরু করেছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এখনো পুরোপুরি ভয় কাটিয়ে উঠতে পারছেন না উদ্যোক্তারা। ইতোমধ্যে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে শঙ্কিত বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব। এ কারণে এখন হাতে টাকা জমা রাখতে চাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। করোনার তৃতীয় ধাক্কায় লকডাউনের মতো কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ব্যবসা পরিচালনা খুবই কঠিন হবে। তাই ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধে গড়িমসি করছেন অনেক উদ্যোক্তা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে প্রায় এক লাখ ছয় হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা, যা ২০২০ সালের একই সময়ে ছিল প্রায় ৯৪ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১১ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা বা ১২ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
এদিকে শিল্পঋণ বিতরণের বিপরীতে আদায়ের হার ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ কম হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিল্প খাতে ঋণ আদায় হয়েছে প্রায় ৮২ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা, যা ২০২০ সালের একই সময়ে ছিল প্রায় ৮৪ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে শিল্প খাতে ঋণ আদায় কমেছে এক হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিতরণ করা শিল্পঋণের মধ্যে ছয় লাখ ১৩ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এই অঙ্ক আগের বছরের তুলনায় ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বকেয়া ছিল পাঁচ লাখ ৭১ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। শিল্প খাতে বিতরণ করা ঋণের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণের অঙ্ক ৮৪ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা, যা ২০২০ সালের একই সময়ে ছিল ৮৫ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছর জুনে দেশে করোনার সংক্রমণ ও প্রাদুর্ভাবের কারণে শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ কমেছিল, তবে সরকারের বিশেষ প্রণোদনার ঋণপ্রবাহ বাড়ায় সার্বিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সামগ্রিকভাবে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণে খুব বেশি উন্নতি হয়নি। গত অক্টোবর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে মাত্র ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, এক বছরের ব্যবধানে শিল্প খাতের মেয়াদি ঋণ বিতরণ ৪ শতাংশ বা ৬১৮ কোটি টাকা কমেছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিল্প খাতে মেয়াদি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা, যা ২০২০ সালের একই সময়ে ছিল ১৫ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা। বৃহৎ ও ক্ষুদ্র শিল্পে মেয়াদি ঋণ বিতরণের অঙ্ক যথাক্রমে ০.৬০ ও ৯.৬৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও মাঝারি শিল্পে ৩৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। চলতি মূলধন ঋণ বিতরণের পরিমাণ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ছিল ৭৯ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। তবে এক বছর পর ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৯১ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। বৃহৎ, মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পে চলতি মূলধন ঋণ বিতরণের অঙ্ক বৃদ্ধি পেয়েছে যথাক্রমে ১৪.৩৪, ১৯.৬৫ ও ২৪.৩০ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক লাখ ছয় হাজার ৫৯৬ কোটি ৮২ লাখ টাকার শিল্পঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে বৃহৎ, মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পে যথাক্রমে ১২.২৬, ৬.৭৮ ও ২১.২৮ শতাংশ বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বিতরণ করা ঋণের মধ্যে শিল্পের আকার অনুযায়ী বৃহৎ, মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পের হার যথাক্রমে ৮১.৮৬, ৯.৮২ ও ৮.৩১ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, করোনা মহামারি পরিস্থিতির কিছু উন্নতি হওয়ায় শিল্পঋণের চাহিদা বেড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে শিল্প খাত উল্লেখযোগ্য অবস্থানে চলে আসবে।