ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ০৯:৪৮ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৭৪ বার
নির্বাসিত কোনো দ্বীপে জীবনযাপনের অনুসঙ্গ হিসেবে ফেসবুকও চেয়ে বসলেন বন্ধু। সান্ধ্য আড্ডায় এমন অনাকাঙ্ক্ষিত আবদারে তাকে সামান্যতমও বিব্রত মনে হলো না। বরং তখনও তার চমশার গ্লাসে ভেসে বেড়াচ্ছে ফেসবুকের নীল-সাদা স্ক্রিন। বাকিদেরও সহসাই ডুবতে দেখা গেল জনপ্রিয় এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উত্তাল অথচ রঙিন স্রোতে।
নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হলেও আড্ডায় সামাজিকতা রক্ষায় এটি কতটা কার্যকর-এমন প্রশ্ন তোলাটা মোটেও অবান্তর নয় বলছেন তাত্ত্বিক কিশ্চিয়ান ফুকস।
আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে ফেসবুক। বিশ্বে অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমের তুলনায় এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এত এত মানুষ ফেসবুকের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন সঙ্গত কারণেই। এ যুগে ফেসবুকের জাদুকরী বলয়ে আটকা পড়াটা অতীব সাধারণ একটি ঘটনাই বটে। এটিই যেন হওয়ার ছিল। আমরা ক্ষতিকর জেনেও নির্দ্বিধায় এই অবস্থাকে মেনে নিচ্ছি অহরহ।
ফুকস বলছেন, ফেসবুক এর অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যবহারকারীর উপর নজরদারি চালানো। প্রশ্ন হতে পারে এতে তার লাভ কী?
জবাব হচ্ছে, ব্যবহারকারীর তথ্যাদি প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক মুনাফার প্রধান কাঁচামাল। ব্যবহারকারীর এসব তথ্যকে পুঁজি করে বিজ্ঞাপনদাতাসহ নানান ক্ষেত্র থেকে অর্থ উপার্জন করে ফেসবুক। অথচ ব্যবহারকারীরা বিনামূল্যে কিংবা নামমাত্র মূল্যে ফেসবুকের জন্য কনটেন্ট উৎপাদন করে চলে অবিরত। আলভিন টফলার এ কারণে ব্যবহারকারীকে একই সাথে প্রডিউসার ও কনজিউমার বলছেন৷ দুটো শব্দকে মিলিয়ে ব্যবহারকারীদের ‘প্রজিউমার’ নাম দিয়েছেন তিনি।
ফেসবুক ম্যাকানিজম এমনভাবে করা যে, এর প্রজিউমারগণ বারবার এটি ব্যবহার করতে চাইবেন৷ এতে করে তিনি যে প্লেজার বা স্বস্তি লাভ করেন এই বোধই তাকে ফেসবুকের উপর অতীব নির্ভরশীল করে তুলবে৷ এভাবে ফেসবুক দাসে পরিণত হোন এর ব্যবহারকারীরা, বলছেন ফুকস।
গবেষণায় দেখা যায়, তরুণদের মধ্যে ফেসবুক আসক্তি তুলনামূলকভাবে বেশি।
গবেষকরা বলেন, ফেসবুকের উপর অতি নির্ভরতা ব্যবহারকারীর মধ্যে বাস্তব আর ভার্চুয়াল জগতের ব্যবধান ঘুচিয়ে দিতে পারে। ফেসবুকের জগতকে তারা বাস্তব জগত বলে মনে করতে থাকেন। এভাবে সামাজিকভাবে একত্রিত থাকার নামে দিনদিন অসামাজিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে মানুষ। ফলে মানবিক সাহচর্যের পরিবর্তে এখন প্রয়োজন হচ্ছে ফেসবুকের। ফেসবুক ছাড়া জীবনকে ভাবা যাচ্ছে না! ভাবা যাবে কি?