ঢাকা, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

টাঙ্গাইলে শীত বস্ত্রের দোকানে উপচেপড়া ভিড়

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর, ২০২১ ২১:৪৬ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৯৩ বার


টাঙ্গাইলে শীত বস্ত্রের দোকানে উপচেপড়া ভিড়

কামরুল হাসান, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি                                            

শীত নিবারনে চাই গরম কাপড়। শীতের শুরুতেই সব বয়সী মানুষ ছোটে শীতবস্ত্রের পেছনে। শীতের তীব্রতা যতো বাড়তে থাকে শীতবস্ত্রের কদরও ততোটা বাড়তে থাকে। বর্তমানে তাপমাত্রা অনেকটা কমে যাওয়ায় সারাদেশে শীতবস্ত্রের কদর বেড়েছে। আর সেই শীতবস্ত্র বিক্রি করতে টাঙ্গাইল জেলা সদরের কোর্ট চত্ত্বর মাঠে একটি ও পাশের হেলিপ্যাড মাঠে দুটি পুরাতন কাপড়ের মার্কেট গড়ে উঠেছে। 

খোলা আকাশের নীচে প্রায় তিন শতাধিক শীতবস্ত্রের  দোকান রয়েছে। এসব দোকানের সাথে প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে। একটি সময় এসব খোলা বাজারে কেনাকাটা করতেন সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষেরা। 

বর্তমানে এসব দোকানগুলোতে সব শ্রেণির মানুষের উপচে পড়া ভীড় লক্ষ করা যায়। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও এসব দোকান থেকে নিয়মিত কেনাকাটা করে। এই তিনটি মার্কেটে স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার শীতবস্ত্র বিক্রি হয়। শীতের তীব্রতা বাড়লে অথবা শৈত প্রবাহ শুরু হলে শীতবস্ত্র বিক্রি দাঁড়ায় প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা সদরের কোর্ট এলাকায় তিনটি মাঠে তিন শতাধিক পুরাতন কাপড়ের দোকান বসেছে। অনেক আগে থেকে পুরান কাপড়ের মার্কেট (ডিসট্রিক মার্কেট) নামে পরিচিত। ব্যবসায়ীরা জানালেন চট্রগ্রাম থেকে এসব কাপড়ের বেল কিনে আনেন মহাজনরা। মহাজনদের কাছ থেকে এসব মার্কেটের পাইকাররা কাপড় কিনে নেন। 

এসব কাপড় থেকে বাছাই করে প্রথম শ্রেণির কাপড়গুলো আলাদা করা হয়। এগুলো ৪শ’ থেকে একহাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। দ্বিতীয় বাছাইকৃত কাপড়গুলো দ্বিতীয় সারির দোকানে তোলা হয়। এসব কাপড় সাধারণত ২ থেকে ৪শ টাকায় বিক্রি করা হয়। তৃতীয় বাছাইকৃত কাপড়গুলো ১০ বা ২০টাকা মূল্যে একদরে বিক্রি করা হয়। ১০টাকার দোকান বা বিশ টাকার দোকান আলাদা করা রয়েছে। এসব দোকানের কাপড় বিক্রেতারা ১০টাকা, ২০টাকা বলে ক্রেতাদের ডেকে ডেকে আকৃষ্ট করে। 

তৃতীয় বাছাইয়ের পরও যেসব কাপড় অবিক্রিত থেকে যায় সেগুলো ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। যা  দিয়ে গার্মেন্টস তুলা বানানো হয়। কেউ নিজেই দোকানে কাপড় বিক্রি করেন। 

আবার কেউ কর্মচারী দিয়ে একাধিক দোকান চালিয়ে থাকে মহাজনরা। ৩শ দোকান থাকলেও মহাজন থেকে শুরু করে কর্মচারী পর্যন্ত প্রায় প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার এর সাথে জড়িত। খোলা আকাশের নীচেই এদের কর্মসংস্থান। তবে লাভের বড় অংশ চলে যায় মহাজনদের হাতে। দুস্থ মানুষেরা কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন। 

এরা প্রতিদিন দেড়শ’ থেকে দুইশ’ টাকা উপার্জন করে থাকেন। সরকারি জায়গা হওয়াতে এসব দোকানের জন্য কোন ভাড়া গুনতে হয় না এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। এসব ব্যবসায় একদিকে পাঁচ শতাধিক পরিবারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষদের ক্রয় ক্ষমতার ভেতরে চলে এসেছে শীতবস্ত্র।

আব্দুল হাফিজ নামের শীতবস্ত্র বিক্রেতা জানান, প্রতিদিন তিন,চার হাজার টাকার কাপড় বিক্রি করা যায়। এতে যা লাভ হয় তাতে তার সংসার খরচ চলে যায়। তবে শীত বাড়ার সাথে সাথে বিক্রিও বেড়ে যায়।

আসর উদ্দিন অসুস্থ, রুবি বিধবা, সুলতানা দুস্থ। এদের মুলধন নেই। এজন্য এরা অন্যের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাপড় বিক্রি করেন। প্রতিদিন দেড়-দুইশ’ টাকা পানা তারা। তবে বিক্রি বাড়াতে পারলে আরেকটু বেশি টাকা দেওয়া হয় তাদেরকে।

কাপড় বিক্রেতা রমজান আলী জানান, এসব শীতবস্ত্র চট্রগ্রাম থেকে মহাজনরা আনেন। মহাজনদের কাছ থেকে তারা কিনে তাদের দোকানে এগুলো বিক্রি করে থাকেন। তার দোকানে তিন শ্রেণির শীতবস্ত্রই রয়েছে। হাজার টাকা থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত কাপড় বিক্রি হয়। শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবার কাপড়ই এসব দোকানে পাওয়া যায়। দোকানের ভাড়া দিতে হয় না। তবে এসব দোকানে রাতেও খোলা আকাশের নিচেই কাপড়গুলো রেখে যায় ব্যবসায়ীরা। দোকানের নিরাপত্তার জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত নৈশ্য প্রহরী। শুধু এদের বেতন দিতে হয়।

মিলন, আজগর, জাহাঙ্গীর,জুলহাস ও শমসেরের মতো তিন শতাধিক ব্যবসায়ী ও দুই শতাধিক সংপৃক্তদের জীবন চলছে খোলা আকাশের নীচে উপার্জন করে।

তবে এসব ব্যবসা বছরের তিনমাস চলে। শীত শেষ হলেই বন্ধ হয়ে যায় ব্যবসা। তখন বেকার হয়ে পড়েন সবাই। কেউ কেউ অন্য পেশায় চলে গেলেও অনেকেই বেকার হয়েই থাকেন। তখন তাদের জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে পড়ে।

শীতবস্ত্র কিনতে আসা সাধারণ ক্রেতারা বলেন, এখানকার পন্য ক্রয় ক্ষমতার ভেতরে থাকে। এজন্য তারা এসব দোকান থেকে নিয়মিত কেনাকাটা করেন। আবার কেউ কেউ বলেন, হাজারটা দেখে বাছাই করার সুযোগ আছে বলেই তারা এসব দোকানে কেনাকাটা করতে আসেন।

স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা জানান, এসব কাপড় অধিকাংশই বেদশী। ফ্যাশনও বটে। আধুনিক ও ব্যতিক্রমী কাপড় কিনতে শিক্ষার্থীরা এসব দোকানে চলে আসেন।

টাঙ্গাইল জেলা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. বাদশা মিয়া ও সাধারন সম্পাদক মো. হায়েত আলী আকন্দ জানান , এবার গুদামে মালের দাম বেশী। বিক্রি তো আগের মতই করতে হচ্ছে । বেশীর ভাগ ব্যবসীয় দারদেনা করে মুলধন নিয়ে ব্যবসা করছে।শীত বেশী পড়লে বেচাকিনি ভাল হবে এমনটা বিশ্বাস তাদের।


   আরও সংবাদ