ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ০৯:৫২ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৮৫ বার
কর্মসংস্থানের জন্য ‘উদ্যোক্তা অর্থনীতি’র ব্যাপক প্রচলন দরকার, যাতে করে ত্রিশের নিচে কমপ্রত্যাশী যুবক-যুবতীদের মধ্যে আত্মনির্ভরশীলতা গড়ে ওঠে। এখানে বলে রাখা দরকার যে, ‘উদ্যোক্তা অর্থনীতি’ আর ‘উদ্যোক্তা উন্নয়ন’ এক নয়।
উদ্যোক্তা উন্নয়ন একটি নির্দিষ্ট সীমায় আটকে যায়। পক্ষান্তরে ‘উদ্যোক্তা অর্থনীতি’র ভিত্তি আরো সুদৃঢ় এবং সত্যিকার কর্মক্ষম ও দক্ষতানির্ভর মানবসম্পদ তৈরিতে সহায়তা করে থাকে।
উদ্যোক্তা উন্নয়ন শব্দটি একটি নির্দিষ্ট বৃত্তে আবদ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু, উদ্যোক্তা অর্থনীতি শব্দটি আরো ব্যাপক অর্থে শিক্ষার্থীর প্রতিভা বিকাশ ও স্বাবলম্ব¼ী করে তুলতে সহায়তা করে থাকে। উদ্যোক্তা অর্থনীতির পাঠ্যক্রমে কেবল অর্থনীতি বিষয়ক প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হয় না। পাশাপাশি সামাজিক উদ্ভাবন ও প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে উদ্যোক্তার বিকাশ সাধন, উদ্যোক্তা কর্মকাণ্ডের সামষ্টিক সুবিধাসমূহ, বিহেভিয়ারিয়াল অর্থনীতির সঙ্গে পণ্য বিপণন এবং সরবরাহজনিত ব্যবস্থাপনার অর্থনীতি সামাজিক উদ্যোক্তা ও মাইক্রো ফিন্যান্স এবং মাইক্রো ইনসিওরেন্স উদ্যোক্তা অর্থনীতির ওপর উচ্চতর পাঠ্যক্রম, অ্যাকাউন্টিং, ব্যাংকিং, ইনসিওরেন্স এবং উদ্যোক্তার ফান্ড নিয়ন্ত্রণ, ভ্যালু চেইন, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে উদ্যোক্তা অর্থনীতির বিকাশ, প্রকৃতি, উন্নয়ন, আর্থিক খাতে অন্তর্ভুক্তি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে উদ্যোক্তার সুবিধা, প্রকল্প পরিকল্পনা এবং সে সম্পর্কে নিরীক্ষা ও উদ্যোক্তা সম্পর্কিত হাতে কলমে প্রশিক্ষণ ইত্যাদি। ফলে দেখা যায় যে, উদ্যোক্তা উন্নয়ন একটি সীমিত অর্থে তৈরি হলেও উদ্যোক্তা অর্থনীতি বেশ বড় পরিসরে তৈরি হয়েছে এবং ব্যাপক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে উদ্যোক্তা মনস্ক করে তুলছে। এ জন্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্সে উদ্যোক্তা অর্থনীতির ওপর প্রথমবারের মতো প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে।
আমরা যদি উন্নত দেশের শিক্ষা কার্যক্রম পর্যালোচনা করি তবে দেখব যে, তাদের অধিকাংশ পাঠ্যক্রমে উদ্যোক্তা তৈরির বিষয়টি ইনবিল্ট থাকে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে উদ্যোক্তা তৈরির জন্য ৩৬টির বেশি কোর্স রয়েছে। আমি যখন থাইল্যান্ডে নারিসিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্যোক্তা সম্পর্কিত পোস্ট ডক্টরেট করার জন্য দরখাস্ত জমা দিতে যাই, সে সময়ের ডিন আমাকে আমার সুপারভাইজার ড. বিচিওয়ানা রতনাবাসুমের সামনে প্রশ্ন করেছিলেন, তুমি কেন উদ্যোক্তা নিয়ে গবেষণা করবে? আমার উত্তরটি ছিল অতি সহজ, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের মঙ্গলের জন্য তরুণদের অধিক কর্মসংস্থানের জন্য উদ্যোক্তা তৈরি করতে চাচ্ছেন। এ বিষয়ে অধিকতর বাস্তবনির্ভর জ্ঞান অর্জন করে উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়তা করাই আমার রিসার্চ প্রপোজালের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য।’
উদ্যোক্তা কেবল ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা পণ্য উৎপাদনকারী নয়- তাকে সৃজনশীল হতে হবে-নবতর সংযোজন-বিয়োজন করতে হবে। জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক নবম-দশম শ্রেণির বইতে ‘উদ্যোক্তা অর্থনীতি’র তাৎপর্য, সুবিধা-অসুবিধা, কর্মসংস্থানের জন্য গুণাবলী, উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ এবং লাগসই প্রযুক্তির প্রায়োগিক কলা কৌশলের ওপর একটি প্রবন্ধ জরুরি ভিত্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। তাতে ছাত্রছাত্রীদের মেধা-মননে স্ফুরণ ঘটবে এবং তারা বিকশিত হবে নিজের পায়ে স্বাবলম্বী হওয়ার চিন্তা-চেতনায়।
সূত্র : ইত্তেফাক