ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015
বাংলাদেশে বিনিয়োগে

বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর নজর কেড়েছে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি  

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ০৮:০১ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৭৯ বার


বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর নজর কেড়েছে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি  

গাজীপুর জেলার উপকণ্ঠে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি (বিএইচটিসি) আইসিটি কোম্পানি গড়ে তোলার কাজ শুরু করায় নকিয়ার মতো বহুজাতিক কোম্পানিসহ বিভিন্ন ১২টি বড় প্রযুক্তি কোম্পানি বাংলাদেশে তাদের শিল্প-কারখানার কার্যক্রম শুরু করেছে এবং আরো অনেক প্রতিষ্ঠান শিগগিরই বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগ নিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

রাষ্ট্র পরিচালিত বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক অথোরিটি (বিএইচটিপিএ)’র কর্মকর্তারা জানান, ১২টি বড় আইসিটি কোম্পানি এ পার্কে বর্তমানে উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। গত ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত এখানে কোম্পানির সংখ্যা ছিল পাঁচটি।

বিএইচটিপিএ পরিচালক এএনএম শফিকুল ইসলাম জানান, দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো এ পর্যন্ত বিএইচটিসি’তে ১২ কোটি ৭ সাত লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে এবং সেখানে ৪৬০ জন কর্মী নিযুক্ত রয়েছেন।

সম্প্রতি এ শিল্প পার্ক পরিদর্শনে আসা সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘তারা (কোম্পানিগুলো) স্মার্ট ফোন, কিডনি ডায়ালাইসিস মেশিনের মতো বায়ো-মেডিকেল সরঞ্জামাদি ও জীবন রক্ষাকারী থেরাপিউটিক সামগ্রী তৈরি করছে। 

বিএইচটিপিএ কর্মকর্তারা জানান, ৭০টি দেশি ও বিদেশি প্রযুক্তি কোম্পানি রাজধানীর উপকণ্ঠে এ প্রযুক্তি পার্কে জমি বরাদ্দ পেয়েছে এবং এর মধ্যে ১২টি কোম্পানি এ পার্কে এখন উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছে। এটি হচ্ছে ৩৫৫ একর জমির উপর গড়ে উঠা একক কমপ্লেক্সে দেশের এ ধরনের প্রথম সুবিধা।

বাংলাদেশের ইউনিয়ন গ্রুপ এবং ইউকে ভিত্তিক ভাইব্রান্ট সফটওয়্যারের যৌথ উদ্যোগে গড়া ভাইব্রান্ট সফটওয়্যার (বিডি) লিমিটেডের আওতায় পাঁচ একর জমির একটি প্লটের ওপর ফিনল্যান্ড ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান নকিয়া তাদের শিল্প-কারখানা গড়ে তুলেছে।
ভাইব্র্যান্ট সফটওয়্যার (বিডি)’র কর্মকর্তারা জানান, তারা বর্তমানে প্রতি মাসে আড়াই লাখ স্মার্ট ফোন তৈরি করছে এবং এর পাশাপাশি তাদের আগামী মাস থেকে ফিচার ফোন তৈরি শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।

ভাইব্রান্ট সফটওয়্যার (বিডি)’র ম্যানুফ্যাকচারিং ও বিজনেস ডেভলোপমেন্ট প্রধান নউফ হাসান রিতুন জানান, ‘আমাদের তৈরি প্রতিটি ডিভাইসের গায়ে ব্র্যান্ডিং দেশ হিসেবে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখা রয়েছে। তিনি আরো জানান, তাদের কারখানায় ২০২২ সালের মার্চ থেকে প্রতি মাসে ৬ লাখ পর্যন্ত হ্যান্ডসেট উৎপাদন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সোনার বাংলা ফাউন্ডেশন (এসবিএফ) বিএইচটিসি’তে এসবিএফ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলোপমেন্ট সেন্টার হিসেবে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি সেখানে উন্নতমানের কিডনি ডায়ালাইসিস মেশিন সংযোজনের কাজ করছে।

এসবিএফ কর্মকর্তা প্রকৌশলী আল-ইমরান সরকার বলেন, ‘প্রতিটি মেশিনের দাম হচ্ছে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা। আমদানি করা যেকোন ডায়ালাইসিস মেশিনের চেয়ে এটির দাম অনেক কম।’ দেখা যাচ্ছে বাজার মূল্য অনুযায়ী, আমদানি করা জীবন রক্ষাকারী এ ধরনের প্রতিটি ডিভাইসের দাম ১২ থেকে ১৩ লাখ টাকা।

সরকার জানান, সংযোজনমুখী কোম্পানিটি বিদেশি বাজার লক্ষ্য করে ভেন্টিলেশন মেশিনের পাশাপাশি বিভিন্ন ডিভাইস উৎপাদনে কাজ করছে এবং ‘আমাদের শিল্প-কারখানাকে এশিয়া অঞ্চলের একটি সরবরাহ কেন্দ্রে পরিণত করতে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি কোম্পানি থেকে বিনিয়োগের প্রস্তাব পেয়েছি।’

প্লাজমা উৎপাদনকারী বাংলাদেশি কোম্পানি ওরিক্স বায়ো-টেক লিমিটেড প্রাথমিকভাবে প্লাজমার বাংলাদেশের মোট চাহিদার ২৫ শতাংশ পূরণের লক্ষ্য নিয়ে বিএইচটিসি’তে বরাদ্দ পাওয়া ২৫ একর জমির ওপর তাদের প্লান্ট গড়ে তুলেছে। প্লাজমা হচ্ছে মানব দেহে রক্তের বৃহত্তম অংশ। এক্ষেত্রে তারা ৩০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে বার্ষিক ২ হাজার কোটি টাকা মূল্যের প্লাজমা আমদানি করতে হয়।
 দেশের শীর্ষ টেলিকম অপারেটগুলোর অন্যতম রবি এ পার্কে তাদের প্লান্ট গড়ে তুলতে দেড় একর জমি বরাদ্দ পেয়েছে। বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া জয়েন্ট ভেঞ্চারর কোম্পানি তাদের সিম কার্ড ও সংশ্লিষ্ট হার্ডওয়্যার তৈরিতে ২৬ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
 ফেয়ার ইলেক্ট্রনিক্স ১ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং ডিভাইসের বাংলাদেশি প্রস্তুতকারক কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে।

আরো নয়টি কোম্পানি বিএইচটিসি’তে ২০.৫০ একর জমি বরাদ্দ পেয়েছে। বিএইচটিপিএ’র কর্মকর্তারা জানান, এসব কোম্পানি ১৪ কোটি ৮ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

সরকারি নথিপত্র অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ সরকার তাদের ১৯৯৬-২০০১ সালের মেয়াদকালে এ শিল্প পার্ক গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। ওই সময় তারা এর সম্ভাবতা যাচাই ও সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম শুরু করলেও পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে এ পরিকল্পনা বাতিল করে।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশনের পরিকল্পনা পুনরায় হাতে নেয়া হয় এবং প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে এ ভিশন দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয়।

বিএইচটিপিএ কর্মকর্তারা জানান, তারা আশা করেন যে এ শিল্প পার্ক ১,২৬৪.৮৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং ২০২৫ সাল নাগাদ ৪১ হাজার ২৬৯ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।

বিএইচটিপিএ’র আরেক পরিচালক সৈয়দ জহুরুল ইসলাম জানান, সরকার তাদের নিজস্ব অর্থায়নে বিএইচটিসি চত্ত্বরে গাছপালা লাগানোসহ অন্যান্য নাগরিক সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি বৈদ্যুতিক সরবরাহ ব্যবস্থার ও বিভিন্ন সংযোগ সড়কের উন্নয়ন করেছে।

তিনি জানান, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিনিয়োগ কোম্পানিগুলো ১০ বছরের জন্য কর রেয়াত পাবে এবং বিদেশি উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার অংশ হিসেবে রপ্তানি করা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ ইনসেনটিভ দেয়া হবে।

আইসিটি বিভাগ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ২০০৯ সালের আগে আইসিটি শিল্প থেকে রপ্তানি আয় ছিল ২ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার। বর্তমানে এ আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ‘২০২৫ সাল নাগাদ আমরা ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করতে চাই।’

পলক বলেন, ‘আমরা চাই হাই-টেক পার্কে বিশ্বের বিখ্যাত বিভিন্ন কোম্পানি তাদের কারখানা গড়ে তুলুক এবং একই সঙ্গে এখানে তৈরি পণ্য বিশ্ব বাজার দখল করুক।


   আরও সংবাদ