ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ০৯:৩৬ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৪৪ বার
নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ শনিবার ভোরে দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর-পূর্ব উপকূল থেকে রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। এটি এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় মহাকাশ বিষয়ক টেলিস্কোপ। এর মাধ্যমে জ্যোতির্বিজ্ঞানের একটি নতুন যুগের সূচনা হয়েছে।
শনিবার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইনফ্রারেড টেলিস্কোপটি কার্গোতে করে আরিয়ন-৫ রকেটের ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়। এটি সকাল ৭টা ২০ মিনিটের দিকে উৎক্ষেপণ করা হয়। ফ্রেঞ্চ গায়ানার ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ইএসএ) উৎক্ষেপণ ঘাঁটি থেকে টেলস্কোপটি উৎক্ষেপণ করা হয়।
মহাকাশে ২৭ মিনিট হাইপারসনিক যাত্রার পর ১৪ হাজার পাউন্ডের যন্ত্রটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৮৬৫ মাইল ওপরে ফ্রান্সের নির্মিত রকেটের উপরিভাগ থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়।
রকেটের ওপরে লাগানো একটি ক্যামেরার তোলা লাইভ ভিডিওতে দেখা গেছে, টেলিস্কোপটি উৎক্ষেপণের সময় ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে। এসময় মিশন নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে উল্লাসিত ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়াররা করতালি দিচ্ছিলেন।
আরও ২ সপ্তাহ এটি মহাকাশের সীমান্ত দিয়ে যাবে এবং পৃথিবী থেকে ১ মিলিয়ন মাইল দূরে সৌর কক্ষপথে তার গন্তব্যে পৌঁছাবে। যা চাঁদের চেয়ে প্রায় ৪ গুণ দূরে।
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপটি কাজ করবে ইনফ্রারেড বা অবলোহিত আলোতে। এই আলো অবশ্য আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না। মহাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা ধুলোবালির কারণে দৃশ্যমান আলোতে মহাবিশ্বের দূরতম নক্ষত্রদের তত সহজে দেখা যায় না। তবে অবলোহিত আলোর কাছে এটা কোনো বাধা নয়। আর পরমশূন্য তাপমাত্রার ওপরে থাকা সব বস্তুই ইনফ্রারেড বিকিরণ করে থাকে। সোজা কথায়, তাপও তো একটা বিকিরণ শক্তি, কিন্তু আমরা তো আর তাপ দেখতে পাই না। কিন্তু এই টেলিস্কোপ সেই তাপও দেখতে পাবে।
এর বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ইনফ্রারেড শনাক্ত করার ক্ষমতা খুবই সংবেদনশীল। পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্বে থাকা একটা মৌমাছিও দেখে ফেলবে মৌমাছির দেহের তাপ বা ইনফ্রারেডের কারণে। তবে চ্যালেঞ্জও রয়েছে এই টেলিস্কোপের। এই মাত্রার সূক্ষ্ম সিগনাল শনাক্ত করতে টেলিস্কোপটির আশেপাশে এমন কোনো বড় তাপীয় বস্তু থাকা যাবে না। পৃথিবীও যেহেতু তাপ বিকিরণ করে তাই, টেলিস্কোপটি পৃথিবী থেকেও যথেষ্ট দূরে থাকতে হবে। বিজ্ঞানীরা এটিকে পাঠাচ্ছেন পৃথিবী থেকে ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরে। আর বাকি থাকে সূর্য, সূর্য থেকে রেহাই পেতে ব্যবহার করা হবে এক ধরনের পলিমার যৌগ ক্যাপটন দিয়ে নির্মিত ছাতা। ক্যাপটন এমন এক পদার্থ যা তাপ রোধ করে আবার অনেক নিম্ন তাপমাত্রায়ও প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারে।
টেলিস্কোপটির প্রধান দর্পণটিতে ব্যবহার করা হয়েছে সোনার পাত। কারণ, সোনা সহজে বিক্রিয়া করে না এবং ইনফ্রারেড প্রতিফলনের জন্য দারুণ। যেহেতু, যত বড় দর্পণ তত স্পষ্ট ছবি তাই হাবলের প্রধান দর্পণের সঙ্গে তুলনায় এটি বেশ বড়— ৬ দশমিক ৫ মিটার ব্যাস। মিশনের লক্ষ্য যদিও ৫ বছরের মিশন, প্রকৌশলীরা আশা করছেন এটি ১০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকবে।
হাবল টেলিস্কোপ পৃথিবীর কাছাকাছি থাকায়, হাবলের কাছে পৌঁছে একে মেরামত করা গিয়েছে। কিন্তু এই জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ দূরে থাকবে বলে এর কোনো সমস্যা হলে সারানোর উপায় নেই। তাই প্রযুক্তির চূড়ান্ত যাচাই ও সাবধানতা নিশ্চিত করার দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পরই একে পাঠানো হচ্ছে।
আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ এই টেলিস্কোপটির আকারের উপযোগী কোনো রকেট নেই। তাই এর ডিজাইন করা হয়েছে এমনভাবে যেন, ভাঁজ করে পাঠানো যায়, আবার নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে ভাঁজ খুলে কাঠামোটি পর্যবেক্ষণের জন্য ঠিকঠাক প্রস্তুত হতে পারে।
এটিকে নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে পৌঁছতে রকেটের লাগবে ২৯ দিন। আর তারপর আরও ৬ মাসের মধ্যে টেলিস্কোপটির যন্ত্রপাতি যথেষ্ট শীতল ও যাচাই করার পর শুরু হবে এর মূল কাজ— মহাবিশ্বের প্রাথমিক সময়ের নক্ষত্র, ও গ্যালাক্সিগুলোর ছবি তোলা! পাশাপাশি, মহাবিশ্বের নক্ষত্রসীমায় গ্রহগুলোর আবহাওয়া এবং জীবন সৃষ্টির সম্ভাবনাও আঁচ করা যাবে।
বলা হয়, গড়ে মহাবিশ্বের নক্ষত্রপ্রতি একটি গ্রহ আছে। তাই, টেলিস্কোপটি হয়তো আমাদের ভবিষ্যত পৃথিবী খুঁজতেও সাহায্য করবে। হয়তো জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ ভবিষ্যতের জ্যোতিপদার্থবিজ্ঞানীদের বাতলে দেবে নতুন রহস্যের চাবি।