ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

গ্রাম থেকে টাকা তুলে শহরে বিনিয়োগ

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আমানতের মাত্র ১.৬৫ শতাংশ বিনিয়োগ

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫১৯ বার


গ্রাম থেকে টাকা তুলে শহরে বিনিয়োগ

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমানত এসেছে ২২ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা; কিন্তু বিনিয়োগ হয়েছে মাত্র ৩৭৭ কোটি টাকা। মোট আমানতের মধ্যে বিনিয়োগ হয়েছে ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এর মধ্যে গ্রাম থেকে আমানত আনা হয়েছে ১৭ হাজার ৮০২ কোটি টাকা, যেখানে গ্রামে বিনিয়োগ হয়েছে মাত্র ২৪৮ কোটি টাকা, যা মোট গ্রামীণ আমানতের ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। 

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আহরিত আমানতের ৭৮ শতাংশই গ্রামীণ, আর এজেন্টের প্রায় ৮৬ শতাংশই গ্রামের। গ্রাম থেকে আমানত ও বিনিয়োগের এমন চিত্র উঠে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে। আর এ পরিসংখ্যান হালনাগদ করা হয়েছে গত অক্টোবর মাসের পরিসংখ্যান দিয়ে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমানত তুলে আনা হচ্ছে; কিন্তু কাক্সিক্ষত হারে বিনিয়োগ হচ্ছে না। এতে পিছিয়ে পড়ছে গ্রামীণ শিল্পায়ন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো: সিরাজুল ইসলাম এ বিষয়ে গতকাল শনিবার জানিয়েছেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমানত নেয়া যতটা সহজ, ঋণ দেয়া ততটা সহজ নয়। কারণ এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে এখনো অভিজ্ঞ জনবলের অভাব রয়েছে। একজন গ্রাহকের ঋণ ফেরতের সক্ষমতা যাচাই-বাছাই করার অভিজ্ঞতা তাদের হয়নি। হয়তো ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতা বাড়বে। এ ছাড়া একজন গ্রাহক সহজেই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে বা তাদের আউটলেটে এসে অ্যাকাউন্ট খুলে আমানত রাখতে পারেন; কিন্তু ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে এজেন্টদের নিকটস্থ ব্যাংকের মূল শাখা হতে অনুমোদন নিতে হয়। গ্রাহকের ঋণতথ্য যাচাই-বাছাই করে ঋণ বিতরণ করতে অনেক ক্ষেত্রে সময় ক্ষেপণ হয়। আবার অনেকসময় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী গ্রাহকের ঋণ দেয়ার শর্ত পরিপালন হয় না। এ কারণেই হয়তো এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমানতের চেয়ে ঋণ বিতরণ কম বলে তিনি মনে করেন।

তবে ব্যাংকাররা জানান, গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হলে সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। একজন গ্রাহক স্বাবলম্বী হলে তার অর্থনৈতিক লেনদেনও বাড়ে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে ব্যাংকিং খাতে। কারণ ওই গ্রাহক ব্যাংকের মাধ্যমেই লেনদেন করে থাকেন। ফলে ব্যাংকের লেনদেন বেড়ে যাবে। এ কারণেই গ্রামীণ অর্থনীতির কাঠামো শক্তিশালী করা এবং সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যে পরিমাণ আমানত নেয়া হয় তার বেশির ভাগই তাদের মাঝে বিতরণ করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এখন নতুন নতুন এজেন্ট ব্যাংকিং ও আউটলেট অর্থাৎ উপশাখার লাইসেন্স দেয়ার সময় অন্যতম শর্তই দেয়া হচ্ছে, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করতে হবে।

এর প্রধান কারণ হলো, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যে পরিমাণ আমানত নেয়া হচ্ছে তা থেকে কোনো কোনো ব্যাংক নামমাত্রও ঋণ বিতরণ করছে না। তবে ওই সূত্র জানিয়েছে, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের প্রধান অন্তরায় হলো ঋণের সুদ। কারণ প্রত্যন্ত অঞ্চলে এনজিওরা ২০ শতাংশের বেশি সুদে তাদের গ্রাহকের মাঝে ঋণ বিতরণ করছে; কিন্তু একটি এজেন্ট ঋণ বিতরণ করছে ব্যাংকের মূল শাখার মাধ্যমে। আর ব্যাংকের মূল শাখার মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ৯ শতাংশের বেশি সুদ আরোপ করতে পারে না। এজেন্টদের নিট মুনাফা কমে যৎসামান্য থাকে। ফলে এজেন্টরাও অনেকসময় ঋণ বিতরণে আগ্রহী হন না। তাই গ্রামীণ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিনিয়োগ ব্যাংকমুখী হচ্ছে না। অর্থাৎ এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স দেয়ার অন্যতম উদ্দেশ্যই ছিল গ্রামের প্রান্তিক পর্যায়ের লোকজনের দোরগোড়ায় ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেয়া। তাদেরকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভেতরে নিয়ে আসা। এর অর্থ শুধু গ্রামীণ জনগণের কাছ থেকে আমানতই সংগ্রহ করা হবে না, পাশাপাশি গ্রামের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মাঝে ঋণ দিয়ে তাদেরকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে হবে; কিন্তু এ উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সরকারি-বেসরকারি মিলে ২৮টি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স দিচ্ছে। অক্টোবর শেষে মোট এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে ১৩ হাজার ৫৯১টি। গত বছরের অক্টোবরে যা ছিল ১০ হাজার ৪৭১টি। এক বছরে এজেন্ট সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। এর মধ্যে গ্রামেই রয়েছে ১১ হাজার ৬৭০টি, যা মোট এজেন্টের প্রায় ৮৬ শতাংশ।

আবার আমানতেরও বেশির ভাগ এসেছে গ্রাম থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত অক্টোবর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমানতের স্থিতি রয়েছে ২২ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৩ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা। এক বছরে এজেন্টি ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমানত বেড়েছে প্রায় ৬৬ শতাংশ। এর মধ্যে আলোচ্য সময়ে গ্রামীণ আমানতের স্থিতি হয়েছে ১৭ হাজার ৮০২ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১০ হাজার ২০৩ কোটি টাকা। গ্রামীণ আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৭৫ শতাংশ।


   আরও সংবাদ