ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

চার ধাপের ফল : আ.লীগ-স্বতন্ত্র হাড্ডাহাড্ডি

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১ ০৯:৩২ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫২৪ বার


চার ধাপের ফল : আ.লীগ-স্বতন্ত্র হাড্ডাহাড্ডি

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে ভোটের ফলাফলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের কাছাকাছি অবস্থানে চলে এসেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। চতুর্থ ধাপের প্রাপ্ত ৭৯৭টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেছে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন ৩৫০টিতে।

আর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেছেন ৩৮৯টিতে। এর আগে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের চেয়ে স্বতন্ত্ররা বেশি ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে আওয়ামী লীগের সঙ্গে স্বতন্ত্রদের জয়ের ব্যবধান কমিয়ে এনেছে।

চার ধাপের ইউপি নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেছে, ভোট হওয়া ইউনিয়ন পরিষদগুলোর এক হাজার ৩৭৭টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। অপরদিকে স্বতন্ত্ররা জিতেছেন এক হাজার ২৪৯টিতে।

স্বতন্ত্রভাবে জয়ী হওয়া প্রার্থীদের বেশিরভাগই সরকারি দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। জানুয়ারি মাসে আরও দুই ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

তবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ীদের যুক্ত করলে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চেয়ে এখনো অনেক এগিয়ে ক্ষমতাসীন দল। চার ধাপে মোট ৩০০টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৯৭ জনই আওয়ামী লীগের ও তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী।

সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগ জিতেছে এক হাজার ৬৭৪ ইউনিয়ন পরিষদে। অপরদিকে স্বতন্ত্ররা জয়ী হয়েছেন এক হাজার ২৫২টিতে। এবারের নির্বাচনে বিএনপিসহ সমমনা অনেক দল প্রতীকে অংশ না নেওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জয়ের হার বাড়ছে বলে মনে করছেন সরকারি দলের নীতিনির্ধারকেরা। 

সর্বশেষ রোববার চতুর্থ ধাপে ৮৩৬টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে ৭৯৭টির ফলাফল পাওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ৪৬ জনসহ ৩৯৬টিতে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।

আর ২ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ীসহ ৩৯১টিতে জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। অন্যান্য দলের মধ্যে জাতীয় পার্টি ৬টিতে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দুটিতে, জাকের পার্টি একটিতে ও জাতীয় পার্টি-জেপি একটিতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। 

এ বিষয়ে দলীয় মূল্যায়ন জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম   বলেন, যারা নৌকা প্রতীকে ও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করেছেন তাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের লোক।

সেই হিসাবে দিনশেষে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমাদেরই জয় হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে এখনই মূল্যায়ন করছি না। সব ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শেষ হওয়ার পর সব তথ্য-উপাত্ত নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হবে।

সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, এ নির্বাচনে বিরোধী দল অংশ নেয়নি। এ কারণে আমাদের দলের অনেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। বিএনপি অংশ নিলে তারা প্রার্থী হতেন না।

তিনি আরও বলেন, যারা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে শোকজ, সাসপেন্ড করা হচ্ছে। শেষ ধাপের নির্বাচন পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

জানা গেছে, চার ধাপে এ পর্যন্ত দুই হাজার ৯৮৭টি ইউনিয়ন পরিষদের ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তৃতীয় ধাপের ৯৯২টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেছে, ওই ধাপে ভোটের মাঠে লড়াই করে আওয়ামী লীগের ৪২৬ জন প্রার্থী জয়ী হন।

আর স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হন ৪৪৫টিতে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হন আরও ৯৯ জন। সব মিলিয়ে দলটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ৫২৫ জন। আর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী একজনসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জেতেন ৪৪৫টিতে।  

প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে সরকারি দলের প্রার্থীদের জয়ের হার বেশি ছিল। দ্বিতীয় ধাপের ৮৩৪টি ইউনিয়ন পরিষদের ফলাফলে দেখা গেছে, ভোটের লড়াইয়ে সরকারি দলের প্রার্থী জিতেছেন ৪০৫টি ইউনিয়ন পরিষদে। অপরদিকে স্বতন্ত্ররা জিতেন ৩৩০টিতে।

এ ধাপে ৮১জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ীসহ আওয়ামী লীগের ৪৮৬জন জয় পান। দুই বারে অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটে সরকারি দলের ১৯৬ জন জয় পান। আর স্বতন্ত্র জেতেন ৮৫ জন। এ ধাপেও ৭১ জন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিনাভোটে নির্বাচিত হন।

তাদেরসহ সরকারির দলে ২৬৭ জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে বিনা ভোটে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় পাননি। তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে স্বতন্ত্রদের জয় বেশি হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অনেক কারণ আছে।

এর একটি হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দল থেকে সঠিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন না দেওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বিতায় স্বতন্ত্ররা বেশি জিতছেন। অতীতে আমরা দেখেছি, দলীয় প্রতীকে ভোট হলে নানা কারণে বিভিন্ন প্রভাবের কারণে প্রার্থীর মানের অবনতি হয়।

তিনি বলেন, এটা সত্য যে যেসব ইউনিয়ন পরিষদে বিএনপির প্রার্থী নেই, সেখানে তারা সরকারি দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ভোট দিয়ে নৌকার পরাজয় ঘটাচ্ছেন। আরেকটি কারণ হচ্ছে, তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের ভোটের পরিস্থিতি কিছুটা ভালো ছিল, ভোটার উপস্থিতি বেড়েছে। এতেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জয়ের হার বেড়েছে।

সূত্র : যুগান্তর


   আরও সংবাদ