ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১ ১০:১৭ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫১৮ বার
বকেয়া ঋণ পরিশোধে বিশেষ ছাড় পেলেন ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারা। গত এক বছরের বকেয়া কিস্তির ৮৫ শতাংশ পরিশোধ না করেও খেলাপি থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। অর্থাৎ বকেয়া কিস্তির মাত্র ১৫ শতাংশ পরিশোধ করলেই সারা বছরের ঋণ নিয়মিত হয়ে যাবে। এমনকি এ জন্য ব্যাংকগুলোর প্রভিশন সংরক্ষণেও ছাড় দেয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনা পরিপালনে উৎসাহিত করতে প্রভিশন সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও ছাড় দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে ঋণ নবায়ন করলে সাধারণ প্রভিশন দেড় শতাংশ হারে সংরক্ষণ করতে হবে, যা আগে ছিল ২ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গতকাল এমনই নির্দেশনা দিয়ে ব্যাংকের শীর্ষনির্বাহীদেরকে অবহিত করা হয়েছে।
জানা গেছে, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তহবিল জোগান দিতে প্রণোদনা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। ব্যাংকের মাধ্যমে এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকার সুদহারের ওপর ভর্তুকি দেয়। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণের সুদে ৫ শতাংশ এবং বড় উদ্যোক্তাদের সাড়ে চার শতাংশ সুদহারের ওপর ভর্তুকি দেয়।
এ কর্মসূচির আওতায় গত বছর ১৫ হাজার কোটি টাকা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের এবং ৪০ হাজার কোটি টাকা বড় উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়া হয়। একই সাথে কোনো প্রকার কিস্তি পরিশোধ ছাড়াই ঋণ নবায়নের সুযোগ দেয়া হয়। বলা হয়, বকেয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলেও তাকে খেলাপি করা যাবে না।
প্রথমে গত বছরের জন্য দেয়া হয়। চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ শিথিলতা কমিয়ে দেয়া হয়। বলা হয়, বকেয়া কিস্তির ৭৫ শতাংশ পরিশোধ না করলেও চলতি বছরের জন্য ঋণখেলাপির দুর্নাম থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এ সুযোগ ৯০ ভাগ বড় ব্যবসায়ী নিলেও ছোট উদ্যোক্তারা অর্থ সঙ্কটে এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। ছোট উদ্যোক্তাদের এ অপরাগতটার বিষয়টি গভর্নরের কাছে তুলে ধরেন ব্যাংকাররা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিষয়টি আমলে নিয়ে গতকাল ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ ছাড় দেয়ার ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে।
গতকাল ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো এক নির্দেশনায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হয়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে আগামীকাল ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বকেয়া কিস্তির ৮৫ শতাংশ পরিশোধ না করলেও ছোট উদ্যোক্তাদের ঋণখেলাপি করা যাবে না। অর্থাৎ বকেয়া কিস্তির মাত্র ১৫ শতাংশ পরিশোধ করলেই তাদের ঋণ খেলাপি মুক্ত থাকবে। শুধু ঋণ পরিশোধেই ছাড় দেয়া হয়নি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনা পরিপালনে ব্যাংকগুলোকে উৎসাহিত করতে প্রভিশন সংরক্ষণের ওপরও ছাড় দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এ নির্দেশনা মেনে ঋণ নবায়ন করলে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে দুই শতাংশের পরিবর্তে দেড় শতাংশ। আর এর বিপরীতে অর্জিত সুদও ব্যাংকগুলোর আয় খাতে নিতে বাধা থাকবে না।
প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয় ব্যাংকগুলোর আয় খাত থেকে অর্থ এনে। যত বেশি প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে, ব্যাংকগুলোর মুনাফা তত কমে যায়। অর্থাৎ বাড়তি প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হলে ব্যাংকগুলোর আয় কমে যায়। যেমন- ১০০ কোটি টাকার মন্দ ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। এতে ব্যাংকের আয় কমে যায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে ১০০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নবায়ন করলে দেড় কোটি টাকা প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে। এতে আপনা আপনিই ব্যাংকগুলোর আয় বেড়ে যাবে। আয় বাড়াতেই ব্যাংকগুলো এখন বেশি হারে ছোট উদ্যোক্তাদের বকেয়া ঋণ নবায়ন করবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে।