ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

ঋণ আদায়ে শিথিলতায় ব্যাংকের মুনাফা বৃদ্ধি

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ২ জানুয়ারী, ২০২২ ১০:১৮ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৭৩ বার


ঋণ আদায়ে শিথিলতায় ব্যাংকের মুনাফা বৃদ্ধি

করোনায় বিদায়ী বছরেও ব্যবসাবাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বেশির ভাগ শিল্পোদ্যোক্তা আগের বছরের ক্ষত কাটিয়ে ওঠার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। ব্যবসাবাণিজ্য সচল হচ্ছে। আগের বছরের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির ওপর ভর করে গেল বছর কিছু কিছু সূচকে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। এমনি পরিস্থিতিতেও বিদায়ী বছর শেষে বেশির ভাগ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। তবে, সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই মুনাফা যতটা-না ব্যবসার; এর চেয়ে বেশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা শিথিলের কারণে। বছরের শেষ সময়ে এসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন এক নির্দেশনায় বলা হয়, ছোট-বড় সবধরনের ব্যবসায়ীই গত বছরের বকেয়া ঋণের ৮৫ শতাংশ পরিশোধ না করলেও ওই ঋণ খেলাপি করা যাবে না। অর্থাৎ নিয়মিত দেখাতে হবে। আর এ সুযোগটিই কাজে লাগিয়েছে বেশির ভাগ ব্যাংক। এতে রাতারাতি খেলাপি ঋণ কমে গেছে। আর খেলাপি ঋণ কমে যাওয়ায় কম প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়েছে। এটা ব্যাংকের আয় বাড়াতে সহায়ক হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর এ বিষয়ে গতকাল শনিবার জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার কারণে ব্যাংকগুলো ঋণ আদায় না করেই আদায় দেখাতে পারছে। বিপরীতে সুদ সরাসরি আয় খাতে নিয়ে যাচ্ছে। বলা চলে আয় না করেও ব্যাংকের কৃত্রিম আয় বেড়ে গেছে। আর এর কৃত্রিম আয় থেকেই ব্যাংকগুলো সরকারকে সাড়ে ৩৭ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ করপোরেট ট্যাক্স দিচ্ছে। অবশিষ্টের বড় একটি অংশ ডিভিডেন্ড দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এতে ব্যাংকগুলোর মূলধন কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ছে। তিনি জানান, ব্যাংকগুলো কৃত্রিম আয় না বাড়িয়ে মূলধন কাঠামো ঠিক রাখতে বেশি হারে প্রভিশন করলে ভালো হতো; কিন্তু এখানে কেউ কেউ পাল্লা দিয়ে মুনাফা বাড়িয়ে বাহবা নেয়ার বৃথা চেষ্টা করছে। তিনি মনে করেন, সামনে যে ব্যাংকের অনাদায়ী ঋণ যত বেশি থাকবে ওই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ তত বেড়ে যাবে। এতে বেকায়দায় পড়ে যাবে ওই ব্যাংক। তিনি মনে করেন, ব্যাংকগুলো সঠিক হারে প্রভিশন করলে প্রকৃত মুনাফা না বেড়ে বরং কমে যেত।
 
ব্যাংকগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, বরাবরের মতো এবারো সবচেয়ে বেশি পরিচালন মুনাফা করেছে ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটি বিদায়ী বছরে পরিচালন মুনাফা করেছে দুই হাজার ৪৩০ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল দুই হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মুনাফা করেছে পূবালী ব্যাংক এক হাজার ১৪০ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ৯৩৫ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ মুনাফা করেছে ইস্টার্ন ব্যাংক এক হাজার ৫০ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ৮৭০ কোটি টাকা। চতুর্থ সর্বোচ্চ মুনাফা করেছে সাউথইস্ট ব্যাংক। মুনাফা করেছে এক হাজার ১৬ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ৮১৬ কোটি টাকা। প্রাপ্ত তথ্যমতে, মুনাফার দিক থেকে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে প্রিমিয়ার ব্যাংক। মুনাফা করেছে ৮৮১ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ৬৮০ কোটি টাকা।

ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফার এ উলম্ফনের বিষয়ে সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডি এম কামাল হোসেন জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা শিথিল আয় বাড়াতে সহায়ক হয়েছে। কারণ শিথিলতা না থাকলে বাড়তি প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হতো। এতে হয়তো উল্লেখিত হারে আয় দেখানো যেত না। তবে, তিনি মনে করেন, ২০২০ সালের চেয়ে বিদায়ী বছরে ব্যবসাবাণিজ্য ভালো ছিল। আগের বছরের মতো বিদায়ী বছরে করোনা প্রাদুর্ভাব ছিল না। এতে রফতানি আয় বেড়ে গেছে। বেড়ে গেছে পণ্য আমদানি। গত অক্টোবরে পণ্য আমদানি বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৬২ শতাংশ। ব্যাংকের আয়ের বড় একটি অংশ আসে এলসি কমিশন থেকে। শিল্পের কাঁচামালসহ সামগ্রিক পণ্য আমদানি বেড়ে যাওয়ায় গেল বছরের চেয়ে বিদায়ী বছরে গুণগত আয় বেড়েছে বলে তিনি মনে করেন।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, বিদায়ী বছরে আল-আরাফা ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে ৭৫০ কোটি টাকা, আগের বছরে ছিল ৬৮০ কোটি টাকা, এক্সিম ব্যাংক মুনাফা করেছে ৭৮০ কোটি টাকা, আগের বছরে ছিল ৭৪১ কোটি টাকা, যমুনা ব্যাংক ৭৫০ কোটি টাকা, আগের বছরে ছিল ৬৩৭ কোটি টাকা, শাহাজালাল ইসলামী ব্যাংক ৭১৭ কোটি টাকা, আগের বছরে ছিল ৪৮১ কোটি টাকা, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ৭২২ কোটি টাকা, আগের বছরে ছিল ৪১১ কোটি টাকা, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ৫০২ কোটি টাকা, আগের বছরে ছিল ৪৬০ কোটি টাকা। নতুন প্রজন্মের ব্যাংকের মধ্যে এনআরবিসি ব্যাংক মুনাফা করেছে ৪৫০ কোটি টাকা, আগের বছরে ছিল ৩২৩ কোটি টাকা, ইউনিয়ন ব্যাংক ৩৭৫ কোটি টাকা, আগের বছরে ছিল ৩১৭ কোটি টাকা, সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক করেছে ২১০ কোটি টাকা, আগের বছরে ছিল ১৫২ কোটি টাকা, মিডল্যান্ড ব্যাংক ১৬২ কোটি টাকা, আগের বছরে ছিল ১২৫ কোটি টাকা, মেঘনা ব্যাংক ১০৫ কোটি টাকা, আগের বছরে ছিল ৭৩ কোটি টাকা।

প্রসঙ্গত, পরিচালন মুনাফাই প্রকৃত মুনাফা নয়। বছরের শেষ দিনে ব্যাংকগুলো তাদের সারা বছরের আয় ব্যয়ের হিসাব করে থাকে। বের করে তাদের পরিচালন মুনাফা। তবে এ মুনাফা একেবারেই প্রাথমিক হিসেবে। পরিচালন মুনাফা থেকে প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়। সরকারের সাড়ে ৩৭ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত করপোরেট ট্যাক্স দিতে হয়। এরপর যে অংশটুকু থাকে সেটিই প্রকৃত মুনাফা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আর প্রকৃত মুনাফার ওপর ভিত্তি করেই শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয়া হয়।


   আরও সংবাদ