ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২ জানুয়ারী, ২০২২ ১৫:০৫ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৭৪ বার
কামরুল হাসান, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
মাঠে মাঠে এখন সরিষার হলুদ ফুলের অপরূপ দৃশ্য। পুরো মাঠ যেন ঢেকে আছে সুন্দর এক হলুদের চাদরে। তাই এই সুযোগে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মৌ চাষিরাও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহে।
উপজেলার বাংড়া ইউনিয়নের বর্তা গ্রামে সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে আসা খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার হরিনগর গ্রামের বাসিন্দা মৌচাষি নুর আলম জানান, তারা কয়েকজন মিলে কালিহাতী উপজেলায় মধু সংগ্রহ করতে এসেছেন। উপজেলার বাংড়া ইউনিয়নের বর্তা গ্রামের বিস্তীর্ণ সরিষা ক্ষেতে ১৭০টি মৌ বক্স বসিয়েছেন তারা। এসব বক্স থেকে প্রতি সপ্তাহে গড়ে প্রায় সাড়ে ৪০০ কেজির মতো মধু পাওয়া যাচ্ছে। ওইসব বক্স থেকে হাজার হাজার মৌমাছি উড়ে গিয়ে মধু সংগ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে সরিষা ফুলের মাঠে। মধু সংগ্রহের জন্য স্টিল ও কাঠ দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি করা হয় বক্স। যার ওপরের অংশটা মোড়ানো কালো রঙের পলিথিন ও চট দিয়ে। বক্সের ভেতরে কাঠের তৈরি আটটি ফ্রেমের সঙ্গে মোম দিয়ে বানানো এক ধরনের সিট বিশেষ কায়দায় লাগানো থাকে। পরে বক্সগুলো সরিষা ক্ষেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়। পাশাপাশি বক্সগুলোর ভেতরে দেওয়া হয় রানি মৌমাছি। যাকে ঘিরে আনাগোনা করে হাজারো পুরুষ মৌমাছি। রানির আকর্ষণে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌমাছিরা। একটি রানি মৌমাছির বিপরীতে প্রায় তিন হাজারের মতো পুরুষ মৌমাছি থাকে একেকটি বক্সে।
তিনি আরও জানান মৌমাছিতে টুইটম্বর বক্সগুলো সরিষা ক্ষেতের লাগোয়া স্থানে সারিবদ্ধভাবে রেখে দেওয়া হয়। এরপর সেই সব বক্স থেকে সরিষা ক্ষেতের ফুলে ফুলে ভো ভো শব্দ তুলে ঢু মারতে থাকে প্রশিক্ষিত মৌমাছিরা। এভাবে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে চলে আসে বক্সে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন তালুকদার জানান, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় সরিষা আবাদের লক্ষ মাত্রা ছিল ২ হাজার ৯০০ হেক্টর। কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বিনামূল্যে প্রায় ২০০০ কৃষকে বীজ ও রাসায়নিক সার বিতরণ, রাজস্ব প্রদর্শনী ও ফলোআপ কার্যক্রমসহ অন্যান্য প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের সহায়তা ও উদ্বুদ্ধকরণের ফলে লক্ষ মাত্রা ছাড়িয়ে ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে বারি-১৪, বারি-১৫, বারি-১৭, বিনা-৪ ও বিনা-৯ সহ অন্যান্য স্থানীয় জাতের সরিষা আবাদ হয়েছে। এছাড়া বক্স পদ্ধতি ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে এসব সরিষা ফুল থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৩১০টি মৌ বক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব মৌ বক্স থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার কেজি মধু আহরিত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, সরিষা ফুল থেকে সংগ্রহ করা মধু গুণে মানে অত্যন্ত ভালো। সরিষা ফুলের মধুতে কোনো প্রকার ভেজাল থাকে না। একেবারে খাঁটি। আর এভাবে অনেকটা সহজ প্রক্রিয়ায় মধু আহরণের মাধ্যমে বাড়তি আয় করতে পারেন সংশ্লিষ্টরা। সরিষা ক্ষেতে মৌমাছির বিচরণ থাকায় ফুলের পরাগায়নে সহায়তা হয়, ফলে সরিষার ফলনও হয় বেশি। আমরা নানাভাবে কৃষকদের পরামর্শ ও উদ্বুদ্ধ করছি যাতে সরিষা ক্ষেতে মৌবক্স স্থাপনের মাধ্যমে মৌচাষ করে তারা আর্থিক ভাবে লাভবান হতে পারে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। কৃষকরা আগ্রহ প্রকাশ করলে তাদের জন্য প্রয়োজনে আবারও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।