ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২ জানুয়ারী, ২০২২ ২১:৫৫ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫১৮ বার
পোশাক খাতের রপ্তানি ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এসে এই রপ্তানি ৪৮ দশমিক ২৭ শতাংশের রেকর্ড মাত্রায় বেড়েছে। অন্য কথায়, একক মাস হিসেবে সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে রপ্তানি আয় আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ৪৮ দশমিক ২৭ শতাংশ বেড়েছে।
পোশাক রপ্তানির উচ্চ প্রবৃদ্ধির উপর ভর করে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাস বা অর্ধবছরে (জুলাই-ডিসেম্বর) রপ্তানি আয় আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮ দশমিক ৪১ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে রপ্তানি আয় হয়েছে ২ হাজার ৪৬৯ কোটি ৮৫ লাখ মার্কিন ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৫ দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ১৩৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ২ হাজার ৪৬৯ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। আর গত অর্থবছরের একই সময়ে আয় ছিল ১ হাজার ৯২৩ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। অন্যদিকে, ডিসেম্বর মাসে ৩৯১ কোটি ১২ লাখ ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪৯০ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। সুতরাং লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় গত মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ২৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের ডিসেম্বর মাসে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৩৩০ কোটি ৯৮ লাখ ডলার।
প্রধান রপ্তানি পণ্য পোশাক খাতের রপ্তানি আয় ভাল হওয়ায় রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে রপ্তানিমুখী শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বাসসকে বলেন, ‘ইউনিট প্রতি পোশাকের মূল্য বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ক্রেতাদেশের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানির অবস্থা ভাল। যেভাবে আমরা ক্রেতাদেশ পাচ্ছি, তাতে মনে করি আগামী কয়েক মাস প্রবৃদ্ধির এই ধারা ধরে রাখতে পারব।’
তিনি বলেন, রপ্তানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যা নিরসনে বিজিএমইর পক্ষ থেকে আমরা কাজ করছি। পাশাপাশি রপ্তানি সম্প্রসারণের অনেক সুযোগ এখন তৈরি হয়েছে। সেসব সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাতে বন্দর অবকাঠামো উন্নয়ন, শুল্ক-কর সংক্রান্ত ও ব্যাংকিং জটিলতা নিরসনে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি।
ইপিবির হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, তৈরি পোশাকের রপ্তানি আয় ও প্রবৃদ্ধি উভয়ই লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেড়েছে। ১ হাজার ৭২৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৯০ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৮ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। গতবছরের একইসময়ে এই খাতে রপ্তানি ছিল ১ হাজার ৫৫৪ কোটি ৫৫ লাখ ডলার।
জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে নিট পণ্যের (সোয়েটার, টি-শার্ট জাতীয় পোশাক) রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৫৯ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ১ হাজার ১১৬ কোটি ১৬ লাখ ডলার। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৯১ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮৫২ কোটি ৬১ লাখ ডলার।
আলোচ্য সময়ে ওভেন পণ্যের (শার্ট, প্যান্ট জাতীয় পোশাক) রপ্তানি আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। ৭৬৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ওভেন পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৮৭৩ কোটি ৯০ লাখ ডলারের। গতবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৭০১ কোটি ৯৩ লাখ ডলার।
একক মাস হিসেবে ডিসেম্বর মাসে নিটওয়্যার পণ্য রপ্তানি ৫৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং ওভেন পোশাক ৪৮ দশমিক ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এক মাসে ২১৭ কোটি ৬০ লাখ ডলারের নিটওয়্যার পণ্য এবং ওভেন পোশাক ১৮৬ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের রপ্তানি হয়েছে।
জুলাই-ডিসেম্বর এই ৬ মাসে অন্যান্য পণ্যের মধ্যে প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি আয় বেড়েছে। এই খাতে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ১০ লাখ ডলার,যার প্রবৃদ্ধি ৩৪ দশমিক ১৫ শতাংশ। কৃষিজাত পণ্য রপ্তানির আয় বেড়েছে উল্লেখ করার মত। এ সময়ে কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৬৫ কোটি ৪০ লাখ ডলারের, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি।
আলোচ্য সময়ে ৫৬ কোটি ৩৯ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়জাত পণ্যের রপ্তানি হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৬ দশমিক ৪১ শতাংশ।এ সময়ে মাছ রপ্তানি হয়েছে ৩৩ কোটি ৯০ লাখ ডলারের, যা গতবছরের একই সময়ের তুলনায় ২১ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। এছাড়া টেরিটাওয়েল, সিরামিক, প্রকৌশল পণ্য, গ্লাস, বিল্ডিং নিমার্ণ সামগ্রী, হোম টেক্সটাইল, হস্তশিল্পসহ অধিকাংশ পণ্যের রপ্তানি আয়ও বেড়েছে।
সূত্র_বাসস