ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৬ জানুয়ারী, ২০২২ ১০:৩৫ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫১২ বার
বাড়তে শুরু করেছে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ। অন্যদিকে কমছে ব্যাংকের উদ্বৃত্ত তারল্য। গত জুলাইয়ে মুদ্রানীতি ঘোষণার পর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চার মাসে ব্যাংক খাতের উদ্বৃত্ত তারল্য ২ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা থেকে কমে ২ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। অর্থাৎ আলোচিত সময়ে উদ্বৃত্ত তারল্য কমেছে ৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা যায়।
গত কয়েক মাস অল্প অল্প করে বাড়লেও অক্টোবর মাসে বেশ খানিকটা বেড়ে ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশে উঠে এসেছে এ ঋণ প্রবৃদ্ধি।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, গত নভেম্বরে ব্যাংক খাতে মোট তরল সম্পদের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৪৭ হাজার ১৪২ কোটি টাকা। ওই সময়ে ব্যাংকগুলোর নগদ অর্থ সংরক্ষণের (সিআরআর) দরকার ছিল ৬১ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। বিধিবদ্ধ তরল সম্পদ সংরক্ষণে (এসএলআর) দরকার ছিল ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা। সিআরআর ও এসএলআর সংরক্ষণের পর ব্যাংকগুলোর হাতে ছিল ২ লাখ ১৮ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। যা উদ্বৃত্ত তারল্য হিসেবে ব্যাংক খাতে পরিচিত। গত জুন শেষে ব্যাংক খাতে উদ্বৃত্ত ছিল ২ লাখ ৩১ হাজার ৭১১ কোটি টাকা।
মূলত ২০২০-২১ অর্থবছর জুড়েই ব্যাংকে তারল্যের পাহাড় জমতে থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, করোনা মহামারির মধ্যে ব্যাংকের ঋণ বিতরণ কার্যক্রমসহ সব ধরনের বিনিয়োগে ভাটা পড়ে। এছাড়া রেমিট্যান্সও সে সময় বেশি আসছিল। একইসঙ্গে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় নগদ অর্থ ছাড়ের ফলে ওই সময় থেকেই ব্যাংকে উদ্বৃত্ত তারল্য বাড়তে থাকে।
তবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি ফেরায় গত নভেম্বরে ব্যাংক খাতের উদ্বৃত্ত তারল্য কমে আসে। করোনার প্রকোপও তখন কমে এসেছিল এবং রেমিট্যান্স প্রবাহও কমেছিল। তবে এখন নতুন করে ওমিক্রনের আতঙ্ক ও উদ্বেগ কাজ করছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
গত ২৯ জুলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতিতে গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে সম্প্রসারণমূলক রাজস্ব ও মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত নীতি সহায়তার ফলে ব্যাংকিং খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য ও তরল সম্পদের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ তারল্য যাতে সার্বিক মূল্য পরিস্থিতি ও আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় কোনোরূপ বিঘ্ন ঘটাতে না পারে সে ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক সতর্ক।
দৈনিক ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের সার্বিক তারল্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখে প্রয়োজনে ‘ওপেন মার্কেট অপারেশন’ পরিচালনার পাশাপাশি পরিস্থিতি বিবেচনায় অর্থবছরের যেকোনো সময়ই মুদ্রানীতির নীতিগত দিক পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতিও দেন গভর্নর।
এরপর গত ৯ আগস্ট থেকে স্বল্প মেয়াদি বিল নিলাম শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে প্রতি মাসে ১৮-১৯ হাজার কোটি টাকা বিলে খাটিয়ে কিছুটা আয় করতে শুরু করে ব্যাংকগুলো। গত সেপ্টেম্বরে কলমানি মার্কেট অনলাইনে নিয়ে আসার পর এ তারল্য বিনিয়োগের মাধ্যমে ভালো আয় করতে দেখা যায় ব্যাংকগুলোকে।
প্রসঙ্গত, ব্যাংকের তহবিলের প্রধান উৎস আমানত। এ আমানতের ৪ শতাংশ বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী সিআরআর হিসেবে জমা রাখে ব্যাংকগুলো। ১৩ শতাংশ জমা রাখতে হয় বন্ড বিল আকারে। বাকি অংশ ঋণ হিসেবে বিতরণ করা যায়। তবে ঋণের চাহিদা কম থাকলে বা ব্যাংকের হাতে থাকা তহবিল বিনিয়োগ করা না গেলে তা উদ্বৃত্ত তারল্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ উদ্বৃত্ত তারল্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি তদারকির জন্য এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে।
গত নভেম্বরে ব্যাংকে বেসরকারি খাতের ঋণেরও চাহিদা কিছুটা বেড়েছে। ওই মাসে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। এর আগের মাসে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ।