ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৮ জানুয়ারী, ২০২২ ০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৬১ বার
দেশে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পঞ্চমধাপেও চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থীদের কাছে ধরাশায়ী হয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। গত বুধবার অনুষ্ঠিত ৭০৭টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ৩৪৫টিতেই স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। আর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ৪৬ জনসহ ৩৪১টিতে জয় পেয়েছে সরকারি দল। এ প্রসঙ্গে দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, বিএনপি জোট আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় ওই সব ভোট বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে চলে গেছে। আর দলগতভাবে যাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তার বিরুদ্ধে মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীরা একজোট হয়ে কাজ করেছে। স্থানীয় নির্বাচন হওয়ায় পছন্দমতো প্রার্থী না পেয়ে অনেক জায়গায় ভোট ভাগ হয়ে গেছে। এসব কারণেই মূলত বিদ্রোহী প্রার্থীদের জয়ের পাল্লা ভারী হয়ে গেছে। তবে যারা জয়লাভ করেছে তারাও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বলে মনে করছেন দলটির শীর্ষপর্যায়ের নেতারা।
জানা গেছে, পঞ্চমধাপে সিলেট বিভাগের চার জেলায় অনুষ্ঠিত ৭৫টি ইউনিয়নের মধ্যে দু’টি ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত থাকায় ৭৩টির ফল প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে ৪৪টিতেই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন নৌকার প্রার্থীরা। টাঙ্গাইলের ঘাটাইল, বাসাইল ও মির্জাপুর উপজেলার ১৩ ইউনিয়নে সাতটিতে স্বতন্ত্র, কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার ছয় ইউনিয়নের মধ্যে চারটিতেই স্বতন্ত্র প্রার্থী, নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কান্দিউড়া ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী, ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার ১১ ইউনিয়নের ছয়টিতেই স্বতন্ত্র প্রার্থী, নীলফামারীর ডোমার উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭টিতেই স্বতন্ত্র প্রার্থী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের ৮টিতেই স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেন। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র ১টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। বাকি ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টিতেই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভ করেন। রাজশাহীর তিনটি উপজেলার ১৯ ইউনিয়নের ১৮টির ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। এতে ১২টিতেই জয় পেয়েছে বিদ্রোহী চেয়ারম্যানরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও আশুগঞ্জ উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের ১২টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেছে এবং ছয়টিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে। এরকম প্রত্যেক জেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের আধিপত্য দেখা গেছে। আবার স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বেশির ভাগই সরকারি দলের বিদ্রোহী প্রার্থী।
এর আগে চতুর্থ ধাপের ভোটেও চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের দাপটে ভরাডুবি হয় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের। ৮৩৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ভোটে সাড়ে তিন শতাধিক চেয়ারম্যান জয়লাভ করে আওয়ামী লীগের। আর বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভ করে চারশতাধিক ইউনিয়নে। গত ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপের ভোটে ফল ঘোষিত হওয়া ৯০১ ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পান ৪৪৫টিতে। জয়ের হার ৪৯ শতাংশ। বিপরীতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জয় পান ৪২৬টিতে। অবশ্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত যোগ করলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছেন। এ ধাপে আওয়ামী লীগের ৯৯ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেন। গত ২১ জুন প্রথমধাপের ২০৪টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২৮ জন ও ১৪৮ জন আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী জয়লাভ করেন।
আর ৪৯টি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। প্রথমধাপের দ্বিতীয় অংশের ১৬০টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গত ২০ সেপ্টেম্বর। এর মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৪৩ জন এবং ভোটে ৭৬ জনসহ মোট ১১৯ জন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জয়লাভ করেন। মনোনয়নের বাইরে ২৪ জন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভ করে। গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপের ৮৩৪টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৭৮ জনসহ ৪৮৬ জন আওয়ামী লীগ চেয়ারম্যান প্রার্থী জয়লাভ করে। আর ৩৩০ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করে। যার প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে পরিচিত। এ হিসাব মতে প্রায় ৪০ শতাংশ বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভ করে। পঞ্চম ধাপ পর্যন্ত নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নির্বাচনে লড়াই করে আওয়ামী লীগের এক হাজার ৬৭৭টিতে চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করেছেন। আর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ৩৪৩ জন। সবমিলিয়ে দলটির নির্বাচিত চেয়ারম্যানের সংখ্যা দুই হাজারের অধিক। অপর দিকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়লাভ করেছেন এক হাজার ছয়শতাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী। আর চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে কোথাও কোথাও নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করে এবং জয়লাভ করে- এটা নতুন কিছু নয়। তবে মনে রাখতে হবে এটা আঞ্চলিক নির্বাচন। প্রার্থীর প্রভাব যে এলাকায় বেশি থাকে ওই প্রার্থী জেতার সম্ভাবনাও বেশি। অনেক জায়গায় মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় তার সমর্থকরা ক্ষুব্ধ হয়ে অন্য প্রার্থীকে ভোট দিয়েছে। আঞ্চলিকভাবে ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে ভোটারদের পছন্দ-অপছন্দের কিছু বিষয়ও থাকে। কিছু জায়গায় অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। এসব নানা কারণে বিদ্রোহী প্রার্থীদের জয়ের পাল্লা ভারী বলে মনে হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন, এটা ঠিক বিদ্রোহী প্রার্থীদের একটি বড় অংশ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জয়লাভ করছে। তবে যারা জিতেছে তারাও আওয়ামী লীগের। দল মনোনীত প্রার্থীদের পরাজয়ের পেছনে কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তৃণমূল পর্যায়ের নির্বাচনে নানা কারণ থাকে। এর মধ্যে যেমন- এবার বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। তাদের ভোটাররা নৌকার বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। অনেক জায়গায় দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে তাদের সমর্থকরা নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছে। এখানেও ভোট ভাগ হয়ে গেছে। তবে নির্বাচনে যে প্রার্থীই জিতুক, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হচ্ছে- এটাই বড় বিষয়।