ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

এটুআই’র উদ্যোগ মানুষের স্বপ্ন পূরণের অঙ্গীকার

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১০ জানুয়ারী, ২০২২ ১৮:৪৮ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৬৪৭ বার


এটুআই’র উদ্যোগ মানুষের স্বপ্ন পূরণের অঙ্গীকার

জাতীয় পোর্টাল, ডিজিটাল সেন্টার, জাতীয় হেল্পলাইন-৩৩৩, ই-মিউটেশন, মাইগভ প্ল্যাটফর্ম, ই-নথি, মুক্তপাঠ, শিক্ষক বাতায়ন, সংযোগ, যোগাযোগ, একপে এবং এটুআই-এর একশপ বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত করেছে।
ইউএনডিপি’র সহযোগিতা ও অর্থায়নে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং আইসিটি বিভাগের অ্যাস্পায়ার টু ইনোভেট (এটুআই)-এর উদ্যোগগুলো জীবনকে সহজ করার ক্ষেত্রে বিশেষ করে,প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। যা মানুষের নাগরিক সুবিধা প্রাপ্তির পরিসর বৃদ্ধি করেছে।
সমীক্ষা অনুসারে, ডিজিটালাইজেশনে ৫ বিলিয়ন ভিজিট, ১১ বিলিয়ন ডলার খরচ এবং নাগরিকদের ৯ বিলিয়ন কর্মদিবস বাঁচিয়েছে। এছাড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় পৌঁছানোর উদ্যোগের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয়ও আন্তর্জাতিক উভয় পর্যায়ে প্রচুর পুরস্কার পেয়েছে এবং একটি উদ্ভাবনী সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করেছে।
ই-মিউটেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, যা আবেদনকারীদের খুব অল্প সময়ের মধ্যে এবং কম খরচে একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে পূর্ববর্তী থেকে বর্তমান মালিকের কাছে জমির মালিকানা পরিবর্তন করার সুযোগ করে দিয়েছে। দুর্নীতি ও হয়রানি হ্রাসের পাশাপাশি এখন পর্যন্ত ৪৯২টি উপজেলা এবং ২০টি সার্কেল অফিসসহ প্রায় চার হাজার পাঁচশ অফিসে বাস্তবায়িত এই পদ্ধতির মাধ্যমে ৫৪ লাখের মধ্যে ৪৭ লাখ ৭১ হাজার মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে।
স্কুল শিক্ষক হাবিবুর রহমান বাসস’কে বলেন, ‘খুব অল্প সময়ের মধ্যে এবং কম খরচে ই-মিউটেশন পদ্ধতিতে জমির মালিকানা পরিবর্তন করা আমাদের জন্য বিস্ময়কর ব্যাপার ছিল।’ তিনি  বলেন, কাগজ-ভিত্তিক, ম্যানুয়াল রেকর্ড-কিপিংয়ের অনুশীলনের কারণে মিউটেশন সিস্টেম একটি জটিল ব্যবস্থা ছিল, যাতে অনেক ভুল হতো। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন ভূমি প্রশাসনিক বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবও দেখা যায়।
এছাড়াও, এটুআই’র প্রযুক্তিগত সহায়তায় বাস্তবায়িত ই-মিউটেশন উদ্যোগগুলো ‘স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সরকারি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন’ বিভাগে জাতিসংঘের ‘পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড ২০২০’ পেয়েছে।
ইতিমধ্যে, ৭,৬০০টি ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে চাকরির বিজ্ঞাপন, ভর্তির তথ্য, অনলাইনে আবেদন জমা দেওয়া, ফটো স্ক্যান করা, পাসপোর্ট ফর্ম পাওয়া, এমনকি বিমানের টিকিট বুকিং করাসহ ৩০০ টিরও বেশি পরিষেবা মানুষের জন্য একটি ‘বাতিঘর’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এটুআই এর তথ্য অনুসারে, কেন্দ্রগুলি ৫৬ কোটি ৭৫ লক্ষেরও বেশি পরিষেবা প্রদান করেছে এবং পাঁচ হাজার মহিলাসহ ১৫ হাজারের ও বেশি উদ্যোক্তাকে স্বাবলম্বী করতে সক্ষম হয়েছে।
নোয়াখালী জেলার ‘সুবর্ণচর’ উপজেলার চরবাটা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের (ইউডিসি) উদ্যোক্তা জুবায়ের আহমেদ বাসস’কে জানান,  ‘প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ ইউডিসিকে একটি ‘বাতিঘর’ হিসেবে বিবেচনা করছে। কারণ, এক দশক আগে এর যাত্রা শুরুর পর থেকে তাদের জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে’।
এছাড়া তরুণ প্রজন্ম তথ্য-প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে দ্রুত প্রত্যন্ত অঞ্চলের তরুণদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। তিনি জানান, তার ইউনিয়নের বাসিন্দাদের সরকারি সেবা নিতে ৩৫ কিলোমিটার (কিছু কিছু ক্ষেত্রে ৫০ কিলোমিটার) পথ পাড়ি দিয়ে  জেলা সদরে যেতে হতো। কিন্তু এখন তারা এখানে বসে সহজেই সেবা পাচ্ছেন।
সরকারি অফিসগুলোর কার্যক্রমে গতিশীলতা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা আনার লক্ষ্যে, এটুআই প্রচলিত পদ্ধতির পরিবর্তে ইলেকট্রনিকভাবে ডকুমেন্টগুলি পরিচালনা করার জন্য অনলাইন অফিস পরিচালনা ব্যবস্থা পদ্ধতি হিসেবে ‘ই-নথি’ চালু করেছে। এখন পর্যন্ত, ই-নথি পদ্ধতিতে ১ কোটি ৫১ লাখেরও বেশি ফাইল নিষ্পত্তি করেছে। এটুআই ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনের পথে সরকারের ম্যানুয়াল পরিষেবাকে ডিজিটাল পরিষেবাতে রূপান্তরিত করার পথে ২১০০টি পরিষেবার মধ্যে ২০০০টি নাগরিক পরিষেবাকে ডিজিটাল পরিষেবায় রূপান্তর করেছে।
‘জাতীয় তথ্য বাতায়ন’, সমস্ত ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ, অধিদপ্তর এবং মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের ৫১,৫০০ টিরও বেশি ওয়েবসাইটকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি ওয়েব পোর্টাল, নাগরিকদের প্রদত্ত তথ্য এবং পরিষেবাগুলো অ্যাক্সেস করার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সমস্ত সরকারি পরিষেবাগুলিকে এক প্ল্যাটফর্মের অধীনে নিয়েএসেছে । এখন পর্যন্ত এই পোর্টালে ৬৫৭টি ই-পরিষেবা এবং ৮৮ লাখেরও বেশি বিষয়বস্ত যুক্ত করা হয়েছে। এটুআই-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে ১৫ লাখেরও বেশি মানুষ তথ্য ও পরিষেবা পেতে পোর্টালটিতে প্রবেশ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শাহিন আরেফিন বলেন,‘আমরা শুধুমাত্র একটি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে  সরকারের  বেশিরভাগ পরিষেবা সম্পর্কে জানতে পারি। এমনকি এমন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা আমরা এই সম্পর্কে জানার আগে কল্পনাও করতে পারি না। যেমন উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটর।’
নাগরিকদের জনসেবা প্রাপ্তির পদ্ধতি সম্পর্কে তথ্য প্রদানের জন্য চালু করা হয় ‘জাতীয় হেল্পলাইন-৩৩৩’। এই হেল্পলাইন ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ এবং জনগণের সন্তুষ্টি অর্জন করেছে। এর আগে জনসেবা সংক্রান্ত তথ্যের জানা একটি জটিল প্রক্রিয়া ছিল। তথ্য অনুসারে, এখন পর্যন্ত হেল্পলাইনে ৭ কোটি ৩৭ লাখেরও বেশি বার কল করা হয়েছে। চব্বিশ হাজারের ও বেশি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র রাকিব হোসেন বাসস’কে বলেন, ‘একসময় যারা জন প্রশাসন সম্পর্কিত যে কোন তথ্য চাইতেন এটা ছিল তাদের জন্যএকটি কঠিন এবং জটিল কাজ। তবে, দৃশ্যপট বদলেছে। এখন যে কেউ এমনকি প্রান্তিক এলাকার  যে কোন ব্যক্তি সহজেই তার প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারেন।’
তিনি আরও জানান, সরকারি সেবা গ্রহণের সময় জনগণের যে ঝামেলা ও হয়রানির মুখোমুখি হতে হয়েছে তার জন্য এটি সরকারের পক্ষে একটি দুর্দান্ত অর্জন।
যখন শিক্ষাসহ সমস্ত কিছু বাণিজ্যিকীকরণ করা হচ্ছে  তখন  বৃহত্তম বাংলা ভাষার ই-লার্নিং প্যøাটফর্ম ‘মুক্তপাঠ’, শিক্ষার্থীদের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে । কারণ এটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান সংগ্রহের পথ প্রশস্ত করেছে। ইতিমধ্যে প্রায়১৯ লাখ শিক্ষার্থী  ২০৭টি কোর্সে  অংশ নিয়েছে। কোর্স সম্পন্ন করার জন্য ১০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীকে সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে । এছাড়াও  প্রায়৩২ হাজার সরকারি কর্মকর্তা মুক্তপাঠে সফলভাবে কোর্স সম্পন্ন করেছেন।
প্লাটফর্মে অফার করা বেশিরভাগ কোর্স বিনামূল্যে এবং বাকি কোর্সের মূল্য সাধারণের সামর্থ্যের মধ্যে। মোহাম্মদপুর গভর্ণমেন্টে কলেজের এমবিএ-এর ছাত্র আসিফ আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, তিনি এই কলেজটির প্ল্যাটফর্ম থেকে বারোটি কোর্সে  অংশ নিয়েছেন।
ফরিদপুরের বোয়ালমারি  উপজেলার পল্লবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সুবর্ণ রায় লিটা বলেন, মুক্তপাঠের শিক্ষায় শ্রেণিকক্ষ পরিচালনা ও গবেষণাসহ নিজের পেশা সম্পর্কিত বিভিন্ন কোর্স সম্পন্ন করেছেন। এতে শিক্ষা ও পরীক্ষার পদ্ধতি উভয়েরই মান যথেষ্ট ভাল। ‘দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম’ উদ্যোগের অধীনে অন্য দ’ুটি পরিষেবা হলো-,যোগাযোগ ও শিক্ষক বাতায়ন।
‘যোগাযোগ’, এমন একটি শিক্ষা ডিজিটাল প্লাটফর্ম  যা কিশোর-কিশোরীদের সৃজনশীলতা, প্রতিভা বিকাশ এবং স্বাস্থ্যকর বিনোদন অন্বেষণ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। সমস্যা সমাধান, সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা এবং যোগাযোগ দক্ষতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রায়৩২ হাজার বিষয়বস্তু তৈরি করা হয়েছে এবং ২৭ লাখ ৭৩ হাজারেরও বেশি নিয়মিত শিক্ষার্থীকে সংযুক্ত করেছে।  
শিক্ষক বাতায়ন, সাধারণ, কারিগরি এবং মাদ্রাসা শিক্ষার বিভিন্ন বিষয়ের অডিও, ভিডিও, অ্যানিমেটেড এবং ডকুমেন্টারি ভিত্তিক বিষয়বস্তুসহ পেশাদার দক্ষতা বিকাশের মাধ্যমে শিক্ষকদের ক্ষমতায়নের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এটি শিক্ষকদের নিজেদের বিকাশ এবং মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে পাঠদানের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এই পোর্টালে ৪ লাখ ৩৬ হাজারেরও বেশি বিষয়বস্তু এবং ৯৫৩টি মডেল বিষয়বস্তু সন্নিবেশ করা হয়েছে। যা শিক্ষকদের পাঠদানের সময় ব্যবহার উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে।এই  পোর্টালে  নিবন্ধিত সদস্য প্রায় ৪ লাখ ৩৬ হাজার।
এটুআই’র আরেকটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ হল ‘উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটর’। এটি একটি স্বয়ংক্রিয় ক্যালকুলেটর যার মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীরা বংশধরদের মধ্যে সম্পত্তির বণ্টন গণনা করতে পারে। এটি সম্পত্তি বণ্টনের প্রক্রিয়াটিকে সহজ করেছে।
লক্ষ্মীপুর সদরের উত্তর হাছদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এমরান হোসেন নান্নু বলেন, মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টনের হিসাব করতে মানুষকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। অন্যের ওপর নির্ভর করতে গিয়ে অনেকসময় ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হতে হয়।কিন্তু ‘উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটর’ উত্তরাধিকারের সম্পত্তির হিসেব করে দেয়ায় তাদের জন্য এটি আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।
এছাড়াও একপে’র মতো ওয়ান-স্টপ পেমেন্ট প্লাটফর্র্ম যা জনগণকে বিভিন্ন সরকারি পরিষেবা, ইউটিলিটি বিল এবং ফি পরিশোধের সুবিধা এবং ই-কমার্স এবং অন্যান্য পেমেন্ট পেতে সক্ষম করেছে। অন্যদিকে, দেশের প্রথম ‘গ্রামীণ সহায়তাপ্রাপ্ত’ ই-কমার্স প্লাটফর্ম ‘একশপ’ সেবা জনগণকে গ্রামীণ পণ্যসহ প্রয়োজনীয় পণ্য সহজে এবং দ্রততর উপায়ে পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

সূত্র : বাসস


   আরও সংবাদ