ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

পর্যটন ব্যবসায় তরুণরা, তৈরি হচ্ছে কর্মসংস্থান

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১১ জানুয়ারী, ২০২২ ০৮:০১ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৪৫ বার


পর্যটন ব্যবসায় তরুণরা, তৈরি হচ্ছে কর্মসংস্থান

বাংলাদেশের তরুণরা বর্তমানে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের পর সরকারি ও বেসরকারি চাকরির পেছনে না ছুটে সম্ভাবনাময় পর্যটন খাতে যোগ দিচ্ছেন এবং এই হার ক্রমেই বাড়ছে।

তারা নতুন নতুন জায়গা খুঁজে বের করছেন এবং সেগুলোকে জনপ্রিয় করে তুলছেন। ফলে যাদের হাতে জীবিকা নির্বাহের পরেও বাড়তি আয় থাকছে, তারা সেসব জায়গায় বেড়াতে যেতে পারছেন।

অনেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে বিনিয়োগ করে অবকাশ কেন্দ্র, রেস্তোরাঁ ও প্রমোদতরী চালু করেছেন। ফলে, প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

ইমরানুল আলম এমনই একজন উদ্যোক্তা।

২০০৯ সালে তিনি ঢাকায় স্নাতকে পড়া অবস্থায় বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি শুরু করেন।

৫ বছর পর ইমরানুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাপানিজ স্টাডিজ বিষয়ের ওপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর তিন বন্ধুর সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে একটি পর্যটন পরিচালনা ব্যবসা চালু করেন।

ইমরানুল (৩৩) বলেন, 'অভিজ্ঞতা ও মানসিক শক্তিই ছিল আমাদের একমাত্র মূলধন।'

কিছুটা অভিজ্ঞতা অর্জনের পর ২০১৬ সালে তারা ব্যবসাটিকে একটি আনুষ্ঠানিক রূপ দেন এবং এর নাম দেওয়া হয় 'ট্যুর গ্রুপ অব বাংলাদেশ'।

এখন তাদের ব্যবসার মূল্যমান ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা এবং তারা প্রায় ১০০ জন লোককে নিয়োগ দিয়েছেন।

সুন্দরবন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, রাঙ্গামাটি, সাজেক, কক্সবাজার, বান্দরবান, শ্রীমঙ্গল ও সুনামগঞ্জের টাংগুয়ার হাওরে ইজারা নেওয়া জমির ওপর প্রতিষ্ঠানটি অবকাশ কেন্দ্র ও রেস্তোরাঁ নির্মাণ করেছে।

তারা সুন্দরবনে ক্রুজ জাহাজ, টাঙ্গুয়ার হাওড়ে নৌকা ও বান্দরবানে গাড়ি ভাড়া দেওয়ার ব্যবসা পরিচালনা করছেন।

ইমরানুল বলেন, 'আমরা দেশে ও বিদেশে ট্যুর পরিচালনা করি। আমরা এশিয়ায় অনেক ট্যুরের সুযোগ দিচ্ছি।'

ইমরানুল ও তার বন্ধুরাই এ ব্যবসায় একা নন।

গত কয়েক বছরে এই খাতের অপার সম্ভাবনা অনুধাবন করে অনেক তরুণ-তরুণী এই ব্যবসায় এসেছেন। ক্রয়ক্ষমতা বেড়ে যাওয়া ও আগের তুলনায় উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে অনেক মানুষ এখন সারা দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান ৩ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, যেটি প্রায় ৭৭ হাজার কোটি টাকার মতো।

সার্বিকভাবে, দেশের কর্মজীবীদের ৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশকে নিয়োগ দেয় এই খাত। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটকদের আনুমানিক খরচ প্রায় ৭৪ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা।

'যখন আমরা শুরু করেছিলাম, তখন তরুণ-তরুণীরা পর্যটন ব্যবসায় বড় আকারে আসতেন না। এখন পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে', যোগ করেন ইমরানুল।

কয়েক বছরে তাদের অনেকেই উদ্যোক্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন এবং দেশের ভেতরে ও বাইরে ট্যুর পরিচালনা করছেন। 

বাংলাদেশ ট্যুর পরিচালনাকারীদের দ্য অনলাইন ট্র্যাভেলার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং দ্য বাংলাদেশ ই-ট্র্যাভেলার্স অ্যাসোসিয়েশন নামের ২টি প্ল্যাটফর্ম আছে। যৌথভাবে এই দুটি সংস্থার প্রায় ৩০০ সদস্য আছে, যাদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব পর্যটন সংস্থা আছে।

দিগন্ত ট্র্যাভেল ফ্রিক নামের ট্যুর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক মাঈনুল ইসলাম রাজু ২০১৮ সালে তার ব্যবসা শুরু করেন।

তিনি ২০১৯ সালে সাজেকে একটি কটেজের ইজারা নেন এবং পরবর্তীতে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে আরো ৩টি কটেজ তৈরি করেন এবং ৮ কাঠা জমি কেনেন।

সে সময় ট্যুর আয়োজনের মাধ্যমে তার প্রতিষ্ঠানের মাসিক লাভের পরিমাণ দাঁড়ায় ২০ হাজার টাকা। ২০১৯ সালে এটি বেড়ে প্রায় ৩৫ হাজার টাকায় পৌঁছায়।

পরবর্তীতে তিনি ঢাকার খিলগাঁয়ে একটি অফিস নেন। তবে মহামারির সময় পর্যটন খাতে দুর্যোগ নেমে এলে তিনি সে অফিস ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।

২০২০ এ মহামারির প্রভাব কিছুটা কমে এলে তিনি পল্টনে অন্য আরেক ব্যক্তির সঙ্গে অফিস ভাগ করে নেন। সে বছরের সেপ্টেম্বরের পর প্রতিষ্ঠানটি আবারও লাভের মুখ দেখে।

তারা একই সঙ্গে টাঙ্গুয়ার হাওড়ে একটি হাউজবোট তৈরি করেছেন।

রাজু বলেন, 'আমরা দেশের ভেতরে ও বাইরে ট্যুরের আয়োজন করি।' তিনি এ যাবত এ ব্যবসায় ১৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। 

তার পরবর্তী পরিকল্পনা হচ্ছে একটি ভ্রমণের আনুষঙ্গিক পণ্যের দোকান খোলা।

ফেসবুক ভিত্তিক সংগঠন 'হিট দ্য ট্রেইলের' প্রতিষ্ঠাতা আতাউল ইসলাম মাসুম ২০১৮ সাল থেকে পেশাদার ভিত্তিতে ট্যুর পরিচালনা শুরু করেন। রেমাক্রিতে তার একটি অবকাশ কেন্দ্র আছে, যেখানে তিনি প্রায় ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন।

তিনি জানান, টাঙ্গুয়ার হাওড়ে হাউজবোট তৈরি হবে, যার জন্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে। তার মাসিক আয় বর্তমানে ৫০ থেকে ৬০ হাজারের মধ্যে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. এম বদরুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও পর্যটন খাত ভালো করছে।

তিনি বলেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় (বিটিবি) কিংবা বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের উচিত পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তরুণ-তরুণীদের অভিভাবকের ভূমিকা পালন করা।

বদরুজ্জামান বলেন, 'কারণ, আপনার যদি একজন অভিভাবক থাকে, তাহলে আপনি পর্যটন খাতের সম্ভাবনার সুযোগ নিতে পারবেন।'

২ বছর আগে বাংলাদেশে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ লাখ পর্যটক ছিল। বিটিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ আহমেদ জানান, সংখ্যাটি এখন ২ কোটিতে পৌঁছেছে।

'ফলে, এটি একটি বড় বাজারে পরিণত হয়েছে। যেহেতু পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে, সেহেতু এটি বিনিয়োগকারীদের জন্যেও আকর্ষণীয় খাতে পরিণত হচ্ছে', যোগ করেন তিনি।


   আরও সংবাদ