ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

শুল্ক-কোটামুক্ত বাজার হারানোর শঙ্কা

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১২ জানুয়ারী, ২০২২ ০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫০৯ বার


শুল্ক-কোটামুক্ত বাজার হারানোর শঙ্কা

উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ বিশ্বে বাংলাদেশের ইতিবাচক ইমেজ তৈরি এবং বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টির পাশাপাশি বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি করবে। এর মধ্যে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার আওতায় আন্তর্জাতিক বাজারে শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত বাজারসুবিধা হারানো অথবা সীমিত হয়ে যাওয়া। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার লক্ষ্যে প্রতিযোগী মূল্যে মানসম্মত রফতানি পণ্য ও সেবা উৎপাদন এবং বাজার বহুমুখীকরণ অত্যাবশ্যক। এ ছাড়া বিকল্প বাজারসুবিধা সৃষ্টির লক্ষ্যে সম্ভাবনাময় দেশের সাথে বাণিজ্যচুক্তি সম্পাদন করাও প্রয়োজন বলে ২০২১-২০২৪ মেয়াদের জন্য করা নয়া রফতানি নীতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

রফতানি নীতির এই খসড়াটি অনুমোদনের জন্য অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে। আজ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে এই সভাটি ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত হবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

রফতানিমুখী প্রবৃদ্ধি কৌশল অনুসরণ করা নতুন রফতানি নীতির উদ্দেশ্য বলে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, রফতানির প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে সুষ্ঠু ভারসাম্য আনা এবং জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও রফতানি সহায়ক পরিবেশের ক্রমাগত কাক্সিক্ষত উন্নয়নের মাধ্যমে বাণিজ্যে গতিশীলতা আনা, বাণিজ্যে সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাণিজ্যে বাংলাদেশের স্থান সুদৃঢ় করাসহ দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বিকশিত করা রফতানি নীতির অন্যতম উদ্দেশ্য ।

২০২১-২০২৪ মেয়াদে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০ বিলিয়ন বা আট হাজার কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় যা ছয় লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা (এক ডলার ৮৬ টাকা হিসাবে)।

খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারের অগ্রাধিকারমূলক পরিকল্পনা, রফতানি খাতের চাহিদা এবং বিশ্ববাণিজ্য পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটের সাথে সামঞ্জস্যমূলক নীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে প্রতি তিন বছর অন্তর রফতানি নীতি প্রণয়ন করা হয়ে থাকে। এ ধারাবাহিকতায় রফতানি নীতি-২০২১-২০২৪ প্রণীত হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৮-২০২১ মেয়াদে প্রণীত ত্রি-বার্ষিক রফতানি নীতির মেয়াদ ২০২১ সালের ৩০ জুন শেষ হয়েছে। রফতানি নীতি-২০২১-২০২৪ চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত রফতানি নীতি-২০১৮-২০২১ কার্যকর রয়েছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে উল্লেখ করা হয়েছে।

রফতানি নীতিতে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে গৃহীত রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা পথনির্দেশিকা হিসেবে কাজ করছে। বাংলাদেশকে ২০৩১ সালে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উচ্চ আয়ের দেশে উন্নীত করা এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-২০৩০ বাস্তবায়নে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২১-২০২৫) পথপ্রদর্শক হিসেবে প্রণীত হয়েছে।

এতে আরো বলা হয়, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ও কৌশল বাস্তবায়নে শ্রমঘন রফতানিমুখী শিল্পে উৎপাদন, বৈচিত্র্যময় কৃষিপণ্য, কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ, আধুনিক সেবা খাতকে শক্তিশালীকরণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

খসড়া নীতিমালায় পণ্য বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে তৈরী পোশাক খাতের (আরএমজি) পাশাপাশি নন-আরএমজি খাত আইসিটি সার্ভিসেস, সফটওয়্যার, বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও), ট্যুরিজম খাতকে অধিকতর সম্ভাবনাময় সেবা খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রফতানি নীতি ২০২১-২০২৪ প্রণয়নে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে।
রফতানি নীতিমালার খসড়ায় এলডসিসি গ্র্যাজুয়েশন মোকাবেলার লক্ষ্যে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিভিন্ন চুক্তির আওতায় প্রদত্ত এস অ্যান্ড ডি সুবিধা আদায়ে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, বিদ্যমান প্রণোদনাগুলো ডব্লিউটিও’র বিধিবিধানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা, পণ্য ও সেবা বহুমুখীকরণে সম্ভাবনাময় রফতানি খাতে প্রয়োজনীয় নীতিসুবিধা দেয়া, অগ্রাধিকারমূলক পণ্য ও সেবা খাত চিহ্নিত করা এবং বিশেষ নীতিসুবিধা দেয়া, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সুনির্দিষ্ট নীতি সুপারিশ, কমপ্লায়েন্স ও স্ট্যান্ডার্ড প্রতিপালন, রফতানি শিল্পের পশ্চাৎ ও অগ্রসংযোগ শিল্প স্থাপনে সহায়তা দেয়া, শ্রমনির্ভর রফতানি খাতের প্রতি গুরুত্বারোপ, রফতানি সংশ্লিষ্ট দফতরের দক্ষতা উন্নয়ন, বাজার সম্প্রসারণে বিদেশে বাংলাদেশী দূতাবাসের বাণিজ্যিক উইংগুলোতে গতিশীলতা আনা, সম্ভাবানময় রফতানি বাজারে বাণিজ্যিক প্রতিনিধিদল পাঠানো, আন্তর্জাতিক মেলায় কার্যকরভাবে অংশ নেয়া, গ্লোবাল ভ্যালু চেইনে অংশগ্রহণ, সার্কুলার পণ্য উৎপাদন ও রফতানি, বানিজ্য ও বিনিয়োগ পরিবেশ সহজীকরণে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণের প্রতি রফতানি নীতি-২০২১-২০২৪-এ বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, প্রস্তাবিত রফতানি নীতি ২০২১-২০২৪ প্রণয়নে দেশের প্রধান প্রধান শিল্প ও বণিক সমিতি, বাণিজ্য সংগঠন, গবেষণা সংস্থা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সরকারি বিভাগ ও সংস্থার সাথে দীর্ঘ আলোচনা এবং সুপারিশ গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মতামত দেয়ার সুবিধার্থে প্রস্তাবিত রফতানি নীতি-২০২১-২০২৪-এর খসড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।


   আরও সংবাদ