ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

দেশের রাজনীতিতে অজানা শঙ্কা

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১২ জানুয়ারী, ২০২২ ০৯:৩৯ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৬৯ বার


দেশের রাজনীতিতে অজানা শঙ্কা

টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের বাহ্যিক রূপ স্বাভাবিক মনে হলেও ভেতরে বেশ অস্বস্তি কাজ করছে, এমনটা টের পাওয়া যাচ্ছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাব ও এর ছয় কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর শাসক মহলের অভ্যন্তরে এর ‘রাজনৈতিক প্রভাব’ নিয়ে যে জল্পনা-কল্পনা কিংবা সংশয় তৈরি হয়েছে, তা কাটছে না। র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার পর বাইডেন প্রশাসনের তরফ থেকে আরো কিছু পদক্ষেপ আসতে পারে এমন প্রচারণাও রাজনৈতিক মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে। এসব নিছক প্রপাগান্ডা নাকি এর কোনো ভিত্তি আছে, সে সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু বুঝা না গেলেও রাজনীতিতে এগুলো বেশ শক্তভাবেই আলোচনা হচ্ছে। সরকারের অন্যতম রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির ভেতরেও মার্কিন সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ দেখার একটা প্রচ্ছন্ন প্রত্যাশা রয়েছে। দলটি সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছিল। র্যাবের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা এসেছে দলটি এর দায় সরকারের ওপরই চাপিয়েছে। পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন সরকারের উদ্যোগে গত ডিসেম্বরে গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশের ডাক না পাওয়ার কারণ হিসেবে ২০১৮ সালের ‘একতরফা নির্বাচনকেই’ অনেকে মোটা দাগে দেখার চেষ্টা করছেন। যদিও সরকার ওই নির্বাচনকে ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন’ হিসেবেই মনে করে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে বলেই শাসকদলের বিশ্বাস।

রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে রাজনীতিতে কূটনৈতিক তৎপরতা বেশ বেড়েছে। র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিতে সরকার এরই মধ্যে বেশ কিছু প্রকাশ্য পদক্ষেপ নিয়েছে। সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মার্কিন সরকারের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। চলছে লবিং-তদবির। অন্য দিকে বিএনপিও কূটনৈতিক উইংগুলো শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। জানা গেছে, বিএনপি বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারকারী দেশগুলো সম্পর্কে একটি স্পষ্ট এজেন্ডা তৈরি করেছে। বর্তমান সরকারকে কিংবা বিগত নির্বাচনকে বৈধতা দিয়ে আসা যেসব দেশ এদের সমর্থন দিচ্ছে, সেই সব দেশগুলোর প্রকাশ্য যেকোনো নেগিটিভ তৎপরতা কিংবা বক্তৃতা-বিবৃতি দলটি প্রতিবাদ জানাবে। এর অংশ হিসেবেই সম্প্রতি চীনের ঢাকাস্থ রাষ্ট্রদূতের একটি বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় বিএনপি। চীনের রাষ্ট্রদূত ওই বক্তব্যে বর্তমান সরকারকে গণতান্ত্রিক ও জনগণ সমর্থিত বলে উল্লেখ করে। এর উত্তরে বিএনপি বিবৃতির ভাষ্য ছিল এমন-‘চীন তার নিজে দেশে কী ব্যবস্থা বহাল রাখবে তা একান্তই তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ ঐতিহ্যগতভাবে নির্বাচন ও প্রত্যক্ষ ভোটাধিকার চর্চার মাধ্যমে তাদের রাষ্ট্রের মালিকানা চর্চা করছে ও করবে। তাই চীনের প্রতি বিএনপি ও দেশবাসীর প্রত্যাশা, তারা গণবিরোধী ও গণবিচ্ছিন্ন এই অবৈধ সরকার নয়, দেশের প্রকৃত মালিক জনগণের পাশেই সবসময় দাঁড়াবেন।’
জানা গেছে, এই বিবৃতি বিএনপির কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক চিন্তাভাবনার অনেক কিছুই স্পষ্ট করে দিয়েছে। দলটি প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাথে ‘পারস্পরিক সহযোগিতামূলক’ সম্পর্কে বিশ্বাসী থাকলেও বিগত নির্বাচনগুলোতে দেশটির ভূমিকায় মোটেই সন্তুষ্ট নয়। এমন একটি প্রেক্ষাপটে দলটির ঝোঁক রয়েছে মার্কিন সরকারের দিকে। দলটির কারো কারো মতে, আগামী নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে মার্কিন সরকারের ভূমিকা রাখার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

এ দিকে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার পর এর কী কী প্রভাব, কোন কোন ক্ষেত্রে পড়তে পারে, তা নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা রয়েছে। সম্প্রতি একটি টকশোতে নতুন রাজনৈতিক দল গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া বলেছেন, ‘আগামী তিন মাসের মধ্যে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।’ তিনি বলেন, ‘১০ জন সিনেটরের উদ্যোগের ভিত্তিতে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। যাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে বিশ্বের ১৮০টি দেশে তার প্রভাব পড়তে পারে। কানাডা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি বা অস্ট্রেলিয়ার মতো যেসব দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, তারাও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা অনুসরণ করে থাকে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে যে চিঠি মার্কিন সরকারকে দিয়েছেন, তাতে কোনো লাভ হবে না বলে মনে করেন রেজা কিবরিয়া। সপ্তাহখানেক আগের ওই টকশোতে তিনি বলেন, ‘সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হলে যে আইনে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে সে আইন বাতিল করতে হবে। বাতিল করতে হলে ৫১ সিনেটরের মতামত লাগবে।’

২০২৩ সাল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছর। রাজনীতি এখন সেই নির্বাচনকে টার্গেট করেই এগোচ্ছে। একযুগের বেশি ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি রাজনৈতিক কলাকৌশল ও কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে আগামী নির্বাচনে একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থানে যেতে চায়। অন্য দিকে সরকারও চায় না কোনোভাবেই ক্ষমতার ধারা ক্ষুন্ন হোক।


   আরও সংবাদ