ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে চিন্তিত ব্যাংকাররা

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারী, ২০২২ ০৮:৩০ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৯২ বার


করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে চিন্তিত ব্যাংকাররা

করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে ১৬৯ শতাংশ। সংক্রমণের এ পরিস্থিতিকে বিপজ্জনক হিসেবে আখ্যায়িত করেছে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। 

আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে আগামী দুই মাসের মধ্যে ইউরোপের অর্ধেক মানুষ করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে সংক্রমিত হবে। এমনি পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য বিশেষ করে রফতানি আয় আবারো কমে যেতে পারে। 

এমতাবস্থায় দেশের অন্যান্য খাতের মতো ব্যাংকিং খাতের সংশ্লিষ্টরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। দীর্ঘ দুই বছর ঋণ আদায়কার্যক্রম বন্ধ থাকার শিথিলতা জানুয়ারি থেকে উঠতে না উঠতেই করোনা পরিস্থিতির এমন অবস্থায় ঋণ আদায় কার্যক্রম আবারো ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সাথে ব্যাংকারদের শীর্ষ সংগঠন এবিবি নেতৃবৃন্দের সৌজন্য সাক্ষাতে দেশের সমসাময়িক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও পর্যালোচনা করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও এবিবি সূত্র জানিয়েছে, গভর্নরের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে ব্যাংকাররা নানা দিক দিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ইতোমধ্যে রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমে গেছে। চলতি হিসাবের ভারসাম্যসহ সামগ্রিক হিসাবের ভারসাম্য ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। কিন্তু বিপরীতে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় প্রায় প্রতিটি ব্যাংকেরই ডলার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। 

রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রিসহ নানা প্রকার নীতিসহায়তা দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অপর দিকে করোনার প্রাদুর্ভাবে গত দুই বছর ধরে ঋণ আদায় কার্যক্রমে শিথিলতা ছিল। প্রথম বছর কোনো অর্থ পরিশোধ ছাড়াই ঋণখেলাপি থেকে মুক্ত থেকেছেন ব্যবসায়ীরা। দ্বিতীয় বছর অর্থাৎ গত বছর বকেয়া কিস্তির মাত্র ১৫ শতাংশ পরিশোধ করে বছর পার করেন তারা। 

নতুন বছর অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে স্বাভাবিকভাবেই ঋণ আদায়কার্যক্রম চালু হওয়ার কথা ছিল। ইতোমধ্যে খেলাপি ঋণের স্তরে যাওয়ার (এসএমএ) অপেক্ষায় রয়েছে প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকার অনাদায়ী ঋণ। এসব বিষয় সৌজন্য সাক্ষাতে ব্যাংকাররা গভর্নরের কাছে তুলে ধরেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন এমডি জানিয়েছেন, তারা ধারণা করেছিলেন জানুয়ারি থেকে নতুন উদ্যমে ঋণ আদায়কার্যক্রম বাড়ানো হবে। কিন্তু করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় রফতানি খাতে আবারো বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। ইতোমধ্যে প্রতিটি ব্যাংকেরই বড় অঙ্কের অনাদায়ী ঋণ রয়েছে। 

ওইসব ঋণ আদায় না হলে আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিকল্প কোনো নীতিমালা না দিলে প্রতিটি ব্যাংকেরই খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাবে। খেলাপি ঋণ বেড়ে গেলে বাড়তি প্রভিশন রাখতে হিমশিম খাবে ব্যাংকগুলো। এর পরও তারা নীতিমালা আর শিথিল চান না। কিন্তু শঙ্কার কথা হলো ইউরোপে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন নিয়ে। ব্যাপকভাবে বেড়ে গেলে রফতানি আয় আবারো কমে যাবে। এমনিতেই রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমে গেছে, এর ওপর রফতানি আয় কমে গেলে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে। ব্যবসায়ীদের আয় কমে গেলে ব্যাহত হবে ঋণ আদায়কার্যক্রম।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ইতোমধ্যে যা জানা যাচ্ছে, তাতে করোনার প্রাদুর্ভাব আবারো বেড়ে যাবে। এ মুহূর্তে একটাই করণীয় আর তা হলো করোনার টিকা-কার্যক্রম জোরদার করা। তবে আমাদের দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য বিশেষ করে কোনো কারখানা যেহেতু বন্ধ হচ্ছে না, তাই রফতানি আয়ে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে বড় ধরনের সমস্যা হয়ে গেলে গত দুই বছরের মতো ঢালাওভাবে ছাড় না দিয়ে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের ছাড় দেয়া যেতে পারে। এতে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা যেমন ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন, তেমনি যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি তারা ঋণ পরিশোধ করলে ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতাও বাড়বে। পাশাপাশি যেসব ঋণ অনাদায়ী রয়েছে তার বিপরীতে প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করে ব্যাংকের ভিত্তি মজবুত করতে হবে। এসব ঋণ ছাড় দিয়ে কৃত্রিম মুনাফা না বাড়ানোই সবচেয়ে মঙ্গলজনক বলে তিনি মনে করেন।

সূত্র : নয়া দিগন্ত


   আরও সংবাদ