ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015
নিত্যপণ্যের দাম অসহনীয়

বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারী, ২০২২ ০৮:২১ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৯৩ বার


বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট

রমজানের দুই মাস আগেই শক্তিশালী সিন্ডিকেট মাথাচারা দিয়ে উঠেছে। অতি মুনাফার আশায় সিন্ডিকেট রোজায় ব্যবহৃত পণ্যসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছে। পণ্যের এই অসহনীয় দামে সীমিত আয়ের মানুষের ‘নাভিশ্বাস’ উঠেছে।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেওয়ায় বারবার এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। তাই করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ক্রেতাকে স্বস্তি দিতে কঠোরভাবে বাজার তদারকি করতে হবে।

রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলেছে, গত বছর একই সময়ের তুলনায় এখন চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, আটা-ময়দা, মাছ-মাংস, পেঁয়াজ, ছোলা, চিনি এমনকি লবণসহ ২০টি নিত্যপণ্য (সবজি ছাড়া) বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে কেজিতে পণ্যের দাম সর্বনিু ২ দশমিক ১৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৯০ শতাংশ বেড়েছে।

সরকারি এই সংস্থা আরও জানিয়েছে, গত বছর একই সময়ের তুলনায় এখন প্রতি কেজি চাল পাঁচ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে আটা-ময়দা ১০-১৫ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের এই সময়ের তুলনায় এখন প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ৩৬ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ২৫ টাকা ও পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ১৪৫ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ভোজ্যতেলের মধ্যে প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েল ৩৬ টাকা ও পাম অয়েল সুপার ৩৫ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে।

টিসিবি সূত্র আরও জানায়, গত বছর এই সময়ের তুলনায় এখন প্রতি কেজি বড় দানার মসুর ডাল ৩০ টাকা, মাঝারি দানার মসুর ডাল ২০ টাকা ও ছোট দানার মসুর ডাল ১০ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি অ্যাঙ্কর ডাল ও ছোলা পাঁচ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের এই সময়ের তুলনায় এখন প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২০ টাকা, হলুদ ৭০ টাকা, আদা ২০ টাকা, গরুর মাংস ২০ টাকা, খাসির মাংস ৫০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৫ টাকা, গুঁড়া দুধ ৪০-৫০ টাকা, চিনি ১০ টাকা, লবণ পাঁচ টাকা এবং প্রতি হালি (৪ পিস) ফার্মের ডিম ১০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।

জানতে চাইলে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, অসাধুদের কারসাজির কারণেই মূলত এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। অনেকবার সিন্ডিকেট চিহ্নিত হলেও কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হয়নি। ফলে নানা ইস্যুতে গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করে তুলছে। তিনি বলেন, ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণে দেশে বেশ কিছু আইন আছে, সেসব আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি ভোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে। রোজা উপলক্ষ্যে বা করোনা সংক্রমণ বাড়ার জন্য ১০ দিনের পণ্য এক দিনে কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক ড. এমকে মুজেরি বলেন, যে কোনো ব্যক্তিগোষ্ঠীর হাতে বাজারের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা চলে গেলে ভোক্তার স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়। তাই ভোক্তার সুরক্ষা দিতে হলে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের দরকার প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া। কিন্তু দেশে সেটি হচ্ছে না। কিছু ব্যক্তি-গোষ্ঠীর হাতেই নিত্যপণ্যের নিয়ন্ত্রণ। এরা কারসাজি করলে তখন সরকারের আর করার কিছু থাকে না। তিনি মনে করেন, মুক্তবাজার অর্থনীতি থাকবে। কিন্তু তার মানে এই নয়, এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের যা খুশি তাই করার সুযোগ পাবে। বিশ্বের অনেক দেশে মুক্তবাজার অর্থনীতি থাকলেও সরকারের হাতে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও থাকে। বাংলাদেশেও এ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রাখতে হবে। এর জন্য দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর মনিটরিং সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। দেশের প্রেক্ষাপটে ভোক্তার স্বার্থ রক্ষা করা এখন দুরূহ ব্যাপার বলেই মনে হচ্ছে।

গত বুধবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়নে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, রমজানে সরকার নির্ধারিত দ্রব্যমূল্য ঠিক রাখতে কঠোরভাবে তদারকির জন্য জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডিসিদের বলেছি-সামনে রমজান মাস আসছে। কিছু কিছু জিনিসের দাম আমরা ঠিক করে দেই। সেগুলো কঠোরভাবে তদারকি করতে হবে। সে সময় যেন তারা খুব শক্ত ভূমিকায় থাকেন, কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেন। তিনি বলেন, ডিসিদের ওপর আমাদের অনেকখানি নির্ভরতা আছে। জিনিসপত্র যখন মফস্বল থেকে আসে-চাঁদাবাজিতে যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, দাম যাতে না বাড়ে, মধ্যস্বত্বভোগী যাতে কমিয়ে আনা যায়, কৃষক যাতে ন্যায্য দাম পায়-এসব ব্যাপারে তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে।

রাজধানীর খুচরা বাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোমবার প্রতি কেজি সরু চাল ৬০-৭০ টাকা বিক্রি হয়েছে। মোটা চাল প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৪৫-৫০ টাকা। প্রতি কেজি প্যাকেটজাত আটা ৪৫ ও ময়দা ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১৪৩-১৫০ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১৬৫ টাকা। পাশাপাশি ছোট দানা মসুর ডাল ১২০, মাঝারি ১১০ ও বড় দানার মসুর ডাল ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৩৫ ও আমদানি করা পেঁয়াজ ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেশি হলুদ ২২০ টাকা, জিরা ৪০০ টাকা, রুই মাছ ৩৫০ টাকা কেজি, প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬০০ টাকা, খাসির মাংস ৯০০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৬৫ টাকা, দেশি মুরগি ৪৫০ টাকা, গুঁড়া দুধ সর্বোচ্চ ৬৮০ টাকা, চিনি ৮০ টাকা, প্যাকেটজাত লবণ ৩৫ টাকা ও প্রতি হালি ফার্মের ডিম ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর নয়াবাজারে পণ্য কিনতে আসা নূরুন্নাহার অভিযোগ করেন, সরকার ভোক্তার দিকে না তাকিয়ে ব্যবসায়ীদের দিকে তাকাচ্ছেন। পণ্যের দাম কমানোর দিকে নজর না দিয়ে সরকার মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের ভোক্তা ঠকাতে সুযোগ দিচ্ছে। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ালেও বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। যার কারণে বাজারে সব ধরনের পণ্যর দাম বেড়েছে। কষ্ট হচ্ছে আমাদের মতো ভোক্তার।


   আরও সংবাদ