ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

গ্রাহকভেদেও নীতি সহায়তায় বড় ছাড়

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারী, ২০২২ ১৪:৫৪ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৬৮ বার


গ্রাহকভেদেও নীতি সহায়তায় বড় ছাড়

করোনাকালীন শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কার্যক্রম সচল রাখতে নীতি সহায়তায় বিশেষ ছাড়ের পাশাপাশি গ্রাহকভেদেও বড় ছাড় দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আওতায় ঋণের কিস্তি পরিশোধে বাড়তি সময়, প্রয়োজনের চেয়ে কম কিস্তি নিয়ে ঋণ নিয়মিত রাখা, বিভিন্ন নীতি সহায়তা একাধিকবার পাওয়া, এলসির পণ্য ও রপ্তানি আয় দেশে আনার বাড়তি সময় দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ঋণের শর্ত পুরোপুরি পরিপালনে ব্যর্থ হলেও বিশেষ ক্ষেত্রে ঋণ ছাড় করছে।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে ছন্দপতন ঘটেছে। এ কারণে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ কারণে ব্যাংক নীতিমালার আওতায় থেকে ব্যাংক অনেক ছাড় দিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সচল রাখার সুযোগ দিচ্ছে। কেননা এই সময়ে সুযোগ না দিলে তারা প্রতিষ্ঠান চালু রাখতে পারবে না। সব দেশেই এটি দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার সেগুলো আদায় করে নেওয়া হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, করোনাকালীন অর্থনৈতিক ক্ষতি যথাসম্ভব ক্ষতি কমিয়ে রাখার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ কৌশল নিয়েছে। সব শিল্প প্রতিষ্ঠান সচল থাকলে এবং যেসব প্রতিষ্ঠান চালুর অপেক্ষায় রয়েছে সেগুলোকে দ্রুত চালু করা সম্ভব হলে একদিকে যেমন কর্মসংস্থান বাড়বে, তেমনি বাড়বে উৎপাদন। কর্মচ্যুত হওয়ার প্রবণতা কমবে।

করোনার ক্ষতি মোকাবিলায় দ্বিতীয় দফায় প্রণোদনা প্যাকেজগুলোতে অর্থ বরাদ্দ করে চালু রাখা হয়েছে। বৈদেশিক খাতের চারটি প্যাকেজের মেয়াদ আগামী জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এর বাইরে গিয়ে গ্রাহকভেদে প্রয়োজন অনুসারে আরও ছাড় দেওয়া হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানের ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে জাল-জালিয়াতি বা মানি লন্ডারিংয়ের মতো অপরাধ করলে ওই প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে সাধারণত ঋণ ছাড়সহ অন্য কোনো সুবিধা দেওয়া হয় না। কিন্তু করোনার কারণে এই নীতিমালাটিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক শিথিলভাবে প্রয়োগ করছে।

বেসরকারি খাতের স্টাইল ক্রাফট শর্ত পরিপালনে ব্যর্থ হলেও তাদের ঋণ ছাড়ের অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অ্যাসোল ফেব্রিক্সের নির্ধারিত কিস্তির চেয়ে কম ঋণ নিয়েও তা নিয়মিত রাখার সুযোগ দিয়েছে। অ্যানন টেক্সের ঋণের ক্ষেত্রে জাল-জালিয়াতি ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে প্রমাণিত হলেও ঋণ নবায়নের বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি এখনো শর্ত পালন করতে পারেনি। তবে কিছু ঋণ নবায়ন করে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

ঋণ জালিয়াতির দায়ে অভিযুক্ত ক্রিসেন্ট গ্রুপ অন্য কোম্পানির নামে সুবিধা নিয়ে সীমিত পর্যায়ে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রেখেছে। ঋণ জালিয়াতির দায়ে অভিযুক্ত বিসমিল্লাহ গ্রুপ খেলাপি ঋণ নবায়নের শর্তে নতুন ঋণ চেয়েছে। কিন্তু শর্ত পালন করতে না পারায় তাদের ঋণ নবায়ন হয়নি এখনো। তবে অন্য ব্যবস্থাপনায় তাদের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো সচল রয়েছে। জেকে এক্সেসরিজ নামের একটি নতুন প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের শর্ত বাস্তবায়ন করতে পারেনি বলে নতুন ঋণ ছাড় বন্ধ রাখা হয়েছিল।

সম্প্রতি শর্ত সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠানটি চালু করতে ছাড় দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান রপ্তানির মূল্য দেশে আনতে না পারলেও তাদের নতুন ঋণ দিয়ে রপ্তানির সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

ছোট আকারের শতাধিক গার্মেন্টের ক্ষেত্রে নতুন ঋণে ছাড় দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের ঋণেও বড় ছাড় এখনো দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ ছাড়ের পরও গ্রাহক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে আদায় করে নিচ্ছে। কিন্তু গ্রাহককে খেলাপি না করে নতুন ঋণের সুযোগ দিচ্ছে।

প্রচলিত নিয়মে প্রণোদনার ঋণ ও অন্যান্য ছাড় এক দফা ভোগ করছে দ্বিতীয় দফায় আর করা যাবে না। এ ক্ষেত্রেও ছাড় দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশেষ করে এলসির দেনা পরিশোধ করার পরও যেসব পণ্য দেশে আনা সম্ভব হয়নি সেগুলো দেশের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।

এছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের প্রণোদনার আওতায় একাধিকবার ঋণ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। প্রণোদনার অর্থ যারা অপব্যবহার করেছেন সেগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ঋণকে শিল্পের কাজে ব্যবহারে বাধ্য করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, নির্ধারিত সময়ের পর পরিদর্শনের সময়ও যদি কোনো গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের তথ্য পাওয়া যায় তাকেও বিশেষ বিবেচনায় নেওয়ার জন্য নির্দেশনা রয়েছে। কারণ এখন কিস্তি দিতে না পারলে খেলাপি করা হলে প্রতিষ্ঠানটি সচল রাখা কঠিন হবে। এজন্য যথাসম্ভব খেলাপি না করার দিকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজর থাকবে।

সূত্র জানায়, এসব ছাড় দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকভেদে বা ‘কেস টু কেস’ ভিত্তিতে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। গড়ে এসব সুবিধা সবাইকে দেওয়া হচ্ছে না। কেবল যেসব প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না তাদেরই এসব সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ব্যবসায়ীরা এখন বড় দুর্যোগের মধ্যে আছে। এ সময়ে সহায়তা না পেলে দাঁড়াতে পারবে না অনেকে। যে কারণে যারা ভালো ব্যবসা করে, অতীত রেকর্ড ভালো তাদের সব রকম সুবিধা দেওয়া উচিত। তাহলে করোনার নেতিবাচক প্রভাব কম পড়বে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী গত ডিসেম্বরের মধ্যে কিস্তির ২৫ শতাংশ পরিশোধ করলে খেলাপি করা হবে-এ মর্মে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। সেটি মৌলিকভাবে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত শিথিল করেছে। ওই সময়ে যারা ঋণ পরিশোধ করেছে তাদের লেনদেন গত ৩১ ডিসেম্বরের লেনদেন হিসাবে গণ্য করে খেলাপি করা হবে না। এরপরও যারা ঋণের কিস্তি জমা দিয়েছে তাদেরও শিথিলভাবে বিবেচনা করছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকেও এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তবে প্রান্তিক কৃষক, অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে এ নীতিমালায় আরও ছাড় দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ছোট উদ্যোক্তা ও কৃষকদের ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতার কারণে খেলাপি না করে তাদের ছোট ছোট ঋণ দেওয়া হবে। কেননা করোনার এবারের সংক্রমণে এ খাতে যাতে কোনো বড় ক্ষতি না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।


   আরও সংবাদ