ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ ০৮:৫৯ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪২৭ বার
চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রতিবার বাজেটে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে সংশোধনের রেওয়াজ থাকলেও এবার ব্যতিক্রম।
ওমিক্রনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই ৮ অর্থবছর পর এবার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়নি। যদিও অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) রাজস্ব আদায়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি আশার আলো দেখাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, গত ২২ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অর্থ মন্ত্রণালয়ে বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অর্থনীতির সার্বিক সূচক নিয়ে আলোচনার পর রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত সপ্তাহে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে এনবিআরকে রাজস্ব আদায়ের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করতে নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
তথ্যমতে, বাজেটে ঘোষিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ও রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্থবছরের মাঝপথে এসে কমানো হয়। এটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। এনবিআরও সে অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা নিয়ে থাকে। সর্বশেষ ২০১২-১৩ অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়নি। তার আগে ২০০১-০২ এবং ২০০২-০৩ অর্থবছরে কমানো হয়নি। এরপর প্রতি অর্থবছরেই লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে।
এনবিআরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিবছরই অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা চাপিয়ে দেওয়া হয়। বাস্তবতার নিরিখে কখনোই এটি নির্ধারণ করা হয় না।
ক্রমবর্ধমান এ লক্ষ্যমাত্রা আদায়ে কর্মকর্তাদের হিমশিম খেতে হয়। বাধ্য হয়েই ব্যবসায়ীদের চাপ দিতে হয়। এতেই বাধে বিপত্তি। তখন ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন মহলে হয়রানির অভিযোগ করা শুরু করেন। ব্যবসাবান্ধব রাজস্ব কাঠামো নির্ধারণ করতে চাইলে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে এনবিআরের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, বছরের মাঝপথে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা কমানো একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা কমানো হোক বা অপরিবর্তিত রাখা হোক-এনবিআর কখনোই সেটা অর্জন করতে পারবে না। এবার অন্তত ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি থাকতে পারে। তিনি আরও বলেন, এনবিআরের বর্তমান কাঠামো দিয়ে এত বিশাল লক্ষ্যমাত্রা কখনোই পূরণ সম্ভব নয়। এনবিআরের সে সক্ষমতা নেই। বড় লক্ষ্য পূরণে যে ধরনের সংস্কার প্রয়োজন সেটা করা হচ্ছে না বলে মনে করেন তিনি।
পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ বলেন, বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে পদ্ধতিগত দুর্বলতা আছে। কখনোই অর্থনীতিকে বিশ্লেষণ করে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় না।
যার কারণে এনবিআর লক্ষ্যমাত্রা পূরণও করতে পারে না। তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছর রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি আছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না বলে মনে হয়। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি শুল্ক আদায় বাড়তে পারে। কিন্তু করজাল বৃদ্ধি করতে না পারলে ভ্যাট ও আয়কর আদায় দুরূহ হবে।
প্রথমার্ধে প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক :
ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে ১৬ দশমিক ৮২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এটি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আশার আলো দেখাচ্ছে। এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, অর্থবছরের শুরুতে রাজস্ব আদায়ে ঢিলেঢালা ভাব থাকে। অর্থবছরের শেষ তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) সেটা বৃদ্ধি পায়। এবার ওমিক্রন সংক্রমণ বেড়ে গেলেও অর্থনীতি স্বাভাবিক থাকায় ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
তথ্যমতে, অর্থবছরের প্রথমার্ধে এক লাখ ৪৩ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে এক লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকা। লক্ষ্য পূরণ না হলেও প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৮২ শতাংশ। ৫২ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা লক্ষ্যের বিপরীতে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৪৮ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। ওমিক্রন সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন ও বিপণন কমে যাওয়ায় ভ্যাট আদায়ে এর প্রভাব পড়ে। আলোচ্য সময়ে আয়কর আদায় হয়েছে ৩৯ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা। এ সময় লক্ষ্য ছিল ৪৩ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা। আমদানি পর্যায়ে শুল্ক আদায় সবচেয়ে বেশি কমেছে। ৪৭ হাজার ২৯৭ কোটি টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪১ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা।
প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ভ্যাট এক লাখ ২৭ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা, আয়কর এক লাখ ৮ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা, শুল্ক ৯৬ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর বাবদ এক হাজার ৫০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়।