ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৭৩ বার
প্রয়োজনীয় ব্যয়নির্বাহে মানুষ এখন হাতে নগদ টাকা রাখছে বেশি। গত ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) এ হার বেড়েছে প্রায় ১২৬ শতাংশ। বিপরীতে গত মাসে ব্যাকিং খাতে সামগ্রিক আমানতের হার কমেছে ৪৬.৫৯ শতাংশ। বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের প্রভাবে মানুষের আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। কিন্তু ব্যাংক আমানতের সুদহার তুলনামূলক কম হওয়ায় ব্যাংকে টাকা রাখার প্রবণতা কমে গেছে। বাড়ছে হাতে নগদ টাকা রাখার প্রবণতা। হাতে নগদ টাকা বেশি থাকার অর্থ হলো ব্যাংকের আমানত কমে যায়, কমে যায় বিনিয়োগ সক্ষমতা। এর প্রভাব পড়ে কর্মসংস্থানে।
মুদ্রা ও বিনিময় হার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকবহির্ভূত টাকার স্থিতি বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা, যা এক বছর আগেও অর্থাৎ আগের বছরের ডিসেম্বরে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮৭ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। আর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে যা ছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মানুষের হাতে একদিকে নগদ টাকার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে, বিপরীতে কমে যাচ্ছে ব্যাংকিং খাতে সামগ্রিক আমানতের পরিমাণ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সামগ্রিক আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ৪৬ দশমিক৫৯ শতাংশ, যেখানে আগের অর্থবছরের একই সময়ে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৫১ দশমিক ১২ শতাংশ।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, আমানতের সুদহার এখন অনেক কমানো হয়েছে। গড়ে ৫ থেকে ৬ শতাংশের বেশি মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে না। আর এ মুনাফা পাওয়ার জন্য নানা রকম ভ্যাট ট্যাক্স কেটে রাখা হয়। সবমিলে প্রকৃত আয় মূল্যস্ফীতির নিচে নেমে যায়। আর মূল্যস্ফীতির নিচে নামার অর্থ হলো মূলধন কমে যাওয়া। অর্থাৎ লোকসানের মুখে পড়া। এ কারণে মানুষ যেটুকু আয় করছে তার একটি অংশ ব্যয় করছে। কিছু অংশ হাতে রাখছে। এটা চলতে থাকলে আর বিনিয়োগের চাপ বেড়ে গেলে ব্যাংকগুলোর তারল্যসঙ্কট দেখা দিতে পারে। এতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। কাক্সিক্ষত হারে বাড়বে না কর্মসংস্থান।
জানা গেছে, দৈনন্দিন জীবনের ব্যয়নির্বাহ বা পণ্য ও সেবা নেয়ার জন্য প্রতিদিনই কিছু না কিছু টাকা খরচ করতে হয়। এর বাইরে বাড়তি টাকা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা থাকে। দেশের মোট প্রচলনে থাকা মুদ্রা থেকে ব্যাংকে জমানো টাকা বাদ দিয়ে লোকজনের হাতে কত টাকা আছে সেই তথ্য বের করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, ব্যাংকে আমানত রেখে এখন খুব বেশি সুদ পাওয়া যায় না। বরং জমানো টাকার ওপর ভ্যাট ও আবগারি শুল্ক পরিশোধের পর যে পরিমাণ মুনাফা হয়, মূল্যস্ফীতি তার থেকে বেশি। ফলে ব্যাংকে আমানত রেখে তা থেকে প্রকৃত মুনাফা কমে যাচ্ছে। এ কারণে টাকা না জমিয়ে ভোগে ব্যয় করছেন তারা।
আমানতের হার তলানিতে নেমে যাওয়ায় সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আমানতের সর্বনিম্ন সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে আমানতের সুদের হার মূল্যস্ফীতির নিচে হবে না। তার আগে আমানতের সুদহার ৪ শতাংশে নেমে এসেছিল। সে হিসাবে এখন আমানতের সুদহার সাড়ে ৫ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু নানারকম ভ্যাট ট্যাক্স কাটার পর প্রকৃত মুনাফা আরো কমে যাচ্ছে। যেমন, যাদের কর শনাক্ত নম্বর বা টিআইএন আছে তাদেরকে মুনাফার ওপর ১০ শতাংশ কর পরিশোধ করতে হয়। আর যাদের টিআইএন নেই তাদেরকে ১৫ শতাংশ কর দিতে হয়। বছরের যেকোনো সময় আমানত ১ লাখ টাকা ছাড়ালে ২০০ টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হয়। আমানত যত বেশি হবে আবগারি শুল্ক তত বেশি হয়। এর পাশাপাশি নানারকম ব্যাংক সার্ভিস চার্জতো রয়েছেই। সবমিলে যে মুনাফা ব্যাংক ঘোষণা করে বাস্তবে এতে তা কমে যায়।
বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, মানুষের ব্যাংকে অধিক হারে টাকা রাখার প্রবণতা বাড়ানোর জন্য প্রকৃত সুদহার মূল্যস্ফীতির ওপরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় সামনে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ করার মতো পর্যাপ্ত অর্থ হাতে থাকবে না। অর্থাৎ ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাবে। কাক্সিক্ষত হারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না, যা দেশের অর্থনীতির জন্য মোটেও ভালো ফল বয়ে আনবে না।