ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ ১১:০৯ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪১৮ বার
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংগঠনে শৃঙ্খলা ফেরাতে মনোযোগ দিয়েছে আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ পেলেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনায় বহিষ্কার ও কমিটি বিলুপ্তের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে অন্যদের কঠোর বার্তা দেওয়া হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল এবং দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়াসহ নানা কারণে তৃণমূলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল সংগঠনগুলো।
আন্দোলন-সংগ্রামের শক্তির উৎস এই সহযোগী সংগঠনগুলোকে ঢেলে সাজাতে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহল থেকেও ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা বলছেন, আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠনগুলোকে সুশৃঙ্খল করে ঢেলে সাজাতে চান তারা।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বৃহস্পতিবার বিকালে বলেন, আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ সংগঠনের সম্মেলনের কাজ আমরা আগেই শুরু করেছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে তা স্থগিত রাখতে হয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারির পরে যদি দেশের করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হয় এবং সরকারি বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া হয় তখন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের মেয়াদোত্তীর্ণ সংগঠনের পাশাপাশি সহযোগী সংগঠনগুলোকেও সম্মেলনের মাধ্যমে ঢেলে সাজানো হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই তা শেষ করা হবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ২০২২ সালের মধ্যেই আমাদের সংগঠনকে নতুন করে ঢেলে সাজিয়ে শক্তিশালী করব। সেসঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ে যেসব ছোটখাটো দ্বন্দ্ব বিভেদ আছে সেগুলো দূর করে আমরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেব।
সহযোগী সংগঠনগুলোও তাদের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, যুবলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ তাদের তৃণমূল গোছানোর কাজ করছে। ছাত্রলীগও তাদের মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলার কমিটি করছে। শিগগিরই ছাত্রলীগের কাউন্সিল হচ্ছে বলেও শোনা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মহিলা লীগ, আওয়ামী যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, তাঁতিলীগ, যুব মহিলা লীগ ও মৎস্যজীবী লীগ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন। এছাড়া জাতীয় শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগ দলটির ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন। আওয়ামী লীগের এই সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর প্রায় সবই অগোছালো।
এর মধ্যে যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, তাঁতিলীগের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটিরও মেয়াদ শেষ। দীর্ঘদিন আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই চলছে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ।
পালটাপালটি বহিষ্কারের পরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে এক সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জাতীয় শ্রমিক লীগের শীর্ষ দুই নেতা। যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ থাকলেও সারা দেশের বেশির ভাগ জেলা-উপজেলা এবং ওয়ার্ড ইউনিয়ন কমিটিরই মেয়াদ নেই।
সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা, নেতৃত্বদানে অযোগ্যতা এবং অদক্ষতার পরিপ্রেক্ষিতে সিরাজগঞ্জ জেলা যুবলীগের কমিটি বৃহস্পতিবার বিলুপ্ত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মাইনুল হোসেনের সিদ্ধান্তে সিরাজগঞ্জ জেলা যুবলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এর আগে ৯ ফেব্রুয়ারি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে সিরাজগঞ্জ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল হককে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এ ছাড়া ৭ জানুয়ারি একই অভিযোগে পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি মতিউর রহমান মতিন এবং সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম রাজুকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এর আগে সিটি নির্বাচন কেন্দ্র করে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ৮ জানুয়ারি বিলুপ্ত করা হয় নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগ কমিটি। সিটি নির্বাচনের দিন ১৬ জানুয়ারি বিকালেই বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি। ১৮ জানুয়ারি বিলুপ্ত করা হয় মহানগর শ্রমিক লীগের কমিটি।
নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করার অভিযোগে এই সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এছাড়া অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া এবং বিদ্রোহীদের পক্ষে কাজ করার অভিযোগে অনেকের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে কেন্দ্রীয়ভাবেও যেসব সংগঠনে শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে তাও দূর করতে চায় আওয়ামী লীগ। জাতীয় শ্রমিক লীগের শীর্ষ দুই নেতা সভাপতি নুর কুতুব আলম মান্নান ও সাধারণ সম্পাদক আজম খসরুর মধ্যে দীর্ঘদিন বিরোধ ছিল। একসঙ্গে বসে এতদিন কোনো অনুষ্ঠান করেননি তারা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা কয়েকবার হুঁশিয়ারি দিলেও তারা চলছিলেন আগের মতোই।
সম্প্রতি সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দুজন দুজনকে পালটাপালটি বহিষ্কারও করেন। এই ঘটনার পরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দায়িত্ব দেওয়া হলে ওই দুই নেতাকে ডেকে নিয়ে এক টেবিলে বসান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি দুই নেতার কাছে তাদের সমস্যার কথা শোনেন। পরে তিনি কঠোরভাবে সতর্ক করে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেন। পরে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যৌথ বিবৃতি দেন তারা।
জানতে চাইলে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সবাই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। কোনো কোনো জায়গায় কারো কারো সঙ্গে কিছু বিরোধ রয়েছে। আমরা এগুলো দূর করার চেষ্টা করছি। জাতীয় শ্রমিক লীগ অনেক বড় সংগঠন। এখানে সভাপতি-সম্পাদকদের মধ্যে কিছু সমস্যা ছিল। পরে আমরা তাদের নিয়ে বসে তাদের কথা শুনেছি। তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে বলেছি।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা বলেন, একসময় আওয়ামী লীগের আন্দোলন-সংগ্রামে শক্তির অন্যতম উৎস ছিল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রের পাশাপাশি তারা সংগঠিত ছিল। আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মাঠে থাকত। কিন্তু এখন সেগুলো যেন আওয়ামী লীগের জন্য একটা দায় হয়ে পড়েছে। তারা আলাদা আলাদা বলয় তৈরি করছে। বিশেষ করে বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্যই শুধু এ ধরনের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নাম আসছে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের বিগত জাতীয় সম্মেলনের আগে মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী সংগঠনগুলোকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু করোনার কারণে তা সম্ভব হয়নি। আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন এবং দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এ সংগঠনগুলোর সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। একই সঙ্গে এসব সংগঠনের নিজেদের মধ্যকার এবং আওয়ামী লীগ বা দলের সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে বিরোধ থাকলেও সেগুলো দূর করা হবে।
আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বেচ্ছাসেবক লীগ গঠন করেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসাবে কাজ করার জন্য। পাশাপাশি তারা রাজনৈতিক সংগঠন হিসাবে কর্মসূচিও পালন করবে। এখানে যদি সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ কেউ করে তাহলে তো সেটা সংগঠনের নীতিবিরোধী হয়ে যায়। এ কারণে আমরা শৃঙ্খলার বিষয়গুলো সব সময় গুরুত্ব দিয়ে দেখি।
বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপি বলেন, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে আমরা সারা দেশে কৃষক লীগকে সুশৃঙ্খল করে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করছি। আমরা দেশকে ১০টা জোনে ভাগ করে সহ-সভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দায়িত্ব দিয়ে কমিটি করে দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, কৃষক লীগে আমরা চেষ্টা করেছি একেবারে ওয়ার্ড পর্যায় থেকে সম্মেলনগুলো করতে।
সূত্র : যুগান্তর