আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ ১০:৪৬ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩৮৯ বার
প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে কাকডাকা ভোরে রস সংগ্রহ করেন গোলগাছিরা। এরপর শুরু হয় রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরির কাজ। গাছের নাম গোল হলেও আকৃতি অনেকটা ছোট নারিকেল গাছের মতো। নোনা জল মাটি ছাড়া গোল হয় না। গোল গাছের শরীরেও নোনতা স্বাদ। কিন্তু এই গাছ থেকে মিষ্টি-গাঢ় রস হয়। রস ছাড়াও গাছের নিম্ন দিয়ে নিউজপ্রিন্ট, হার্ডবোর্ড ও আয়োডিনযুক্ত লবণ উৎপাদন করা যায়।
উপকূলের কৃষকেরা প্রাচীনকাল থেকেই গোলগাছের এই রস দিয়ে গুড় তৈরি করে আসছেন। ভাদ্র-আশ্বিন মাসে গোল গাছে একটি বা দু’টি লম্বা ছড়ায় ফল ধরে। খেজুর গাছের মতো কাধিতে জন্মানো এ ফলকে গাবনা বলে। রস সংগ্রহকারী শিয়ালীরা ভালো মানের রস অহরণের জন্য কার্তিক মাসের শুরুতেই হৃষ্টপুষ্ট ছড়াটি রেখে ফলসহ বাকি অংশ কেটে ফেলেন। ছড়াটি বিশেষ পদ্ধতিতে রস সংগ্রহের উপযোগী করে তোলা হয়। অগ্রহায়ণ থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত দিনে দু’বার মাটির হাঁড়ি পেতে রস সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত রস ফুটিয়ে গুড় তৈরি করা হয়। গাবনা বা গোলগাছের বীজ নোনা জমিতে পুঁতে রাখলেই চারা গজায়। গোলগাছের উচ্চতা প্রায় ১৫ থেকে ২০ ফুটের বেশি। ম্যানগ্রোভ বা উপকূলীয় অঞ্চলে গোল গাছ প্রাকৃতিকভাবে জন্ম হয়।
রস থেকে গুড় তৈরি ছাড়াও কেটে ফেলা গাছের ডান্ডি জ¦ালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ঘরের ছাউনির জন্য গোলপাতাও বিক্রি হয় আলাদাভাবে। গোল চাষের মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করতে হয় না। সহজলভ্য এবং ব্যয় কম হওয়ায় চাষাবাদ অত্যন্ত লাভজনক। গাছের একটি ছড়ায় ১০০ থেকে ১৫০ বীজ থাকে। গোলগাছ চাষে রাসায়নিক সার, কীটনাশক প্রয়োজন হয় না। এ ছাড়া গোলের গুড় কৃমিনাশক বলে অনেকে মন্তব্য করেন।
সুন্দরবনসহ দক্ষিণ উপকূলের বিভিন্ন স্থানে গোলগাছ রয়েছে। তবে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া, কুয়াকাটা, রাঙ্গাবালি, গলাচিপা, দশমিনা, বাউফল, বরগুনার আমতলী, তালতলী, পাথরঘাটা, ভোলা ও খুলনা জেলার বিস্তীর্ণ এলাকাসহ চরাঞ্চলের গোলগাছ একধিক বাগান রয়েছে। অনেক গাছের মালিক প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রস সংগ্রহের জন্য চুক্তিতে লোক নিয়োগ দিয়েছেন। চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা মৌসুমজুড়ে রস সংগ্রহ ও গুড় উৎপাদনের কাজ করে।
নীলগঞ্জ ইউনিয়নের নবীপুর গ্রামের গিয়ে দেখা যায়, শিখা রানী হাওলাদার তাফালে খড়কুটা দিয়ে আগুন জ¦ালিয়ে ঢোঙ্গায় রস দিয়ে গুড় তৈরি করছে। তাকে জিজ্ঞাস করলে তিনি বলেন, প্রতি বছর আমরা গুড় বানাই। গোলচাষি সজল বলেন, এখন বাজারে গিয়ে গুড় বিক্রি করতে হয় না। একশ্রেণীর খুচরা বিক্রেতা বাড়ি এসেই গুড় নিয়ে যান। প্রতি কেজি ৮০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গুড় ক্রেতা আনসার উদ্দিন বলেন, ‘অন্য গুড়ের চেয়ে আলাদা স্বাদ।’
কলাপাড়া বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা ছালাম বলেন, তিন লাখ চারা লাগানো হয়েছে। এতে ব্যাপক সফলতা পেয়েছি। এ গাছ উপকূলীয় এলাকার প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি স্থানীয়দের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। গোলগাছ শুধু রস বা পাতা দেয় না, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকেও উপকূল রক্ষা করে। গোলগাছ নিয়ে আমরা ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছি।
এ ব্যাপারে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাগ্রিকালচার বিভাগের প্রফেসার ডা: মাইনুল ইসলাম বলেন, গোলগাছের গুড়ের ব্যাপক চাহিদা। এ রসের পিঠা বা পায়েস অতি সুস্বাদু হয়। এ গাছ লোনা পানিতে ভালো জন্মায়। কিন্তু উপকূলে বেড়িবাঁধ হওয়ায় এ জাতীয় উদ্ভিদ বেশির ভাগ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতে হলে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে অন্যান্য গাছের পাশাপাশি ব্যাপকভাবে গোলগাছ চাষ করা প্রয়োজন।