ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ ১৮:২৪ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৪১ বার
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেছেন, বিডিআর বিদ্রোহে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের ফল।
তিনি বলেন, ‘এটি (বিডিআর বিদ্রোহ) শুধু একটি বিদ্রোহ ছিল না কারণ এর পেছনে একটি গভীর ষড়যন্ত্র ছিল। এর প্রধান কারণ ছিল সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দেয়া।’
শুক্রবার পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ১৩তম বার্ষিকী উপলক্ষে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্মরণে বনানী কবরস্থানে স্থাপিত স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের পেছনে কারা ছিল, তার সঠিক তদন্ত প্রতিবেদন জাতি এখনও পায়নি এবং সেনাবাহিনীর তদন্তের কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা এত বছর পরেও তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটন করতে পারিনি। আমরা এখনও জানি না যে এর পেছনে কারা ছিল এবং কেন এই ঘটনাটি ঘটল! আমরা বিশ্বাস করি যে এই ঘটনার পিছনে একটি ষড়যন্ত্র রয়েছে।’
ফখরুল বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সমগ্র জাতির জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক ও ভয়ানক দিন, কারণ এই দিনে বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ সেনাবাহিনীর ৫৭ জন কর্মকর্তা নিহত হন।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধেও আমরা এত সেনা কর্মকর্তা হারাইনি।
বিএনপির এই নেতা বিডিআর বিদ্রোহে এত প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
এর আগে মির্জা ফখরুল দলীয় নেতা ও সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে কবরস্থানে গিয়ে স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং নিহত সেনা কর্মকর্তাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন।
এ সময় বিএনপির প্রতিনিধি দলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ফজলে এলাহী আকবর, হাসান নাসির, কামরুজ্জামান, মিজানুর রহমান, সারোয়ার হোসেন, এম এ হাসান, কোহিনুর আলম নূর ও আজিজ রেজা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সপ্তাহ চলাকালে ২৫ ফেব্রুয়ারি সশস্ত্র বিদ্রোহ করেন বাহিনীর কয়েক’শ সদস্য। তাদের হাতে পিলখানা সদরদপ্তরে নিহত হন ৫৭ জন সেনাকর্মর্তাসহ ৭৪ জন।
পরে সরকারের সঙ্গে বিদ্রোহীদের আলোচনা শেষে পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারি অস্ত্র, গুলি ও গ্রেনেড জমাদানের মধ্য দিয়ে বিদ্রোহের সমাপ্তি হয়।
ঘটনার জেরে আধা সামরিক বাহিনী বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) নাম পরিবর্তন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) রাখা হয়।
হত্যা, লুটপাট ও বিদ্রোহের এ ঘটনায় মোট ৫৮টি মামলা করা হয়। এর মধ্যে হত্যার এক মামলায় দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ৪২৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং ২৭৭ জনকে দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ২৬২ জনকে তিন মাস থেকে ১৯ বছর করে কারাদণ্ড এবং বিএনপির প্রয়াত নেতা নাসিরুদ্দিন আহমেদ পিন্টু ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।
অন্যদিকে বিদ্রোহের জন্য করা ৫৭ মামলায় বিডিআরের মোট পাঁচ হাজার ৯২৬ জন সদস্যের বিভিন্ন মেয়াদে (চার মাস থেকে সাত বছর) কারাদণ্ড দেয়া হয়।
২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি বহুল আলোচিত পিলখানা হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। রায় প্রদানকারী তিন বিচারপতির স্বাক্ষরের পর ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠার এ রায়টি প্রকাশ করা হয়।
রায়ের দৈর্ঘ্য এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যার দিক থেকে এটিই বাংলাদেশের ইতিহাসে বৃহত্তম রায়।