ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

খেলাপি কমাতে রূপালী ব্যাংকে নতুন ঋণ পদ্ধতি

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ ১২:৪৬ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৯১ বার


খেলাপি কমাতে রূপালী ব্যাংকে নতুন ঋণ পদ্ধতি

খেলাপি ঋণ কমাতে উদ্ভাবনী ব্যাংকিংয়ের দিকে হাঁটছে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ তিন স্তরের একটি ঋণ-মডেল উদ্ভাবন করেছেন। এটি বাস্তবায়ন হলে ঋণঝুঁকি অনেকটা কমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। লাগাম টানা যাবে ব্যাংকের খেলাপির হারে। রূপালীর এমডি এই ঋণ মডেলের নাম দিয়েছেন ‘থ্রি টায়ার লেন্ডিং সিস্টেম’।  

এক সাক্ষাতকারে রূপালী ব্যাংকের এমডি বলেন, খেলাপি ঋণ ব্যাংকব্যবস্থার একটি চ্যালেঞ্জ। এটি সামলাতে ঋণব্যবস্থায় পরিবর্তন দরকার। সেটির পরিবর্তন নিয়ে কাজ করছে রূপালী ব্যাংক। থ্রি টায়ার ঋণ পদ্ধতি নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। এই পদ্ধতিতে কাঁচামাল সরবরাহকারী, উৎপাদক ও বাজারজাতকারীদের একই ছাতার নিছে নিয়ে আসা হবে। সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করে একটি প্যাকেজের মাধ্যমে তিন খাতেই ঋণ সরবরাহ করা হবে। ফলে শিল্পোদ্যোক্তা বা বৃহৎ ঋণ গ্রহীতার ওপর চাপ কমে যাবে। এতে কেউ সহজে খেলাপি হবে না। ফলে ব্যাংকের ঋণেও ঝুঁকি কমবে। 

শুধু থ্রি টায়ার লেন্ডিং সিস্টেম নয়, আরও অনেক উদ্ভাবনী ব্যাংকিং করছে রূপালী ব্যাংক। এর মধ্যে রয়েছে শূন্য সুদে কৃষিঋণ, দুগ্ধঋণ প্রভৃতি। উদ্ভাবনীয় ব্যাংকিং সম্পর্কে ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, রূপালী ব্যাংক নাগরিক ও দেশের মাটির প্রতি দায়বদ্ধ। দেশের মানুষের জন্য কাজ করে চলেছে নিরন্তরভাবে। সেই দায়বদ্ধতা থেকে এ দেশের খেটে খাওয়া কৃষকের পাশে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে ব্যাংকটি। আমাদের স্লোগান ছিল ‘মুজিববর্ষে শুভদিন, শূন্য সুদে কৃষিঋণ’। গত দুই বছরে করোনা মহামারির মধ্যে কৃষি ব্যাংক না হয়েও কৃষকের পাশে সবচেয়ে বেশি সহায়ক শক্তি হিসেবে ছিল রূপালী ব্যাংক। 

তিনি বলেন, একজন কৃষক যে পণ্য উৎপাদন করে তার সঠিক দাম পায় না। আবার কৃষিভিত্তিক যে শিল্পগুলো আছে তাদের বেশি দামেই পণ্য কিনতে হয়। কোনো পরিশ্রম না করেই বিশাল মুনাফা লুটে নেয় মধ্যস্বত্বভোগীরা। তাদের হাত থেকে কৃষক ও শিল্পোদ্যোক্তাদের রক্ষা করতে আমরা সরাসরি ঋণ দিচ্ছি। কারখানাকে ঋণ দিচ্ছি কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্য দামে পণ্য কেনার জন্য। এতে কৃষক লাভবান হচ্ছে, শিল্পোদ্যোক্তারও প্রফিট (মুনাফা) মার্জিন বাড়ছে।  

অভিজ্ঞ এই ব্যাংকার বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের সময় যখন আমচাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন তখন তাদের ঋণ দিয়েছে রূপালী ব্যাংক। আমের জুস উৎপাদনকারী কারখানাগুলোকে ঋণ দেওয়া হয়েছে চাষিদের কাছ থেকে নগদ দামে আম সংগ্রহ করার জন্য। এতে দেশের আমচাষিরা ক্ষতি কাটিয়ে উঠে প্রাণ ফিরে পেয়েছেন। এ ছাড়া দেশকে আদায় স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে পার্বত্য এলাকায় আদা-হলুদ চাষিদের স্বল্প সুদে ঋণ দিয়েছে রূপালী। কৃষক আদা কোথায় বিক্রি করবে সেটাও আমরা সহায়তা করেছি। কৃষক সরাসরি বিক্রি করতে পারছে তাদের পণ্য। এই ঋণপণ্যের জন্য আমাদের স্লোগান ‘দেশের পাহাড় জাগল বলে বাংলাদেশ আজ ধন্য, আদা-হলুদ করবে আবাদ সারা দেশের জন্য।’ 

রূপালী ব্যাংকের এমডি বলেন, মহামারির মধ্যে মিল্ক ভিটার মাধ্যমে গরু খামারিদের আমরা ঋণ দিয়েছি। তাদের উৎপাদিত দুধ যাতে মিল্ক ভিটার কাছে সরাসরি বিক্রি করতে পারে সেজন্য আমরা ভূমিকা রেখেছি। তাছাড়া তারা অবিক্রীত দুধ ফেলে না দিয়ে যাতে ঘি বানাতে পারে সেজন্য ঋণ দিয়েছি। এতে করোনাকালে দুগ্ধ খামারিরা পথে বসার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন। দুধের উৎপাদন বাড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যে কাজ করে যাচ্ছেন সেই কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে রূপালী ব্যাংকও সহযাত্রী হয়ে খামারিদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এই ঋণের জন্য স্লোগান ছিল, ‘করোনাকালে দুধ না ফেলে ঘি বানান, দুগ্ধ খাতে জাগুক প্রাণ’। 

ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ সংস্কৃতির জন্য আমাদের জাতিসত্তার ঋণ-অভ্যাসকে দায়ী করে তিনি বলেন, আমরা অভ্যাসগতভাবেই ঋণ পরিশোধ করতে চাই না। মুদি দোকান থেকে বাকি, বন্ধুর কাছ থেকে বা আত্মীয়ের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করতে চাই না। এই যে ঋণ নিয়ে শোধ না করার একটা প্রবণতা এ কারণেই আমাদের অধিকাংশ গ্রাহক ঋণ শোধ করতে চায় না বা শোধ করতে সক্ষম হয় না। তাই খেলাপি সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনতে হলে আমাদের সর্বক্ষেত্রেই ঋণ নিয়ে শোধ না করার প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এজন্য শিক্ষাবিদ, মনোবিদ, সমাজবিদ, রাজনীতিকসহ যারা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন তাদের এগিয়ে আসতে হবে। 

তিনি আরও বলেন, আমাদের এখন ১৪৪টি শাখা পুরোপুরি খেলাপিমুক্ত। নির্দেশ দিয়েছি সব শাখাতে আমানতের ন্যূনতম ৭০ শতাংশ ঋণ দিতে হবে। একই সঙ্গে খেলাপি মুক্ত থাকতে হবে। যারা ঋণের লক্ষ্য পূরণ করে আবার খেলাপিমুক্ত থাকতে পারবেন তাদের আমরা ডায়মন্ড, সিলভার ও ব্রোঞ্জ ক্যাটাগরিতে ভাগ করে পুরস্কৃত করছি। ব্যাংকের কাজ আরও সহজ করতে সাইবার সিস্টেম নিয়েও আমরা সবচেয়ে বেশি কাজ করেছি। সাইবার সিস্টেম নিয়ে কাজ করা ব্যাংকগুলোর মধ্যে আমরা শ্রেষ্ঠ ব্যাংক হিসাবে পুরস্কৃত। গ্রাহকদের আমানত রক্ষার জন্য অত্যাধুনিক সাইবার নিরাপত্তাব্যবস্থা ইনস্টল করেছি। ভবিষ্যতে রূপালী ব্যাংক হবে শ্রেষ্ঠ আর্থিক প্রতিষ্ঠান। 


   আরও সংবাদ