ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৩ মার্চ, ২০২২ ০৯:৪৩ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৪০ বার
কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জের খয়রত গ্রাম। ফাগুনের পাতাঝরা সন্ধ্যা। মাগরিবের নামাজ শেষে ঘরে পড়তে বসেছে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী জাইসি। ঘরের পেছনে বাঁশঝাড়ের কঞ্চিতে বুক মিশিয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল ফটিকজল পাখি। উঠোনে একটি বনবিড়াল ‘ওয়াব’, ‘ওয়াব’ ডেকে দূরে চলে গেল। এমন পরিবেশেই জাইসির নাকে এসে লাগল অপূর্ব একটি মিষ্টি গন্ধ। সৌরভটি চেনা চেনা লাগছে, আবার অচেনাও। এটি কি কামিনী ফুলের ঘ্রাণ?
বইয়ের পাতা বন্ধ করে কিশোর ছেলেটি ঘ্রাণের উৎস খুঁজতে ছিটকিনিটা খুলে ঘরের বারান্দায় আসতেই সৌরভের তীব্রতায় সে আরো চাঙ্গা হয়ে ওঠে। হৃদয় মদির করা সে কী সুরভী! এবার ফুলটিকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে গেল ছেলেটির মন। অবশেষে পূর্ণিমা চাঁদের আলো-আঁধারিতে বুঝতে পারে, সুগন্ধ আসছে উঠোনে থাকা চিরচেনা জাম্বুরা বা বাতাবি লেবুর গাছ থেকে।
এই বসন্তে গাছে থোকায় থোকায় ফুটেছে সাদা পাপড়ির ছোট ছোট ফুল। সন্ধ্যারাতে ফুলগুলোর গায়ে জমে আছে আকাশের চোখের জল, বসন্তের শিশির। ভেজা ফুল থেকেই ছড়িয়ে পড়ছে সৌরভ।
জাইসির বাবা সাংবাদিক, তিনি গুগল সার্চ করে জানান, অম্ল স্বাদযুক্ত অতি পরিচিত বাতাবি লেবু বা জাম্বুরা ফল লেবুজাতীয় ফলের মধ্যে সবচেয়ে বড় জাতের একটি ফল। এর আদিভূমি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। ধারণা করা হয়, বাটাভিয়া (বর্তমান ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা) থেকে এসেছে বলে এর নাম বাতাবি লেবু।
ফুলের গড়নে এটি কামিনীর কাছাকাছি, গন্ধও তাই। তবে জাম্বুরার ফুল সাধারণত সাড়ে চার ইঞ্চি ব্যাসার্ধের হয়। চারটি থেকে পাঁচটি পাপড়ি থাকে ফুলে। জাম্বুরার এই সুন্দর ফুল মানুষের নজর এড়িয়ে গেলেও এর রূপ-গুণের কথা জানে মৌমাছি, প্রজাপতি ও পাখিরা। তাই ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ায় ওরা। পরাগায়নও ঘটে ওদের মাধ্যমে।
জাম্বুরার ইংরেজি নাম চড়সবষড় আর বৈজ্ঞানিক নাম ঈরঃৎঁং সধীরসধ। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর এবং উদ্ভিদ গবেষক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, এটি নবীন বসন্তের আহ্বানকারী ফুল। এর সুগন্ধী অপূর্ব।
কিশোরগঞ্জের বিশিষ্ট ডেন্টাল সার্জন ও বৃক্ষপ্রেমিক ডা: ফারুক আহমেদ বলেন, জাম্বুরা ফলটাকে মানুষ যতটা চেনে, এর ফুল ততটা চেনে না। আমি মাঝেমধ্যে মানবদেহকে সুস্থ ও রোগমুক্ত রাখতে এ ফলটির জুড়ি মেলা ভার।