ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৯ মার্চ, ২০২২ ১১:২২ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৬০৮ বার
ঋণ পরিশোধে শিথিলতা থাকার পরও বিদায়ী বছরে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে আরো প্রায় ৫০ হাজার ৩২৫ কোটি টাকার ব্যাংকঋণ খেলাপি ঋণের ঘরে পৌঁছানোর আগের ধাপে (এসএমএ) অবস্থান করছে। আগামী জুনের মধ্যে আদায় না হলেই সংশ্লিষ্ট ঋণখেলাপি ঋণের নিম্নস্তর অর্থাৎ নিম্নমানের (এসএস) খেলাপি ঋণের ঘরে চলে যাবে। গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে এক লাখ তিন হাজার ২৭৩ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো ঋণের কিস্তি পর পর ছয় মাস পরিশোধ না হলে ওই ঋণ খেলাপি ঋণে পরিণত। এই খেলাপি ঋণের আগের স্তর হলো এসএমএ অর্থাৎ মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ। এসব মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ ছয় মাস অতিক্রম করলেই তা খেলাপি ঋণে পরিণত হবে। খেলাপি ঋণ আবার তিন ধরনের হয়। ঋণের কিস্তি ছয় মাস অতিক্রম হলেই সেটি খেলাপি ঋণের নিম্নস্তর বা নিম্নমানের খেলাপি ঋণ হয়। ৯ মাস অতিক্রম হলেই ওই ঋণ সন্দেহজনক খেলাপি ঋণে পরিণত হয়। আর এক বছর পার হলেই তা মন্দ বা কুঋণ হয়। এসব ঋণ ব্যাংকিং খাতে আদায় অযোগ্য খেলাপি ঋণ বলা হয়। এ ধরনের ঋণ আদায়ের জন্য সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের বিরুদ্ধে ব্যাংকগুলোর মামলা করার অনুমোদন রয়েছে। জানা গেছে, করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব থেকে ব্যবসায়ীদের কিছুটা রেহাই দেয়ার জন্য গত দুই বছর ধরে আদায়ের শিথিলতা দেয়া হয়েছিল। প্রথম বছর পুরোপুরিই ঋণশ্রেণীকরণ থেকে ব্যাংকগুলোকে অব্যাহতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থাৎ কেউ তার ঋণের এক টাকাও পরিশোধ না করলে খেলাপি করা যাবে না। এ সুযোগ ২০২০ সালের পুরো বছরই ছিল। পরের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে এ শিথিলতা আংশিক তুলে নেয়া হয়। সর্বশেষ বলা হয়, গত ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বকেয়া কিস্তির কেউ শুধুমাত্র ১৫ শতাংশ পরিশোধ করলেই ঋণ নিয়মিত হয়ে যাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নীতিমালা শিথিলের মধ্যেও বিদায়ী বছরে খেলাপি ঋণ আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা। এক লাখ তিন হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মধ্যে ৯১ হাজার কোটি টাকাই মন্দ ঋণ বা আদায় অযোগ্য ঋণ, যা মোট খেলাপি ঋণের ৮৮.১৭ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নীতিমালা শিথিলের মধ্যেও মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ ডিসেম্বর শেষে বেড়ে হয়েছে ৫০ হাজার ৩২৫ টাকা। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এ মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের কোনো কোনোটির তিন থেকে পাঁচ মাস পর্যন্ত অনিয়মিত ছিল। চলতি মার্চের মধ্যে পরিশোধ না হলে এর কিছু অংশ মার্চ প্রান্তিকেই খেলাপি হয়ে যাবে। আর আগামী জুনের মধ্যে পরিশোধ না হলে পুরো ৫০ হাজার কোটি টাকাই খেলাপি ঋণের সাথে যুক্ত হয়ে যাবে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এটাই তাদের জন্য বড় চিন্তার বিষয়। কারণ, খেলাপি ঋণ বেড়ে গেলে বর্ধিত হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে। প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয় ব্যাংকের মুনাফা থেকে। বর্ধিত প্রভিশন সংরক্ষণ করতে গিয়ে ব্যাংকের নিট মুনাফা কমে যাবে। এটা সামাল দেয়াই অনেকের জন্য কষ্টকর হবে। ইতোমধ্যেই খেলাপি ঋণের বিপরীতে আমানতকারীদের অর্থসুরক্ষায় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারেনি আটটি ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর আলোচ্য সময়ে প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে প্রায় সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে তার বেশির ভাগই আমানতকারীদের অর্থ। আমানতকারীদের অর্থ যেন কোনো রকম ঝুঁকির মুখে না
`
- ছবি - সংগৃহীত
ঋণ পরিশোধে শিথিলতা থাকার পরও বিদায়ী বছরে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে আরো প্রায় ৫০ হাজার ৩২৫ কোটি টাকার ব্যাংকঋণ খেলাপি ঋণের ঘরে পৌঁছানোর আগের ধাপে (এসএমএ) অবস্থান করছে। আগামী জুনের মধ্যে আদায় না হলেই সংশ্লিষ্ট ঋণখেলাপি ঋণের নিম্নস্তর অর্থাৎ নিম্নমানের (এসএস) খেলাপি ঋণের ঘরে চলে যাবে। গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে এক লাখ তিন হাজার ২৭৩ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো ঋণের কিস্তি পর পর ছয় মাস পরিশোধ না হলে ওই ঋণ খেলাপি ঋণে পরিণত। এই খেলাপি ঋণের আগের স্তর হলো এসএমএ অর্থাৎ মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ। এসব মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ ছয় মাস অতিক্রম করলেই তা খেলাপি ঋণে পরিণত হবে। খেলাপি ঋণ আবার তিন ধরনের হয়। ঋণের কিস্তি ছয় মাস অতিক্রম হলেই সেটি খেলাপি ঋণের নিম্নস্তর বা নিম্নমানের খেলাপি ঋণ হয়। ৯ মাস অতিক্রম হলেই ওই ঋণ সন্দেহজনক খেলাপি ঋণে পরিণত হয়। আর এক বছর পার হলেই তা মন্দ বা কুঋণ হয়। এসব ঋণ ব্যাংকিং খাতে আদায় অযোগ্য খেলাপি ঋণ বলা হয়। এ ধরনের ঋণ আদায়ের জন্য সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের বিরুদ্ধে ব্যাংকগুলোর মামলা করার অনুমোদন রয়েছে। জানা গেছে, করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব থেকে ব্যবসায়ীদের কিছুটা রেহাই দেয়ার জন্য গত দুই বছর ধরে আদায়ের শিথিলতা দেয়া হয়েছিল। প্রথম বছর পুরোপুরিই ঋণশ্রেণীকরণ থেকে ব্যাংকগুলোকে অব্যাহতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থাৎ কেউ তার ঋণের এক টাকাও পরিশোধ না করলে খেলাপি করা যাবে না। এ সুযোগ ২০২০ সালের পুরো বছরই ছিল। পরের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে এ শিথিলতা আংশিক তুলে নেয়া হয়। সর্বশেষ বলা হয়, গত ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বকেয়া কিস্তির কেউ শুধুমাত্র ১৫ শতাংশ পরিশোধ করলেই ঋণ নিয়মিত হয়ে যাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নীতিমালা শিথিলের মধ্যেও বিদায়ী বছরে খেলাপি ঋণ আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা। এক লাখ তিন হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মধ্যে ৯১ হাজার কোটি টাকাই মন্দ ঋণ বা আদায় অযোগ্য ঋণ, যা মোট খেলাপি ঋণের ৮৮.১৭ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নীতিমালা শিথিলের মধ্যেও মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ ডিসেম্বর শেষে বেড়ে হয়েছে ৫০ হাজার ৩২৫ টাকা। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এ মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের কোনো কোনোটির তিন থেকে পাঁচ মাস পর্যন্ত অনিয়মিত ছিল। চলতি মার্চের মধ্যে পরিশোধ না হলে এর কিছু অংশ মার্চ প্রান্তিকেই খেলাপি হয়ে যাবে। আর আগামী জুনের মধ্যে পরিশোধ না হলে পুরো ৫০ হাজার কোটি টাকাই খেলাপি ঋণের সাথে যুক্ত হয়ে যাবে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এটাই তাদের জন্য বড় চিন্তার বিষয়। কারণ, খেলাপি ঋণ বেড়ে গেলে বর্ধিত হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে। প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয় ব্যাংকের মুনাফা থেকে। বর্ধিত প্রভিশন সংরক্ষণ করতে গিয়ে ব্যাংকের নিট মুনাফা কমে যাবে। এটা সামাল দেয়াই অনেকের জন্য কষ্টকর হবে। ইতোমধ্যেই খেলাপি ঋণের বিপরীতে আমানতকারীদের অর্থসুরক্ষায় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারেনি আটটি ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর আলোচ্য সময়ে প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে প্রায় সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে তার বেশির ভাগই আমানতকারীদের অর্থ। আমানতকারীদের অর্থ যেন কোনো রকম ঝুঁকির মুখে না পড়ে সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। এর অন্যতম হলো প্রভিশন সংরক্ষণ। কোনো ঋণখেলাপি হয়ে গেলে ঋণের শ্রেণীভেদে ২০ শতাংশ থেকে শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। আর এ প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয় ব্যাংকের আয় খাত থেকে অর্থ এনে। খেলাপি ঋণ বেড়ে গেলে, আর সে অনুযায়ী ব্যাংকের আয় না হলে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়। অর্থাৎ ব্যাংকটি যে পরিমাণ আয় করে তা দিয়ে প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে না পারায় ঘাটতি দেখা দেয়। প্রভিশন ঘাটতি হলে ওই ব্যাংকের রিটেইন আর্নিং কমে যায়। এভাবে পরবর্তীতে সমন্বয় করতে না পারলে মূলধন ঘাটতি দেখা দেয়। আর সেই সাথে ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি আয়ও (ইপিএস) কমে যায়। আয় কমে গেলে সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা ক্ষতিগ্রস্ত হন।
ব্যাংকিং খাতে মন্দ ঋণ বেড়ে যাওয়ায় প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকার সুদ স্থগিত করা হয়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে ব্যাংকের মুনাফায়। আর মুনাফা কমে যাওয়ায় শেয়ারহোল্ডাররা বছর শেষে প্রকৃত লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এর ফলে একদিকে ব্যাংকগুলোর মুনাফার পরিমাণ কমে যাচ্ছে পাশাপাশি শেয়ারহোল্ডাররাও বছর শেষে প্রকৃত লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পাশাপাশি টাকা আটকে যাওয়ায় ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাচ্ছে।