ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015
শেয়ারবাজারের বাজেট

কালোটাকা বিনিয়োগ চায় সবাই

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১১ মার্চ, ২০২২ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৬২১ বার


কালোটাকা বিনিয়োগ চায় সবাই

নতুন অর্থবছরের (২০২২-২০২৩) বাজেট ঘোষণার বাকি প্রায় তিন মাস। এরই মধ্যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে কথা বলছে। একটি দাবির ক্ষেত্রে তারা সবাই একমত। সেটা হলো অবাধে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) এবং বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) নেতারা এসব দাবি করেছেন। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এর আগে একাধিকবার এ সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তেমন কোনো সুফল আসেনি। ফলে এ ব্যাপারে সতর্ক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ অতীতে ভালো কোনো ফল বয়ে আনতে পারেনি। সাময়িকভাবে সূচক কয়েকদিন বাড়লেও তাতে কোনো লাভ হয় না। উলটো অবৈধ আয়কে বৈধতা দেওয়া হয়। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে মূল সমস্যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট। এই সংকট কাটাতে পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি ভালো কোম্পানির শেয়ার নিয়ে আসতে হবে।

জানা যায়, শেয়ারবাজারে বেশ কয়েকবার কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট করের সঙ্গে ৫ শতাংশ জরিমানা দিয়ে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ বিদ্যমান। তবে সবচেয়ে বেশি সুযোগ দেওয়া হয় ২০২০-২১ অর্থবছরে। ওই সময়ে শেয়ারবাজারে অবাধে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ ছিল।

মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে শেয়ারবাজার, নগদ টাকা, ব্যাংকে সঞ্চিত টাকা, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা টাকা সাদা করে দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া এলাকা ও আয়তনভেদে নির্ধারিত কর দিয়ে জমি-ফ্ল্যাটেও ছিল এ সুযোগ। আর ওই অর্থবছরে প্রায় ১২ হাজার করদাতা ২০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা সাদা করেছেন। এ খাত থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছিল দুই হাজার কোটি টাকা। তবে তখন পুঁজিবাজারে সাড়া কম ছিল। আলোচ্য সময়ে এ খাতে ২৮৬ জন বিনিয়োগকারী ৪০০ কোটি টাকা অর্থ বৈধ বা সাদা করেছেন।

ওই বছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, অন্য আইনে যাই থাকুক না কেন, ১০ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট বৈধ করা যাবে। নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড, বা অন্য কোনো সিকিউরিটিজের ওপর দশ শতাংশ কর দিয়ে আয়কর রিটার্নে দেখানো যাবে। এসব ক্ষেত্রে অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন করতে পারবে না।

জানা যায়, আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৫ শতাংশ কর দিয়ে পুঁজিবাজারে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ চেয়েছে কিছু প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রয়েছে দেশের দুই শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ এবং বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন। এসব সংস্থার যুক্তি তিনটি। বিনা প্রশ্নে পুঁজিবাজারে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দিলে বাজার যেমন শক্তিশালী হবে, তেমনই সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। পাশাপাশি অর্থ পাচারও কমবে। বর্তমানে ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ কর পরিশোধ করে দিয়ে কালোটাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা যায়। আগামী ৩০ জুন এই সুবিধার মেয়াদ শেষ হবে। পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা এই সুবিধা কমপক্ষে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করেছেন। একই সঙ্গে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার আরও সাড়ে ৭ শতাংশ কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে আলোচনায় বিএমবিএ-এর সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর করপোরেট করহার ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ। কিন্তু এই করহারেও অনেক ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহী হচ্ছে না। অথচ বাজারে মৌলভিত্তিসম্পন্ন ভালো কোম্পানির যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তাই কর কমানো জরুরি।

তবে বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার সংবাদ এলে কয়েকদিন ইতিবাচক থাকে বাজার। এরপর আবার নিম্নমুখী হয়। অর্থাৎ বাজারে টেকসই কোনো পরিবর্তন আসে না।

বাংলাদেশের অর্থনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ কালোটাকা। স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত দেশে ৩০ হাজার কোটি টাকা সাদা হয়েছে। আর এ খাত থেকে সরকার কর পেয়েছে মাত্র ৩ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকে কী পরিমাণ কালোটাকা রয়েছে, এর সঠিক কোনো তথ্য নেই। তবে বিভিন্ন সমীক্ষা ও গবেষণার রিপোর্ট অনুসারে বলা হয়, বর্তমানে জিডিপির ৪৬ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত কালোটাকা। সাধারণত অনৈতিক উপায়ে বা দুর্নীতির মাধ্যমে কালোটাকা অর্জিত হয়। করবহির্ভূত টাকা বাদেও রয়েছে দুর্নীতি, ঘুস, কালোবাজারি, চোরাকারবারি, মাদক বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের মতে পাঁচটি খাত থেকে কালোটাকার জন্ম হয়। এই পাঁচটি খাত বা উৎস হচ্ছে-চোরাচালান, তথ্য ফাঁকি দিয়ে জমি নিবন্ধন, কর ফাঁকি, ঘুস গ্রহণ ও হুন্ডি। অর্থাৎ আইনি ভিত্তি বা বৈধতা ছাড়া উপার্জিত সব টাকাই কালোটাকা। চার বছর আগে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হওয়া দেশের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান দ্বিতীয়। প্রথম স্থানে রয়েছে আইভরিকোস্ট। এ অর্থ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর হাই-সিকিউরিটি ব্যাংকগুলোয় জমা রয়েছে। মালয়েশিয়ার সরকারের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশটিতে ২ হাজার ৯২৩ জন বাংলাদেশি সেকেন্ড হোম প্রকল্পে ৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন।


   আরও সংবাদ