ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৪ মার্চ, ২০২২ ১০:১০ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৬১৯ বার
খেলাপি ঋণ আদায়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে মিশ্র প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সাথে করা চুক্তি অনুযায়ী কোনো ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী খেলাপি ঋণ আদায় করতে সক্ষম হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী খেলাপি ঋণ আদায় করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সার্বিকভাবে বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ৫১ শতাংশের অধিক খেলাপি ঋণ আদায় করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংক। তবে সার্বিকভাবে অর্ধ-বার্ষিকের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও সব ব্যাংকের আদায়ের হার সন্তোষজনক নয়। ছয়টি ব্যাংকের মধ্যে তিনটি ব্যাংক সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী অর্ধ-বার্ষিকের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অধিক ঋণ আদায় করেছে। অপর দিকে অর্ধ-বার্ষিকের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে জনতা, বেসিক ও বিডিবিএল।
জানা যায়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সাথে সম্পাদিত ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি’র (এপিএ) আওতায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ আদায়ের মূল লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। কিন্তু খেলাপি ঋণ আদায়কার্যক্রম সন্তোষজনক না হওয়ায় গত নভেম্বরে তিনটি ব্যাংকের (অগ্রণী, রূপলী ও বেসিক) খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১৩৫ কোটি টাকা কমিয়ে আনা হয়। ফলে ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের সংশোধিত বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৭০ কোটি টাকা।
এর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২১) ব্যাংকগুলো মোট খেলাপি ঋণ আদায় করেছে ৭৫২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এটি সংশোধিত বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ৫১ দশমিক ২২ শতাংশ এবং মূল লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৪৭ শতাংশ। সেদিক থেকে বলতে গেলে অর্ধ-বার্ষিকের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। অন্য দিকে সোনালী ব্যাংক ও বিডিবিএল ছাড়া গত ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের বাকি চারটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ ও হার বেড়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪৫০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকটি আদায় করেছে ২৩৬ কোটি টাকা। আদায়ের হার ৫২ দশমিক ৪৪ শতাংশ। গত ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ ছিল ২৬৩ কোটি ২২ লাখ টাকা (আদায়ের হার ছিল ৫৮ শতাংশ)। সে হিসাবে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ ও হার দুই-ই কমেছে। জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪৫০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় করেছে ১৮৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এটি বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ৪০ দশমিক ৮৫ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ ছিল ১০৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা (আদায়ের হার ছিল ২৩ শতাংশ)।
এপিএর মূল চুক্তিতে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০০ কোটি টাকা। সংশোধিত চুক্তিতে এটি কমিয়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ছয় মাসে ব্যাংকটি আদায় করেছে ২১৯ কোটি টাকা। আদায়ের হার ৬০ দশমিক ৮৩ শতাংশ (মূল লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আদায়ের হার ৫৪.৭৫ শতাংশ)। গত অর্থবছরের একই সময়ে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ ছিল ১৩১ কোটি টাকা (আদায়ের হার ছিল ৩৩ শতাংশ)।
এপিএর মূল চুক্তিতে রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪০ কোটি টাকা। সংশোধিত চুক্তিতে এটি কমিয়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ৭০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ছয় মাসে ব্যাংকটি আদায় করেছে ৬৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। আদায়ের হার প্রায় ৯২ শতাংশ (মূল লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আদায়ের হার ৪৬ শতাংশ)। গত ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ ছিল ৩৯ কোটি ছয় লাখ টাকা (আদায়ের হার ছিল ২৮ শতাংশ)।
এপিএর মূল চুক্তিতে বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২৫ কোটি টাকা। সংশোধিত চুক্তিতে এটি কমিয়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ছয় মাসে ব্যাংকটি আদায় করেছে ৩৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। আদায়ের হার প্রায় ৩৭ শতাংশ (মূল লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আদায়ের হার ২৯.৫৫ শতাংশ)। গত ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ ছিল ২৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা (আদায়ের হার ছিল ২৩ শতাংশ)। বিডিবিএলের খেলাপি ঋণ আদায়ের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ছয় মাসে ব্যাংকটি আদায় করেছে ১২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। আদায়ের হার ৩৩ শতাংশ। গত ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে বিডিবিএলের খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ ছিল ১৭ কোটি ১০ লাখ টাকা (আদায়ের হার ছিল ৪৩ শতাংশ)। সে হিসেবে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ ও হার দুই-ই কমেছে।
এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এপিএ চুক্তি অনুযায়ী আমরা তিন মাস পর পর ব্যাংকগুলো পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করি। চলতি মার্চ মাসের পর আবারো ব্যাংকগুলোর পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করা হবে।