ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৬ মার্চ, ২০২২ ০৯:৫৮ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৭৭ বার
করোনার মধ্যেও আর্থিক খাতে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে অবৈধ লেনদেন (সন্দেহজনক লেনদেন)। এক বছরেই সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে ৪৪ শতাংশ। আগের অর্থবছরে সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছিল ৩ হাজার ৬৭৫টি। এক বছরের ব্যবধানে তা গত বছরে বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ২৮০টি। অবৈধভাবে যত অর্থ লেনদেন হয়েছে তার বেশির ভাগই ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে। এক বছরের অবৈধ লেনদেনের ৮৫ শতাংশই হয়েছে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে। অন্যান্য মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের পরিমাণ অতি নগণ্য। বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি গতকাল মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, সন্দেহজনক লেনদেনের মধ্যে ব্যাংকিং খাতের পরে মানি রেমিটারের মাধ্যমে হয়েছে ৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হয়েছে ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
জানা গেছে, সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুযায়ী কোনো গ্রাহক অ্যাকাউন্ট খোলার সময় ঘোষণার চেয়ে বেশি পরিমাণ লেনদেন করলে বা হঠাৎ সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের আকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেন (এসটিআর) হলে ব্যাংকগুলোর শাখা থেকে কেন্দ্রীয় অফিসে তথ্য পাঠাবে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এ সংক্রান্ত বিভাগ থেকে তা অধিকতর যাচাই-বাছাই করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ) পাঠাবে। আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট তা অস্বাভাবিক মনে করলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের লেনদেনের বিষয়ে তদন্ত করে থাকে। গ্রাহক সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারলে সরকারের অন্যান্য সংস্থার সহযোগিতা নিয়ে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। একইভাবে কোনো গ্রাহকের হিসাবে একদিনে সাত লাখ টাকার বেশি লেনদেন হলেও তার তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পাঠাতে হয়, যাকে ব্যাংকিং ভাষায় সিটিআর (ক্যাশ ট্যানজেকশন রিপোর্ট) বলে।
বিএফআইইউর প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ও সহকারী মুখপাত্র আবুল কালাম আজাদ, বিএফআইইউর মহাব্যবস্থাপক এ বি এম জহুরুল হুদা, ডিজিএম কামাল হোসেন, প্রোগ্রামার ইফতেখার মাহমুদ, যুগ্ম-পরিচালক ইকরামুল হাসান প্রমুখ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, আর্থিক খাতে অপরাধের মাধ্যমে উপার্জিত আয় বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন সংক্রান্ত সন্দেহজনক লেনদেন (এসটিআর) ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিএফআইইউর বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে ১২৪ শতাংশ। এর মধ্যে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৩৫৭টি, পরের অর্থবছরে তা বেড়ে হয় ৩ হাজার ৮৭৮টি। পরের অর্থবছরে অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে এক হাজার ২১৪টি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেড়ে হয় ৩ হাজার ৬৭৫টি। কিন্তু করোনাভাইরাসের মধ্যে বিদায়ী অর্থবছরে (২০২০-২১) সন্দেহজনক লেনদেন ৪৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ২৮০টি।
এক প্রশ্নর জবাবে বিএফআইইউ প্রধান বলেন, সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে। তবে এটি শুধু দুর্নীতি বাড়ার কারণে হয়েছে তা নয়, এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সচেতনতা বৃদ্ধির কারণেও বেড়েছে। তিনি বলেন, এ বছর আমরা বিএফআইইউর ২০ বছর পূর্তি উদযাপন করতে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমাদের মানি লন্ডারিং ব্যবস্থা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। তথ্য প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে ব্যবসা এবং ঝুঁকির ধরন পাল্টেছে। আমরাও বিভিন্নভাবে সমৃদ্ধ হয়েছি। তিনি জানান, আমরা যেসব সন্দেহজনক লেনদেন চিহ্নিত করি তার ২৬ দশমিক এক শতাংশ তথ্য আসে গণমাধ্যম থেকে। গত ৭ মার্চ বিএফআইইউর স্বতন্ত্র ওয়েবসাইট উদ্বোধন করা হয়েছে, যেখানে পরিচয় গোপন করে যে কেউ অভিযোগ করতে পারবেন। সেটাকে গুরুত্ব সহকারে দেখবে বিএফআইইউ।