ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৯ মার্চ, ২০২২ ১১:০১ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৬৪১ বার
প্রকৃতিক সৌন্দর্যের রানী বলা হয় খাগড়াছড়িকে। পর্যটকের কাছে এর সুখ্যাতি রয়েছে অনেক। খাগড়াছড়ির অন্যতম পর্যটনমুখর এলাকা রামগড়। এখানে রয়েছে দুর্গম পাহাড়, সবুজের সমারোহ, সাজানো চা বাগান, ঝুলন্ত সেতু, রামগড় লেক, বঙ্গবন্ধু পার্ক, পাহাড়ি অঞ্চল কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ ভারত মৈত্রী সেতু, বিজিবির প্রতিষ্ঠা কেন্দ্রসহ নানা দর্শনীয় স্থান। তবে রামগড়ে ইদানীং পর্যটকের দেখা মিলছে কমই। এক প্রকার পর্যটকহীন হয়ে পড়ছে রামগড়। নিরাপত্তা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং থাকার সুব্যবস্থার ঘাটতি থাকায় পর্যটক আসছে না- এমন দাবি স্থানীয়দের। তবে জনপ্রতিনিধিরা বলছেন খুব দ্রুত ঢেলে সাজানো হবে রামগড়ে পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে।
রামগড় পার্ক, স্মৃতিসৌধ, ঝুলন্ত সেতু, কালাডেবা সøুইসগেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব পর্যটন কেন্দ্র সম্পূর্ণ অরক্ষিত। পর্যটকদের জন্য কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। বছর দশেক আগেও আকাশের নিচে চার দিকে সবুজ গাছ-গাছালির শ্যামল ছায়ায় ঘেরা ছিল এ পার্ক। পাতাবাহার, ঝাউগাছে ও নানা ফুলের সমাহারে সাজানো ছিল এটি। বিশাল হ্রদের ওপর নির্মিত ঝুলন্ত সেতু পার্কের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছিল শতগুণে। এসব দৃশ্য অবলোকন করার জন্য ছুটে আসত দর্শনার্থীরা। বর্তমান দৃশ্য উল্টো। চার দিকে সবুজের সমরোহ আর নেই। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পার্কটি। কোনো রকম জোড়াতালি দিয়ে টিকে আছে ঝুলন্ত সেতু। অন্য দিকে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রামগড় স্মৃতিসৌধটি এক প্রকার ধ্বংসের প্রান্তে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে এটি। রাতে মাদকসেবীদের নিরাপদ আস্তানা এখন স্মৃতিসৌধ। কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা নেই। আশপাশের স্থানীয়রা এটিকে গো-চারণ ভূমি বানিয়েছে। স্মৃতিসৌধের মতো একই দশা কালাডেবায় অবস্থিত স্লুইসগেটের। এক সময়ের কোলাহল পূর্ণ এই পর্যটন কেন্দ্রটি এক প্রকার পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণেরর অভাবে সরঞ্জামগুলো নষ্ট হয়ে পড়েছে। রামগড় শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার ভেতরে এটি। এখানেও পর্যটকদের জন্য নেই কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা।
রামগড় পার্কে ঘুরতে আসা পর্যটক নাদিয়া সুলতানা বলেন, স্বামী সন্তানদের নিয়ে রামগড় ঘুরতে এসেছি। রামগড়ের আগের সৌন্দর্য আর নেই। তা ছাড়া এখানে থাকার জন্য ভালো হোটেল নেই। খাগড়াছড়ি সদরে গিয়ে রাত কাটাতে হবে।
রামগড় উপজেলার বাসিন্দা খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য অরুণ চন্দ্র সিংহ বলেন, নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মানুষ রামগড় মুখী হচ্ছে না। দল-মত নির্বিশেষে রামগড়ের জনপ্রতিনিধিদের উচিত রামগড়ের পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে এক হওয়া। সুপরিকল্পিতভাবে রামগড় নিয়ে কাজ করলে রামগড় খুব দ্রুত আগের সুখ্যাতি ফিরে পাবে।
রামগড় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ ত্রিপুরা বলেন, রামগড় উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে রামগড়ের পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে কাজ করা হচ্ছে। রামগড়ের প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্র আধুনিক সাজসজ্জায় সাজানো হবে। রামগড়ে সরকারিভাবে রেস্ট হাউজ নির্মাণ হচ্ছে। নকশা পরিবর্তনের জন্য কিছুটা থমকে আছে। উন্নত মানের হোটেল নির্মাণের জন্য সাধারণ ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
রামগড় পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলম কামাল বলেন, রামগড় পার্ক আগে পৌরসভার নিয়ন্ত্রনে ছিল। কিন্তু ভূমি জটিলতায় এখন উপজেলা প্রশাসন এবং উপজেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণে এখন। পৌরসভার যথেষ্ট লোকবল আছে। রামগড় পার্ক পৌরসভার দায়িত্বে দিলে পুনরায় ঢেলে সাজানো হবে এটিকে। তিনি আরো জানান, রামগড় পরিত্যক্ত বাস টার্মিনালটি মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এটি শিশু ও কিশোরদের বিনোদনের উপযোগী করার জন্য আধুনিক বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে।
রামগড় উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খোন্দকার ইখতিয়ারউদ্দিন আরাফাত বলেন, রামগড়ে এসেই পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে পরিকল্পনা শুরু করেছি। আশা করছি সফলতা আসবে।