ঢাকা, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

তিন বছরের কমিটিতে ছয় বছর পার

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ২৩ মার্চ, ২০২২ ১০:৪৭ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫২৩ বার


তিন বছরের কমিটিতে ছয় বছর পার

বিএনপির তিন বছর মেয়াদি কেন্দ্রীয় কমিটি ইতোমধ্যে পার করেছে ছয় বছর। দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ থাকলেও আপাতত কাউন্সিল করার কোনো ভাবনা নেই দলটির হাইকমান্ডের। কতগুলো বাস্তব কারণে চাইলেই কাউন্সিল করতে পারছে না। বর্তমানে পুরোদমে চলছে তৃণমূল পুনর্গঠন।

এসব প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সীমিত পরিসরে কাউন্সিল করা যায় কিনা তেমন চিন্তা রয়েছে। তবে শেষ মুহূর্তে কাউন্সিল করা সম্ভব না হলে জাতীয় স্থায়ী ও নির্বাহী কমিটির ফাঁকা পদগুলো পূরণ করা হতে পারে। বর্তমানে নির্বাহী কমিটির অর্ধশতাধিক পদ ফাঁকা রয়েছে। বিএনপির সর্বশেষ জাতীয় নির্বাহী কমিটির কাউন্সিল হয় ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ। ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর বিএনপিতে কাউন্সিল হয়েছে ছয়বার। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পরপর কাউন্সিল করার বিধান রয়েছে।

নির্দিষ্ট সময়ে কাউন্সিল না হওয়ায় দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে। দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালনের পরও তারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাচ্ছেন না। নিয়মিত কাউন্সিল হলে অনেকেই নেতা হওয়ার সুযোগ পেতেন। এতে দলের নেতৃত্বেরও বিকাশ ঘটত। পদ-পদবি না পেয়ে অনেকে দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। তাই দ্রুত সময়ে কাউন্সিল না হলে আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাদের দাবি, আগামী দিনের আন্দোলনকে গতিশীল করতে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব জরুরি। যারা বয়সের ভারে ন্যুব্জ ও নিষ্ক্রিয় তাদের কমিটি থেকে বাদ দিতে হবে।

ঢাউস কমিটি থেকে অযোগ্য ও বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে কমিটির আকার করতে হবে ছোট। আন্দোলন সংগ্রামে পরীক্ষিত যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের নিয়ে ঢেলে সাজাতে হবে কেন্দ্রীয় কমিটি। এ জন্য ছোট পরিসরে হলেও কাউন্সিল করার তাগিদ মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে কাউন্সিল না হওয়া প্রসঙ্গে দলের দুজন নীতিনির্ধারক বলেন, কাউন্সিল নিয়ে এখনো দলীয় ফোরামে তেমন আলোচনা নেই। তাছাড়া আমাদের নেত্রী এখনো বন্দি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশের বাইরে। দলের শীর্ষ এ দুনেতার অনুপস্থিতিতে কাউন্সিল করা হলে তা নেতাকর্মীরা ভালোভাবে গ্রহণ করবে বলে মনে হয় না। তা ছাড়া জাতীয় কাউন্সিল তো জেলা সম্মেলনের মতো নয়। যে কোনোভাবে করে ফেললাম। জাতীয় কাউন্সিল একটা বিশাল কর্মযজ্ঞ। চার হাজারের বেশি কাউন্সিলার রয়েছে। এরপর ডেলিগেট। এমন একটা কর্মযজ্ঞ ভার্চুয়াল বা অনলাইনে করা সম্ভব নয়। তাছাড়া করোনা মহামারিসহ রাজনৈতিক পরিবেশ নিজেদের অনুকূলে না থাকায় কাউন্সিল করা সম্ভব হয়নি।

ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের কিছু দিন পর স্থায়ী ও নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়। ৫০২ সদস্যের নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হলেও ছাত্রবিষয়ক সম্পাদকসহ বেশ কয়েকটি পদ ফাঁকা ছিল। এ ছাড়া গত কয়েক বছরে ভাইস চেয়ারম্যানসহ নির্বাহী কমিটির একাধিক নেতা মৃত্যুবরণ করেছেন। কেউ কেউ পদত্যাগও করেছেন। পদোন্নতি দিয়ে কয়েকটি পদ পূরণ করা হলেও বেশির ভাগ পদই ফাঁকা। স্থায়ী কমিটিও চলছে খুঁড়িয়ে। ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটির শুরুতেই দুটি পদ ফাঁকা ছিল। এরপর তরিকুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, এমকে আনোয়ার ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ মারা যান। এ ছাড়া রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান। যদিও তার পদত্যাগপত্র বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান কোনোটিই করা হয়নি। এর মধ্যে ২০১৯ সালের জুনে সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে স্থায়ী কমিটির শূন্যপদে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই হিসাবে এখন সদস্য সংখ্যা ১৪ জন। পাঁচটি পদ শূন্য রয়েছে। এসব পদে দলের সিনিয়র ও অভিজ্ঞ নেতাদের নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, আবদুল মান্নান, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, বিচারপতি টিএইচ খান মারা গেছেন। ভাইস চেয়ারম্যান এম মোর্শেদ খান ও মোসাদ্দেক আলী ফালু পদত্যাগ করেছেন। আর ইনাম আহমেদ চৌধুরী দল ত্যাগ করে যোগ দিয়েছেন আওয়ামী লীগে। ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সেলিমা রহমানকে ভাইস চেয়ারম্যান থেকে পদোন্নতি দিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৩৭ জন ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে ১০টি পদই ফাঁকা। এ ছাড়া ৭৩ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটির মধ্যে ফজলুর রহমান পটল, হারুন অর রশীদ খান মুন্নু, আখতার হামিদ সিদ্দিকী, নুরুল হুদা, জাফরুল হাসান, কবির মুরাদ, সঞ্জীব চৌধুরী, কাজী আসাদুজ্জামান, ওয়াহিদুল ইসলাম ও এমএ হক মৃত্যুবরণ করেছেন। নির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ কোষাধ্যক্ষ থেকে পদত্যাগ করেছেন মিজানুর রহমান সিনহা। ওই পদটি এখনো ফাঁকা।

দলটির নেতারা জানান, সারা দেশের সাংগঠনিক জেলা কমিটি পুনর্গঠন করে কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করতে বারবার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সর্বশেষ ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তৃণমূলের কমিটি পুনর্গঠনের ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়। বেশ কয়েকটি জেলার আহ্বায়ক কমিটিও ঘোষণা করা হয়। কিন্তু করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় থমকে যায় পুনর্গঠন। করোনার কারণে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্থগিত রাখা হয়। গত বছরের শেষের দিকে সীমিত পরিসরে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ফের শুরু করে। এরপর কয়েকটি জেলার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এর আগে যেসব জেলার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয় সেগুলোর মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। দলের ৮২টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৫৬টির কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। বাকিগুলো দ্রুত শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তৃণমূল পুনর্গঠন শেষ হলে কাউন্সিল নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। ইচ্ছা করলেই যেনেতেনভাবে দলের কাউন্সিল করা সম্ভব নয়। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও কাউন্সিল করতে কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে তা করা সম্ভব হয়নি।

তিনি বলেন, আমরা তৃণমূল পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছি। দ্রুত সময়ে এ কাজ শেষ করা হবে। এরপর দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা করে কাউন্সিলের বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কাউন্সিল অবশ্যই হবে। আমরা সুবিধাজনক সময়ে কাউন্সিল করব।

কাউন্সিলের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, এ সরকারকে হটাতে আন্দোলনের বিকল্প নেই। সেই গণআন্দোলন সফল করতে দরকার শক্তিশালী সংগঠন। এজন্য দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। কাউন্সিলের মাধ্যমে তৃণমূল থেকে সব পর্যায়ে যোগ্য নেতৃত্ব তুলে আনার কাজ চলছে। নানা প্রতিকূলতা থাকায় বিগত সময়ে জাতীয় কাউন্সিল করা সম্ভব হয়নি। তৃণমূল পুনর্গঠনের পর জাতীয় কাউন্সিলের বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে।

সূত্র : যুগান্তর


   আরও সংবাদ