ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৪ মার্চ, ২০২২ ১৩:৪৫ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৬০১ বার
বহুমুখী পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ উৎকৃষ্ট তৈলবীজ জাতীয় ফসল। বিদেশি এ ফুলের নাম সূর্যমুখী। বিশ্বে এ ফুলের স্থান চতুর্থ। বিশ্ববাজারে সয়াবিনের পর সূর্যমুখী স্থান দখল করে নিয়েছে। রাশিয়া, আর্জেন্টিনা, ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রে সূর্যমুখীর আবাদ হয় বেশি। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও এ ফুলের চাষ বেড়ে চলছে।
ফুল কম-বেশি সবাই ভালোবাসেন। কেউ কিনতে, কেউ চাষ করতে, আবার কেউ তার সৌন্দর্য দেখতে ভালোবাসেন। এ দৃশ্য প্রায়ই দেখা যায়, পড়ন্ত বিকেলে একদল মেয়ে সূর্যমুখী ফুলের সাথে হাসছে। দৃষ্টিকাড়া ফুলের সাথে মোবাইল ফোনে ফ্রেমবন্দি করছে প্রিয় মুহূর্তগুলো। কেউ প্রিয়জনের হাত ধরে
উপভোগ করছে শেষ বিকেলের হলুদ আভা। শিবচর উপজেলায় সূর্যমুখীর আবাদ বাড়াতে কৃষক পর্যায়ে সরকারিভাবে প্রণোদনা এবং পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
শিবচর উপজেলায় ৪০ হেক্টর জমিতে হাইসান-৩৩ জাতের সূর্যমুখী চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবাদ করা অধিকাংশ জমিতেই গাছে ফুল ধরেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে শতভাগ জমিতেই ভালো বীজ পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এ যেন সবুজের মাঝে হলুদের সমাহার। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ফুলের দিক পরিবর্তন হয়। সকালে পূর্ব দিকে তাকিয়ে থাকলেও বিকেলে দিক পরিবর্তন করে ধাবিত হয় পশ্চিমে।
সূর্যমুখীর বাগানগুলো এখন প্রকৃতিপ্রেমীদের উপভোগের বিষয় হয়ে উঠেছে। দলে দলে তারা ছুটে আসছেন এসব বাগানে। ছবি তুলে পোস্ট করছেন ফেসবুকে ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পড়ন্ত বিকেলে সূর্যমুখীর এ বাগানগুলোতে প্রকৃতি প্রেমীদের বেশ সমাগম ঘটে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সূর্যমুখীর চাষের ৯০-১০৫ দিনের মধ্যেই কৃষকরা ফুল থেকে বীজ ঘরে তুলতে পারেন। প্রতি বিঘা জমিতে ১০-১২ মণ বীজ পাওয়া যাবে। বিঘাপ্রতি কৃষকরা ২৫-৩৫ হাজার টাকার বীজ বিক্রি করতে পারেন।
সূর্যমুখীর বীজ থেকে যে সয়াবিন তেল পাওয়া যাবে তাতে কোনো ক্ষতিকর কোলেস্টেরল নেই। সে কারণে দিন দিন বাড়ছে এর চাহিদা। চাহিদার সাথে শিবচরেও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে সূর্যমুখী ফুলের চাষ। আর কৃষকেরা রয়েছেন ভালো ফলনের আশায়।
উপজেলার যাদুয়ারচর এলাকার চাষি শাহিন জমাদ্দার বলেন, অন্য ফসলের চেয়ে খরচ কম ও অধিক লাভ হওয়ার কারণে এই ফুলের চাষ করেছি। প্রদর্শনী হিসেবে গত বছর এক বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুল চাষ করেন তিনি। সার, বীজ নিয়ে ১০ হাজার টাকার মতো খরচ করে ১৫ মণ বীজ পান। বিক্রি করেন ৩০ হাজার টাকায়।
পাঁচ্চর থেকে ঘুরতে আসা নুসরাত, আলভী, সাদিয়াসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, বাসা বাড়িতে বিভিন্ন ফুলের বাগান করা গেলেও সূর্যমুখী ফুলের বাগান করাটা খুব একটা হয়ে উঠে না। এছাড়া একসাথে অনেকগুলো সূর্যমুখী ফুল দেখে মনটা ভরে যায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি দেখে কুতুবপুর থেকে ঘুরতে আসা এক দম্পতি বলেন, ফেসবুকে দেখার পর আমাদের কাছে ভালো লাগে তাই পরিবারকে নিয়ে হলুদের রাজ্যে আসা। খোলামেলা পরিবেশ, উপরে নীল আকাশের সাথে প্রকৃতির হলুদ মিলে একাকার এক নজরকাড়া দৃশ্য দেখতে পেলাম।
শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনুপম রায় বলেন, এ বছর উপজেলায় ৪০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা হয়েছে। সূর্যমুখী ফুল দেখতে শুধু রূপময়ই নয়, গুণেও অনন্য। অন্যান্য তেলের মধ্যে ক্ষতিকারক উপাদান (কোলেস্টেরল) থাকে, কিন্তু সূর্যমুখী তেলে তা নেই। পুষ্টিগুণেও অনন্য। বেশি করে এই ফসলের আবাদ করতে কৃষকদের প্রণোদনাহসহ উৎসাহ দেয়া হচ্ছে।
শিবচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ মোল্লা জানান, কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ, সার দেয়া হয়েছে। চাষের বিভিন্ন দিক কৃষকদের বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া নিয়মিত খোঁজ রাখা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে এ এলাকায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ আরো বৃদ্ধি করা হবে।