ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল, ২০২২ ১১:২৩ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৮০ বার
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশের মানুষও গত কয়েক বছরে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আর সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে।
এখন ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক মাধ্যম আর ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি নতুন একটি নীতিমালার খসড়া প্রকাশের পর তাতে প্রস্তাবিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ব্যবহারকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ বলেছে, হাইকোর্টের নির্দেশে সামাজিক মাধ্যম এবং অনলাইন প্লাটফর্মের কর্মকাণ্ডে শৃঙ্খলা আনার লক্ষ্যে এই নীতিমালার খসড়া তৈরি করা হয়েছে।
তবে ওটিটি প্লাটফর্ম এবং সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা এতে আরও সংকুচিত হবে।
ব্যক্তি পর্যায়ে উদ্বেগ কেন
ঢাকায় একজন গৃহিনী নাদিয়া সিদ্দিকা অনি এক সময় ফেসবুকে বেশ সরব ছিলেন। তিনি দেশের আলোচিত বিভিন্ন ইস্যুতে নিজের মতামত তুলে ধরে পোস্ট দিতেন।
কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের পর থেকে তিনি ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার ব্যাপারে সতর্ক ছিলেন।
নাদিয়া সিদ্দিকা অনি এখন নতুন একটি নীতিমালার খসড়ায় প্রস্তাবিত নির্দেশনা সম্পর্কে সংবাদমাধ্যম থেকে যা জানতে পেরেছেন, তাতে তার উদ্বেগ এবং ভয় আরো বেড়েছে।
তিনি বলেন, ‘আগে আমার কাছে মনে হতো যে, আমার একটা কিছু মনে হলো, আমি তা পোস্ট করলাম, সেটা মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে। আমরা ফেসবুকে যে কথাবার্তা বলি, সেগুলোতো সামাজিক মাধ্যম মানুষের কাছে নিয়ে যায়।’
‘সেক্ষেত্রে সবকিছুই যদি সরকার তাদের আওতায় নিয়ে আসে এবং সবকিছুতেই সরকার যদি মনে যে এটা অপরাধ, তাহলে যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখালেখি করে তারা ভয় পাবে যে কিছু আর লেখা যাবে না। আমাকে মানুষের কাছে পৌঁছানোর দরকার নাই, আমি আমার মধ্যেই থাকি। এরকম একটা মনোভাব তৈরি হচ্ছে,’ বলেন নাদিয়া সিদ্দিকা অনি।
অপরাধের সংজ্ঞা নিয়ে অস্পষ্টতা
নীতিমালায় অনলাইন প্লাটফর্মগুলো এবং এর ব্যবহারকারীদের জন্য অনেকগুলো নিয়ম-কানুন প্রস্তাব করা হয়েছে।
যেমন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কোনো মন্তব্য এবং খবর প্রচার করলে বা পোস্ট করলে তা অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হেয় করে মন্তব্য বা কটুক্তি করা যাবে না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে- এমন কিছু করা যাবে না।
রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় এবং দেশের সাথে বন্ধু দেশগুলোর সম্পর্কের ক্ষতি করতে পারে- এমন মন্তব্য, খবর বা কনটেন্ট সামাজিক মাধ্যমে বা বিনোদন প্লাটফর্মে প্রচার করা যাবে না।
এসব প্লাটফর্ম নিয়ে কাজ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক সুপণ।
তিনি নীতিমালার খসড়া পর্যালোচনা করে বলেন, অপরাধের সংজ্ঞা অস্পষ্ট রাখা হয়েছে এবং সে কারণে অপপ্রয়োগের সুযোগ থাকছে।
‘বড় যে সমস্যা এখানে (নীতিমালার খসড়ায়) সেটা হচ্ছে, যে কাজগুলোকে অপরাধ হিসাবে বলা হচ্ছে সেগুলো সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত নয়। এটা উদ্বেগের।’
উদাহরণ দিতে গিয়ে কাজী মাহফুজুল হক সুপণ বলেন, ‘ফৌজাদারি কার্যবিধিতে শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে মূলনীতি হচ্ছে, আমাকে কেন কোন কাজ করতে নিষেধ করা হচ্ছে, তা আমাকে বুঝতে হবে।’
‘কিন্তু নীতিমালায় কিছু বিষয়কে নিষেধ করা হচ্ছে, যেগুলোর পরিধি এতটাই ব্যাপক যে, কাজটা আপাতত অপরাধ নয়, সেটাকেও নির্বাহী বিভাগ অপরাধ বলে মনে করতে পারে। যেভাবে আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ হতে দেখেছি’ বলেন তিনি।
নীতিমালার খসড়ায় নজরদারির দায়িত্ব বিটিআরসি এবং তথ্য মন্ত্রণালয়কে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে- এতে দ্বৈত একটি ব্যবস্থা দেখা দেবে কিনা, এই প্রশ্নও তুলেছেন আইনের শিক্ষক কাজী মাহফুজুল হক সুপণ।
‘খসড়ায় ডিজিটাল মিডিয়ার জন্য কোড অব এথিক্স তৈরি করার কথা বলা হয়েছে এবং সেটা প্রয়োগের দায়িত্ব দেয়া হবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ওপর। একই প্রবিধানে এ ব্যাপারে বিটিআরসিরও ভূমিকার কথা বলা হয়েছে।’
“ফলে এই দ্বৈত ব্যবস্থায় দু'টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রয়োগ সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দিতে পারে। তখন আমাদের যোগাযোগের গোপনীয়তা এবং মত প্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার সঙ্কটে পড়তে পারে।"
ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিয়ে শঙ্কা
আইনজীবীদেরও অনেকে মনে করেন, নীতিমালার খসড়ায় নিষিদ্ধ বিষয়গুলোর সংজ্ঞা যেহেতু অস্পষ্ট রাখা হয়েছে, তাই সামাজিক মাধ্যমে কী করা যাবে বা কী করা যাবে না- সেটাও ব্যবহারকারীদের জন্য স্পষ্ট হচ্ছে না। ফলে তাদের মধ্যে প্রতি মুহূর্তে শঙ্কা কাজ করবে।
সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সারা হোসেন মনে করেন, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা হুমকির মুখে পড়ার সম্ভাবনাও কাজ করছে।
তিনি এই শঙ্কার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, ‘এই প্রবিধানটা যদি শেষপর্যন্ত অনুমোদিত হয়, তাহলে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং আমাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার অধিকারও খর্ব হবে। কারণ এই খসড়া প্রবিধানে যেভাবে নিষিদ্ধ বক্তব্য বা বিষয়গুলোকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, সেখানে অনেক কিছুই তার আওতায় পড়ে যেতে পারে।’
সারা হোসেন আরো বলেন, ‘সেখানে (খসড়া নীতিমালা) বলা হয়েছে যে, আপনি বিরক্তিকর কোনো কিছু বললে সেটাও নিষিদ্ধ হিসাবে গণ্য হতে পারে।’
ম্যাসেজিং অ্যপ ব্যবহারেও ভয়
হোয়াটস অ্যাপের মত ম্যাসেজিং সার্ভিস অ্যাপগুলো ব্যবহারের প্রশ্নেও কিছু নিয়মের প্রস্তাব করা হয়েছে নীতিমালার খসড়ায়।
যেমন, ম্যাসেজিং অ্যাপগুলোতে এবং সামাজিক মাধ্যমে কারো কোন বক্তব্য বা পোস্টের কারণে দেশে যদি কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তখন যে ব্যক্তির পোস্টকে কেন্দ্র করে ওই পরিস্থিতি তৈরি হবে বা প্রথম যিনি বক্তব্য বা পোস্ট দিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট প্লাটফর্মকে ওই ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করতে হবে।
এমন নিয়মের কারণেই আইন বিশেষজ্ঞরা ম্যাসেজিং অ্যাপগুলোতে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিয়ে হুমকি তৈরির আশঙ্কা করছেন।
কাজী মাহফুজুল হক সুপণ বলেছেন, এখন এ ধরনের কোনো বিধান না থাকলেও সরকার কারো ব্যাপারে তথ্য চাইলে এসব প্লাটফর্ম তা অনেক সময় দিয়ে দেয়।
নতুন নীতিমালায় বিষয়টা সুনির্দিষ্টভাবে থাকলে তা বিপজ্জনক হবে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, ‘যারা সোশাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলো চালায় এবং যারা বার্তা সেবা দিয়ে থাকে - তার মধ্যে রয়েছে হোয়াটস অ্যাপ, ইয়াহু ল্যাব ম্যাসেঞ্জার, ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার- তাদের সবার জন্য এটা প্রযোজ্য হবে।’
‘তাদের (বার্তা সেবার অ্যাপগুলো) ওপর একটা বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হবে যে, অপরাধ সর্ম্পকিত কোনো তথ্যের প্রথম যে অরিজিনেটর মানে তথ্যটা প্রথম যিনি তৈরি করেছেন, তার পরিচয় প্রকাশ করতে হবে।’
“এখানে সমস্যাটা হচ্ছে, যারা এ ধরনের বার্তা সেবা দেয়, তারা কিন্তু এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন (যে দু'জন বার্তা আদান প্রদান করবে-সেটা শুধু ওই দু'জনের ডিভাইসেই থাকবে)-এই পদ্ধতিতে সেই সেবা দিয়ে থাকে। কিন্তু ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করতে হলে ও্ বার্তা সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের পদ্ধতি পাল্টাতে হবে” বলেন কাজী মাহফুজুল হক সুপণ।
তিনি মনে করেন, ‘বার্তা সেবাদানকারী অ্যাপগুলো পদ্ধতি পাল্টাতে গেলেই গ্রাহকদের বার্তা গোপন থাকবে না। এটা বিপদজনক।’
‘এটা হলে মত প্রকাশের স্বাধীনতা অনেক বাধাগ্রস্ত হবে। সাধারণ মানুষ নিজেই সাবধান হয়ে যাবে। তারা মনে করবে কথা বলারই দরকার নেই।’
বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় ওটিটি প্লাটর্ফম টিকতে পারবে না বলে আশঙ্কা
নেটফ্লিক্স, হইচই এবং অ্যামাজন প্রাইম সহ আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় ওটিটি প্লাটফর্মগুলোর জন্যও বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী কিছু না করাসহ সাধারন কিছু শর্ত থাকছে।
এসব প্লাটফর্মকে নিবন্ধন করতে হবে এবং 'অশ্লীল ও অনৈতিক' কোনো কন্টেন্ট তারা প্রচার করতে পারবে না।
দেশের একটি ওটিটি প্লাটফর্ম চরকি'র প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা রেদোয়ান রনি বলেছেন, অতিরিক্ত নিয়ম- নীতির আওতায় আনা হলে বিনোদনের ওটিটি প্লাফর্মগুলো আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মের সাথে প্রতিযোগীতায় টিকতে পারবে না।
তিনি বলেন, ‘লোকাল বা দেশীয় ভ্যালুজ অবশ্যই আমাদের চিন্তা করতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে বিদেশী ওটিটি প্লাটফর্ম নেটফ্লিক্স এবং অ্যামাজন প্রাইম দেখা যায়। তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশের ওটিটি প্লাটফর্মকে ব্যবসা করতে হবে।’
‘নীতিমালাকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিবেচনা করা উচিত। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, ওটিটি প্লাটফর্ম কিন্তু গণমাধ্যম না। এটা আসলে ব্যক্তিগত ডিভাইসে মানুষ বয়সের ভ্যারিফিকেশন করে এই প্লাটফর্মটা দেখতে পারে।’
‘তার মানে এটা যেহেতু ব্যক্তিগত একটা ডিভাইসে দেখা যায়, কাজেই বয়সের ভেদে কনটেন্ট প্রচারের স্বাধীনতা ওই টেকনোলজিই দিয়েছে। ফলে প্রোগ্রামিংয়ের স্বাধীনতা থাকা উচিত’ বলেন রেদোয়ান রনি।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরেও এতো নজরদারি কেন?
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের চার বছর পরও বিতর্ক এবং অপপ্রয়োগের অভিযোগ সেই আইনের পিঁছু ছাড়েনি।
এমন আইন থাকার পরও ডিজিটাল প্লাটফর্মগুলোর জন্য এখন আবার নতুন নীতিমালা করার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য খুঁজছেন বিশ্লেষকদের অনেকে।
সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ বলেছেন, মানুষের মত প্রকাশের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর জন্য রাজনৈতিক উদ্দেশে এই নীতিমালা করা হচ্ছে।
সামাজিক মাধ্যম, ম্যাসেজিং অ্যাপ এবং ওটিটি প্লাটফর্মের জন্য নীতিমালার খসড়ায় যেসব নিয়ম প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা আরো সংকুচিত হবে বলে বিশ্লেষকরা বলছেন।
মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ‘ডিজিটাল প্লাটফর্ম, যেটি আসলে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনার প্রাণান্তকর চেষ্টার অংশ হিসাবে এটা করা হচ্ছে।’
‘এটা বোঝাই যাচ্ছে, এগুলো নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানুষ যাতে স্বাধীনভাবে তার মত প্রকাশ করতে না পারে বা তার বক্তব্য, ভিডিও শেয়ার বা পোস্ট করতে না পারে। এই মানসিকতা থেকে এটা করা হচ্ছে।’
‘কেঁচো দেখে সাপের ভয়’ বলছেন মোস্তফা জব্বার
তবে সরকার বলছে, হাইকোর্টের নির্দেশে এই নীতিমালার খসড়া তৈরি করা হয়েছে।
একজন ব্যক্তির একটি রিট মামলার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এই নীতিমালা তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল বিটিআরসি এবং তথ্য মন্ত্রণালয়কে।
সেই যুক্তিই আবার তুলে ধরলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার। তিনি বলেছেন, এই নীতিমালা নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে সরকার মনে করে।
তার বক্তব্য হচ্ছে, নীতিমালা বিটিআরসি বা তথ্য মন্ত্রণালয় নিজের উদ্যোগে করেনি। এটা হাইকোর্ট তাদের করতে বলেছে।
‘অতএব আমার কাছে মনে হচ্ছে, নীতিমালাটিকে কেন্দ্র করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে,’ বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘তাদের (যারা নীতিমালার খসড়া নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলছেন) বক্তব্য হচ্ছে, অপরাধের সংজ্ঞাগুলো অনেক বিস্তৃত ফলে এর নানা ব্যাখ্যা করে অপ-প্রয়োগ হতে পারে।’
কিন্তু তিনি যুক্তি দিচ্ছেন, কোনো একটি নতুন বিষয়কে আইনের আওতায় আনার জন্যই অপরাধের সংজ্ঞাকে বিস্তৃত রাখতে হয়েছে।
তবে সামাজিক মাধ্যম এবং ওটিটি প্লাটফর্মে বা ম্যাসেজিং অ্যাপ ব্যবহারে শৃঙ্খলা আনার কথা বলে নীতিমালার সমর্থনে সরকার নানা যুক্তি দিলেও বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে অপপ্রয়োগের সুযোগ থেকে যাচ্ছে। কিন্তু মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার কোনো অভিযোগই মানতে রাজি নন। তিনি বলেন, ‘ভয়তো আপনি কেঁচো দেখে সাপের ভয় পেতে পারেন।’
‘কিন্তু আমি বলবো, কেউ যদি রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কাজ করেন, বা রাষ্ট্রের বিপক্ষে কাজ করেন বা রাষ্ট্রের নীতিমালার বিপক্ষে কাজ করেন, সেটা সংবিধান এবং আইনেও অ্যালাউ করে না।"
পরিচয় উন্মুক্ত করার বিষয়
মোস্তফা জব্বার বলেন, ‘আপনি রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকারক কাজ করবেন, কোনো একটা পোস্ট দিয়ে কোনো জায়গায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তৈরি হবে- আর সেই অপরাধীকে কেউ চিনবে না তা হয় না।’
‘এটা যে কোন মানুষের পরিচয় নয়, অপরাধীর পরিচয় উন্মুক্ত করার বিষয়। এই অপরাধীর পরিচয় কোথা থেকে আসবে। এই প্লাটফর্মগুলো যারা চালায়, তাদেরকে তা বলতে হবে।’
কিন্তু সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ মনে করেন, আদালতের নির্দেশে নীতিমালা প্রণয়ন করা সহ যে সব বক্তব্য সরকার দিচ্ছে, সেগুলোকে সরকার ঢাল হিসাবেই ব্যবহার করছে।
‘যেগুলো বলা হচ্ছে, সেগুলো ঢাল হিসাবে বলা হচ্ছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে যারা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করে, বন্দুকটা কিন্তু তাদের দিকেই ধাবিত হয়।’
‘যেমন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার কারণে কিশোর বয়স থেকে শুরু করে নানান বয়সের মানুষ ভিকটিম হয়েছেন। এখন এই নীতিমালা করার কারণে যে বার্তাটা আসবে, তাতে দেখা যাবে, মত প্রকাশের স্বাধীনতাকেই হত্যা করা হবে। সেটাই হয়ে আসছে’ বলেন মোস্তফা ফিরোজ।
নীতিমালা করার ক্ষেত্রে সরকার অবশ্য কোনোভাবেই দায় নিজেদের ঘাড়ে নিতে রাজি নয়।
মন্ত্রী মোস্তফা জব্বারের বক্তব্য হচ্ছে, নীতিমালার খসড়া ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে মানুষের মতামত নেয়া হয়েছে। চূড়ান্ত পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামত তারা নেবেন। এরপর সরকার নীতিমালার খসড়া হাইকোর্টে পেশ করলে আদালত যা ঠিক করে দেবে সেটাই নীতিমালা হিসাবে প্রণয়ন করা হবে।
আগামীকাল (২৪ এপ্রিল) খসড়া পেশ করার জন্য হাইকোর্টে একটি দিন নির্ধারিত রয়েছে।
সূত্র : বিবিসি