ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

ডলারের তীব্র সংকট, চাহিদা তুঙ্গে

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১৭ মে, ২০২২ ০৮:৩২ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৫১ বার


ডলারের তীব্র সংকট, চাহিদা তুঙ্গে

এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার রেকর্ড অবমূল্যায়ন হয়েছে। আন্তঃব্যাংক লেনদেনে সোমবার ডলারের দাম বেড়েছে ৮০ পয়সা। এ নিয়ে চলতি বছরের সাড়ে চার মাসে চার দফা বাড়ল। বিশ্লেষকরা ডলারের এই ঊর্ধ্বগতি আরও সামনে এগোবে বলে আশঙ্কা করছেন। এ ধারা অব্যাহত থাকলে টাকার মান আরও কমবে এবং সংগতকারণে অর্থনীতিতে বিরূপ পড়াব পড়বে। একধরনের অস্থিরতার ঘেরাটোপ থেকে সহজে বের হওয়া যাবে না। ইতোমধ্যে এক বছরের ব্যবধানে আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম বাড়ল ২ টাকা ৭০ পয়সা।

এদিকে সোমবার আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা দরে। তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় প্রতি ডলার বিক্রি হয় ৮৮ থেকে ৯৫ টাকা। স্মরণকালের মধ্যে কখনো এত বেশি হারে টাকার অবমূল্যায়ন বা ডলারের দাম বাড়েনি। আমদানি দেনা এবং বকেয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধের চাপ বাড়ায় বাজারে ডলারের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। কিন্তু সে তুলনায় সরবরাহ নেই। এ কারণে বাজারে এর সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। উপরন্তু চাহিদা বেড়েই যাচ্ছে।

যদিও করোনার পর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ায় চাহিদা বেড়েছে। একই সঙ্গে আমদানি পণ্যের দামও বেড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে পণ্যের দাম আরও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম ২৫ থেকে শতভাগের বেশি বেড়ে গেছে। এছাড়া করোনার সময়ে যেসব আমদানির দেনা ও ঋণের কিস্তি পরিশোধ স্থগিত করা হয়েছিল, সেগুলোও এখন পরিশোধ করতে হচ্ছে। সবমিলে বাজারে ডলারের চাহিদা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। কিন্তু আমদানির তুলনায় রপ্তানি আয় সে হারে বাড়েনি। একই সঙ্গে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে। এসব মিলে বাজারে ডলারের সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।

সূত্র জানায়, ডলারের দাম বাড়িয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন আমদানি নিয়ন্ত্রণের কৌশল নিয়েছে। এর বিপরীতে প্রবাসী ও রপ্তানিকারকদের মুদ্রাবিনিময় হারের বাড়তি সুবিধা দেওয়া হবে। ফলে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একই সঙ্গে বাড়তি খরচের কারণে আমদানি কমে যাবে। এর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধপরিস্থিতি স্তিমিত হলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

সূত্র জানায়, আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে সোমবার সকালেই ডলারের দাম ৮০ পয়সা বাড়ানো হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অলিখিত সম্মতি নিয়েই দাম বাড়ানো হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার প্রতি ডলার আন্তঃব্যাংকে বিক্রি হয়েছিল ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা দরে। সোমবার বিক্রি হয়েছে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা দরে। এর আগে ৯ মে ডলারের দাম ২৫ পয়সা বাড়ানো হয়। ২৭ এপ্রিল বাড়ানো হয় আরও ২৫ পয়সা। ২৩ মার্চে ২০ পয়সা। এক বছর আগে অর্থাৎ গত বছরের মে মাসে প্রতি ডলার আন্তঃব্যাংকে বিক্রি হয়েছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা দরে। এক বছর ব্যবধানে আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম বাড়ল ২ টাকা ৭০ পয়সা।

এদিকে আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকগুলোও এর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আমদানির জন্য প্রতি ডলার বিক্রি করছে ৮৮ থেকে ৯৫ টাকায়। নগদ ডলার বিক্রি করছে ৯০ থেকে ৯৪ টাকায়। আগাম ডলার বিক্রির ক্ষেত্রে দাম আরও বেশি। প্রতি ডলার ৯৪ থেকে ৯৬ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে ব্যাংকগুলো ডলার কিনছে ৮৭ থেকে ৮৮ টাকা দরে। ডলারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার দামও বাড়ানো হয়েছে। বাজারে ডলারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে জোগান দেওয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের সাড়ে ১০ মাসে ৫১৫ কোটি ডলারের জোগান দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেমে টাকার মান ধরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু চাহিদা বেশি বাড়লেই দাম বাড়াতে হচ্ছে।

রেমিট্যান্স কমা এবং আমদানি ব্যয় বাড়ায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ১৮২ কোটি ডলার, যা দিয়ে ৫ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ মাসের বেশি আমদানি ব্যয়ের সমান রিজার্ভ রাখার, অর্থাৎ রিজার্ভ ৫ হাজার ২০০ কোটি ডলার রাখার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এটি সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৪৪ শতাংশ, এলসি খোলা বেড়েছে ৫২ শতাংশ। এর বিপরীতে রপ্তানি আয় এপ্রিল পর্যন্ত বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। রেমিট্যান্স কমেছে ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়ার চেয়ে ব্যয় হচ্ছে বেশি।

ফলে সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাবে ঘাটতি বেড়েই চলেছে। গত অর্থবছরের জুলাই-মার্চে এ হিসাবে ঘাটতি ছিল ৫৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৪০৭ কোটি ডলার। অব্যাহতভাবে বৈদেশিক মুদ্রার আয় কমায় ঘাটতি বেড়ে গেছে। এ ঘাটতি বাড়তে থাকলে এবং দীর্ঘ সময় চলতে থাকলে টাকার মান ধরে রাখা কঠিন হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতির হারও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে।


   আরও সংবাদ