ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৮ মে, ২০২২ ২০:৫৪ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৮০ বার
লাগামহীনভাবে বাড়ছে মার্কিন ডলারের দাম। ডলার নিয়ে এক ধরনের অস্থির অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে দেশের বাজারে। কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে ডলারের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। এক্সচেঞ্জ (মুদ্রা বিনিময়) হাউজগুলোতে খুচরা ডলার ১০০ টাকা থেকে ১০২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যাংকগুলোতেও বেচাকেনা হচ্ছে ৯৪ থেকে ৯৬ টাকায়। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক আন্তর্জাতিক লেনদেনের এ মুদ্রাটির দাম ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা বেঁধে দিয়েছে।
এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, আমদানির চাপের কারণে সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকায় ডলারের দাম বেড়েছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার সরবরাহ করছে। রেটও পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন চাহিদার সুযোগ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে যেসব ব্যাংক ডলার বিক্রি করছে তাদের বিষয়টি তদারকি করা হবে। কোনো অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বুধবার (১৮ মে) অস্থির ডলারের বাজারের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম এসব কথা জানান।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, যদি গত দুই বছরের ডলারের বাজার বিশ্লেষণ করি তাহলে আমরা দেখব করোনা মহামারির সময়ও আমাদের বাজার স্থিতিশীল ছিল। কারণ ওই সময় আমাদের আমদানি চাপ কম ছিল। আবার যেসব আমদানি হয়েছে তার অনেক পেমেন্ট বকেয়া ছিল। যা এখন পরিশোধ করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, যদি সার্বিক হিসাব করি, তাহলে দেশের মোট আমদানি দাঁড়াবে ৮০ বিলিয়ন ডলার। এর বিপরীতে আমাদের রপ্তানি থেকে সব মিলিয়ে আয় আসে ৫০ বিলিয়ন। আমদানি-রপ্তানি আয়ের মধ্যে ব্যবধান ৩০ বিলিয়ন। এই ৩০ বিলিয়ন এর মধ্যে প্রবাসীদের আয় রেমিট্যান্স থেকে পূরণ হয় ২০ থেকে ২১ বিলিয়ন। এরপর প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার ঘাটতি থাকে। যার মধ্যে ৬ থেকে ৭ বিলিয়ন ডলার আসে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) থেকে। বাকি ৩ থেকে ৪ বিলিয়ন যে ঘাটতি থাকে এর জোগান দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রির মাধ্যমে। কিন্তু এ অর্থবছরের ৫ বিলিয়ন ডলার ইতিমধ্যে বাজারে সরবরাহ করা হয়ে গেছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক চেষ্টা করে যাচ্ছে।
বিশ্ব বাজারের পণ্যের দাম বেড়েছে উল্লেখ বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, বিশ্ব বাজারের দিকে তাকালে দেখা যাবে বেশিরভাগ জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে পণ্য পরিবহন অর্থাৎ জাহাজ ভাড়াও বেড়েছে। যার কারণে ডলারের সঙ্গে টাকার মান ব্যবধান বড় হচ্ছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে টাকার মান অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। সর্বশেষ এক ডলারের দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া রেটের চেয়ে বাজারে বেশি দামে ডলার বিক্রি হচ্ছে বিষয়টি স্বীকার করে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ কর্মকর্তা বলেন, অভিযোগ আছে খোলা বাজারে ডলার অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। কার্ব মার্কেটে খুচরা ডলার কেনাবেচা হয়। ভ্রমণ, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ বিভিন্ন কারণে বিদেশে যাওয়ার সময় কিছু ডলার সঙ্গে নিতে হয়। ওই সব ব্যক্তিরা খোলা বাজার থেকে ডলার কেনেন। এখন সেখানে চাহিদা বেশি, তাই গ্রাহকদের অতি প্রয়োজনীয় সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ডলারের দাম বেশি নিয়ে অতি মুনাফা করছে।
আমদানির ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোও বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে এমন প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, যেসব ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দরে ডলার বিক্রি করছে, তাদের বিষয়টি দেখব। যদি কোনো অনিয়ম পাই, তাহলে ব্যবস্থা নেব।
এ দিকে বুধবার রাজধানীর ব্যাংক পাড়া মতিঝিল, পল্টন ও বায়তুল মোকাররম এলাকায় এক্সচেঞ্জ (মুদ্রা বিনিময়) হাউজগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুচরা ডলার ৯৯ টাকা থেকে ১০১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাইওনিয়ার এক্সচেঞ্জ হাউজে ডলারের দাম জানতে চাইলে দায়িত্বরত কর্মী বলেন, আজ (বুধবার) ১০১ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার বিক্রি করছি। গতকাল ১০২ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
মতিঝিলের আরেক ডলার ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার বলেন, আজকের রেট ৯৯ থেকে ১০০ টাকা। আর কিনছি একেক রেটে, সর্বোচ্চ ৯৮ টাকায়। গতকালের বাজার আরও বেশি চড়া ছিল বলে তিনি জানান।