ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২০ মে, ২০২২ ১২:৩৫ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৫২ বার
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক পদে নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে এই সিদ্ধান্ত প্রকাশ করা হয়।
‘অনিবার্য কারণে’ পরীক্ষা বাতিলের কথা জানিয়েছে সংস্থাটি। তবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণেই এমন সিদ্ধান্ত বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে পুলিশি অনুসন্ধানে এই প্রশ্নফাঁসের নাটের গুরু হিসাবে মাউশিতে কর্মরত ৩১তম ব্যাচের এক শিক্ষা কর্মকর্তার প্রাথমিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তার নাম চন্দ্র শেখর হালদার ওরফে মিল্টন। পুলিশের কাছে দেওয়া গ্রেফতারকৃত সাইফুল ইসলামের জবানীতে মিল্টনের নাম উঠে এসেছে। মিল্টন ও সাইফুলের গ্রামের বাড়ি একই এলাকায়। মিল্টন ইডেন কলেজে প্রশ্নপত্র পৌঁছানোর দায়িত্বে ছিলেন।
মিল্টনের বিষয়ে আরও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার পরই তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। তবে ইতোমধ্যেই তিনি গা-ঢাকা দিয়েছেন। গত দুদিন ধরে তিনি অফিস করছেন না। আত্মগোপনে থেকে বাঁচার জন্য তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন।
এছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে আরও দুজন নজরদারিতে আছেন। তারা হলেন- মকবুল এবং মালেক। যে কোনো সময় এই দুজনকে গ্রেফতার করা হবে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহাদাৎ হোসেন সুমা বলেন, সাইফুলের বক্তব্যে মিল্টনের নাম এসেছে। তবে এখনই তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। সাইফুলের বক্তব্যসহ আরও অনেক কিছু মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। সবকিছু মিলে গেলে মিল্টনকে আইনের আওতায় আনা হবে। সাইফুল যদি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মিল্টনের নাম বলত তাহলে তাকে ধরা সহজ হতো।
ডিবি সূত্র জানায়, রিমান্ড শেষে বৃহস্পতিবার সাইফুলকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে নেওয়ার আগে সে ডিবিকে জানিয়েছিল, নিজের দোষ স্বীকার করে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবে। কিন্তু আদালতে যাওয়ার পর তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট ডিবি কর্মকর্তা জানান, আমরা সাইফুলের মোবাইল রেকর্ড পর্যালোচনা করেছি। তার হোয়াটসঅ্যাপস চেক করেছি। ফরেনসিক পরীক্ষার প্রক্রিয়া চলছে। এসবের মাধ্যমে কয়েকজন চাকরিপ্রার্থীকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের ধরার চেষ্টা চলছে। তাদের ধরতে পারলে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। তারা যদি পর্যাপ্ত তথ্য দেয় এবং ডিবিকে সহায়তা করে তা হলে হয়তো তাদের আসামি করা হবে না। এক্ষেত্রে তাদের সাক্ষী করা হতে পারে। আর যদি তারা ডিবিকে সহযোগিতা না করে তাহলে আসামি করা হবে। রিমান্ডে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সাইফুলকে প্রশ্ন দিয়েছেন মিল্টন।
সুমন ছিল রাশেদুলের কর্মচারী। রাশেদুলই সাইফুলের নম্বর মিল্টনকে দিয়েছে। সাইফুল এর আগেও প্রশ্ন ফাঁস করেছে।
সূত্র জানায়, মাউশিসহ সারা দেশে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছে মিল্টন। এ সিন্ডিকেটে মাউশি কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ বাইরের আরও কয়েকজন আছেন। মিল্টনের রুমে তাদের নিয়মিত যাতায়াত ছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। কেবল প্রশ্নপত্র ফাঁসই নয়, বিভিন্ন বদলি, এমপিওভুক্তি এবং পক্ষে-বিপক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া, নিয়োগ পরীক্ষায় কেন্দ্রে সুবিধা করে দেওয়াসহ নানা কাজে যুক্ত।
সূত্র আরও জানায়, ছাপাখানা বা প্রণয়ণের সময় এবারের প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। মিল্টনের সিন্ডিকেটে রিপন, বশিরসহ আরও কয়েকজনের নামও উঠে এসেছে। তদন্ত সূত্র আরও জানায়, পঞ্চম ধাপের এই পরীক্ষার প্রশ্ন কেন্দ্রে পৌঁছানোর সময়ে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। সম্প্রতি মাউশিতে এর আগে আরও চারটি নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে। সেগুলোর প্রশ্নপত্র পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছানোর দায়িত্বও পালন করেছিল মিল্টন। আর গ্রেফতার আহসান হাবীব ছিল উপপরিচালকের দপ্তরে। তিনি উিউটি রোস্টারের তালিকা কম্পোজ করতেন। সে সুবিধা মতো কেন্দ্রে সিন্ডিকেটের লোকদের সমন্বয় করে ডিউটিতে নাম দেওয়ার কাজ করতেন। এ অবস্থায় অন্য নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নও মিল্টন গং ফাঁস করেছে কি না তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, মাউশিতে ৫১৩টি পদে নিয়োগের লক্ষ্যে রাজধানীতে ৬১ কেন্দ্রে ১৩ মে এই নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রার্থী ছিলেন ১ লাখ ৭৯ হাজার ২৯৪ জন। এখন পর্যন্ত গ্রেফতার ৫ জন হলেন-পটুয়াখালী সরকারি কলেজের প্রভাষক (৩৪তম বিসিএস) রাশেদুল ইসলাম, মাউশির উচ্চমান সহকারী আহসান হাবীব, অফিস সহকারী নওশাদুল ইসলাম, খেপুপাড়া বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইফুল ইসলাম ও পরীক্ষার্থী সুমন জমাদ্দার। এদের মধ্যে সুমন এবং সাইফুলকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রাশেদুল, আহসান হাবীব এবং নওশাদ এখন রিমান্ডে ডিবি হেফাজতে আছে। রিমান্ড শেষে আজ শুক্রবার তাদের আদালতে হাজির করা হতে পারে।
জানতে চাইলে ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, মাউশি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে যাদের নাম আসছে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। আর উপকমিশনার ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, মাউশি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তাই এ পরীক্ষা বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। পরীক্ষা বাতিলের পর আরও অনেককে আইনের আওতায় আনা হবে।
পরীক্ষা বাতিল : এদিকে পরীক্ষা বাতিলে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার পর শিক্ষা ভবনে বৈঠক হয়। এতে পরীক্ষা বাতিল এবং গ্রেফতারের আনুষ্ঠানিক চিঠি পাওয়ার পরে দুই কর্মচারী আহসান হাবীব ও নওশাদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত হয়। এই দুজনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে অননুমোদিত ছুটি ভোগের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া ছুটি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত মিল্টনের ব্যাপারেও দাপ্তরিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে।