ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২ জুন, ২০২২ ২১:১৭ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৪৪ বার
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের টেস্ট ফরম্যাটে আবারো অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন সাকিব আল হাসান। আর সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন লিটন দাস।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেন, আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সাকিব আল হাসান আমাদের টেস্ট অধিনায়ক ও লিটন সহ-অধিনায়ক থাকবেন।
সাকিব আল হাসান এর আগেও নানা মেয়াদে বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব করেছেন। শৃঙ্খলাভঙের দায়ে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
সর্বশেষ ২০১৯ সালে এরপর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের তদন্তে ওঠে আসে সাকিব আল হাসানের সাথে একজন ভারতীয় জুয়াড়ি যোগাযোগ করেছে এবং সেটা সাকিব আইসিসির কাছে জানাননি।
এই ঘটনায় সাকিব আল হাসানকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় তখন।
যদিও সাকিব আল হাসান ততদিনে প্রায় ১৩ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কাটিয়েছেন, আইসিসির নানা রকম প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন, কিন্তু সেই সময়ে এমন একটি প্রস্তাবের কথা সাকিব আইসিসিকে কেন বলেননি সেটা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন উঠেছিল।
সাকিব অবশ্য তখন বিবৃতিতে বলছিলেন, তিনি এমন একটি ভুল করেছেন যেটা তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য অনুকরণীয় নয়। এবং তিনি ভবিষ্যতে কখনোই এই ধরনের ভুল করবেন না। কিন্তু এখানে সাকিবের খেলার প্রতি নিষ্ঠা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকেই।
অস্ট্রেলিয়ায়-এর আগে এমন উদাহরণ আছে, নৈতিক কোনো অপরাধের দায়ে শাস্তি পেয়েছেন এমন কোনো ক্রিকেটারকে একটা দলের নেতৃত্ব দেয়া থেকে বিরত রাখা হয়।
যে কারণে স্টিভ স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নারের মতো ক্রিকেটার বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারিতে শাস্তি পেয়ে মাঠে ফিরেও আর অধিনায়ক হিসেবে বিবেচিত হননি। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ড এখানে তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চেয়েছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপনের কাছেও এ প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।
পাপন বলেন, টেস্টে এখন পর্যন্ত যে অপশন ছিল তাতে সাকিব ছাড়া আর উপায় ছিল না। আইসিসির যে পানিশমেন্ট দেয়া হয়েছে সেখানে অন্যদের সাথে সাকিবেরটায় স্পষ্ট পার্থক্য আছে।
বাংলাদেশের ক্রিকেট পর্যবেক্ষক মাজহার মিঠুন বলেন, বাংলাদেশে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেটা আদর্শ নয়, কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড আসলে একটা প্রতিকূল অবস্থানে আছে।
গত বছর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের একটি ম্যাচে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মেনে না নিয়ে তিনি স্ট্যাম্পে লাথি মেরেছিলেন। যা ক্রিকেটের স্পিরিটের বিরুদ্ধে যায় বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।
২০১৯ সালে সাকিব নিষিদ্ধ হন দুই বছরের জন্য, তার ঠিক পরের মাসে বাংলাদেশের ভারত সফর ছিল, ওই সময়ে মুশফিকুর রহিমকে অধিনায়ক হিসেবে ফেরানোর কথা ভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কিন্তু ২০১৮ সালে নানা নাটকীয়তার পরে অধিনায়কত্ব হারানো মুশফিক আর অধিনায়ক পদে ফিরতে রাজি হননি।
তামিম ইকবালও টেস্ট ফরম্যাটে অধিনায়ক হতে চাননি বলেই ওই সময় প্রতিবেদনে বলা হয়।
মাজহার মিঠুনের মতে, সব মিলিয়ে বাকি ছিলেন মুমিনুল। এখন যখন মুমিনুল খুব কোনঠাসা, এখন আসলে আপাতত সাকিব ছাড়া বিসিবির হাতে তেমন বিকল্প নেই।
শুধু শৃঙ্খলা ও আইসিসির দেয়া শাস্তি নয়, টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি সাকিবের আগ্রহ নিয়ে একটা প্রশ্ন ছিল। ২০২১ সালেই সাকিব আল হাসান শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ফরম্যাটে না খেলে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে খেলার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কাছে অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়েছিল সাকিব আল হাসান। সে সময় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি।
এরপর নানা সময়ে পারিবারিক ও ব্যক্তিগত নানা কারণে সাকিব আল হাসানের বেশ কিছু টেস্ট খেলা হয়নি। গত ছয় বছরে বাংলাদেশ খেলে ৩৯টি টেস্ট ম্যাচ, যার মধ্যে ২০টিই মিস করেছেন সাকিব। আইসিসির নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আসার পর বাংলাদেশের খেলা ১৩টি টেস্টের মধ্যে আটটি টেস্টেই সাকিব আল হাসান ছিলেন না।
সাকিব আল হাসান নিজেও গণমাধ্যমে নানা সময়ে বলেন, তিনি এমন একটা বয়সে আছেন ’বেছে খেলাটাই হবে সবচেয়ে ভালো উপায়।’
এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সংশ্লিষ্ট শীর্ষ ব্যক্তিরাই বলেন, সাকিব আল হাসান টেস্ট খেলতে আগ্রহী।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, সাকিব এখন টেস্ট খেলতেই বেশি আগ্রহী।
খালেদ মাহমুদ সুজন সাকিবের অভিজ্ঞতার বিষয়টিই এগিয়ে রেখে বলেন, সাকিব অভিজ্ঞ একজন ক্রিকেটার। শেষ দুই টেস্টে যে পরিমাণ বল করেন, সাকিব খুব কমই টানা এতো সময় বল করেন। সাকিবকে গ্রেট ক্রিকেটার মনে করেন মাহমুদ।
সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন বলেন, সাকিবের সাথে এসব বিষয়ে আলোচনা করেই আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার সাথে সাকিবের যা কথা হয়েছে তাতে নিশ্চিতভাবেই সাকিব নিয়মিত টেস্ট ক্রিকেট খেলবেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ও নিশ্চিত না। এরপরে যত ফরম্যাটে খেলা আছে সব খেলবে। সাকিবকে অধিনায়ক নিশ্চিত করার আগে এটা একটা আলোচনার বিষয় ছিল ও খেলবে কি না।
সাকিব আল হাসান দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ দলের সাথে আছেন। বিভিন্ন পর্যায়ের ক্রিকেটাররা সাকিব আল হাসানকে অনুপ্রেরণা মেনে জাতীয় দল পর্যন্ত এসেছেন।
সাকিবের দীর্ঘদিনের কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সফর শেষে বলেন, সাকিব আল হাসানকে অধিনায়ক করার এটাই সবচেয়ে ভালো সময়। সাকিবের যে অভিজ্ঞতা, দলে অবস্থান, পারফরম্যান্স, সব মিলে সাকিবের মতো কাউকে নেতৃত্ব না দেয়া মানে তার পুরোপুরি ব্যবহার না করা।
সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ১৪টি টেস্ট ম্যাচ খেলে যার মধ্যে তিনটিতে বাংলাদেশ জিতেছে, ১১টি ম্যাচে হেরেছে, কোনো ম্যাচ ড্র হয়নি।
প্রায় ১৩ বছর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে মাশরাফী বিন মোত্তর্জার চোটের কারণে প্রথম টেস্ট অধিনায়কত্ব পেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান।
সাকিব আল হাসান এখন পর্যন্ত তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো পারফর্ম করা ক্রিকেটার।
সূত্র : বিবিসি