ঢাকা, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

ইউক্রেনের সমর পরিকল্পনা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই যুক্তরাষ্ট্রের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক


প্রকাশ: ৯ জুন, ২০২২ ০৮:৩২ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩৮০ বার


ইউক্রেনের সমর পরিকল্পনা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই যুক্তরাষ্ট্রের

ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমিরি জেলেনস্কি প্রায় প্রতিদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাশিয়ার আক্রমণ নিয়ে হালনাগাদ তথ্য জানাচ্ছেন, ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে ইউক্রেনীয় সেনাদের হাতে পশ্চিমা অস্ত্রের কার্যকারিতা। আর পেন্টাগন নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে যুদ্ধের অগ্রগতি জানাচ্ছে। কিন্তু জনগণের কাছে যুদ্ধের খবরের এই মসৃণ প্রবাহ থাকলেও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার কাছে ইউক্রেনের সামরিক অভিযানের পরিকল্পনার তথ্য খুব কম রয়েছে। এমনকি রাশিয়ার সামরিক অভিযান, সফলতা ও ব্যর্থতা সম্পর্কে এরচেয়ে বেশি ধারণা রয়েছে তাদের। সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস এখবর জানিয়েছে।

মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, ইউক্রেনীয় সরকার গোপন ব্রিফিং বা তাদের আভিযানিক পরিকল্পনা সম্পর্কে তাদের খুব কম অবহিত করছে। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারাও স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে তারা সবকিছু বলছেন না।


মার্কিন গোয়েন্দা কমিউনিটি ইউক্রেনসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশের তথ্য সংগ্রহ করে। কিন্তু মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সাধারণভাবে ইউক্রেনের মতো বন্ধু রাষ্ট্র নয়, রাশিয়ার মতো শত্রু ভাবাপন্ন দেশগুলোর তথ্য সংগ্রহে মনোযোগী বেশি। আর গত ৭৫ বছর ধরে তাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পেয়ে আসছে রাশিয়া। আর ইউক্রেনের গোয়েন্দা সেবা নির্মাণে কাজ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, দেশটির সরকারের ওপর গুপ্তচরবৃত্তির জন্য নয়।


সাবেক কর্মকর্তারা বলছেন, এর ফলে কিছু অন্ধকার জায়গা তৈরি হয়েছে।

সিনিয়র গোয়েন্দা কর্মকর্তা বেথ স্যানার বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধে কেমন করছে তা সম্পর্কে প্রকৃত অর্থে আমরা কতটুকু জানি? একজন মানুষ কি পাওয়া যাবে যিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারবেন ইউক্রেনের কত সেনা নিহত হয়েছে, ইউক্রেনের কত সরঞ্জাম নষ্ট হয়েছে?


ইউক্রেনের সামরিক কৌশল ও পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ চিত্র জানা না থাকলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন দেশটির সামরিক সামর্থ্য বাড়াতে নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে। গত সপ্তাহে বাইডেন ঘোষণা দিয়েছেন, কিয়েভকে রকেট আর্টিলারি ব্যবস্থা সরবরাহ করা হবে। পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাসে যুদ্ধরত উভয়পক্ষ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে থাকা অবস্থায় ইউক্রেন পশ্চিমা শক্তিশালী অস্ত্র পৌঁছার অপেক্ষায় রয়েছে।

পেন্টাগন কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেনে দ্রুত অস্ত্র পাঠানোর জন্য তাদের একটি ব্যবস্থা রয়েছে। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে অনুরোধের মাধ্যমে তা শুরু হয়। এছাড়া এর মধ্যে রয়েছে মার্কিন পর্যালোচনা। যে পর্যালোচনায় বিবেচনা করা হয় ইউক্রেনের কেমন অস্ত্র লাগবে এবং কত দ্রুত তা চালনা তারা শিখতে পারবে।

কয়েকটি ইউরোপীয় গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া যুদ্ধে রাশিয়া যেসব ভূখণ্ড দখল করেছে সেগুলো মুক্ত করা অসম্ভব না হলেও কঠিন। কিন্তু মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইউরোপীয়দের মতো আশাবাদী না। এখনও ইউক্রেনের প্রতিরক্ষায় ফাটল রয়েছে এবং ডনবাসে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সামর্থ্য ও কৌশল নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কারণে সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে অসম্পূর্ণ চিত্র হাজির হচ্ছে।

গত মাসে সিনেটের এক শুনানিতে ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স-এর পরিচালক অ্যাভ্রিল ড. হাইনেস জানান, ইউক্রেন কী পরিমাণ অতিরিক্ত সহযোগিতা ধারণ করতে পারবে তা বলা খুব মুশকিল। সম্ভবত ইউক্রেনীয়দের তুলনায় আমাদের কাছে রুশ পক্ষের বেশি তথ্য রয়েছে।

একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, ডনবাসে কোন পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন জেলেনস্কি। ইউক্রেনের সেখানে কৌশলগত দুটি বিকল্প রয়েছে: সেনা প্রত্যাহার অথবা রুশদের ঘেরাওয়ে পড়ার ঝুঁকি।

সম্প্রতি ইউক্রেন আগের চেয়ে বেশি তথ্য জানাচ্ছে। রবিবার জেলেনস্কি রণাঙ্গন পরিদর্শন করেছেন এবং সেভেরোদনেস্কতে চলমান লড়াইকে চরম কঠিন বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি স্বীকার করেছেন প্রতিদিন ১০০ জনের মতো ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হচ্ছে এবং রাশিয়া দেশটির এক-পঞ্চমাংশ দখল করেছে।

ইউক্রেন সম্পর্কিত গোয়েন্দা তথ্যে অসম্পূর্ণতার আরেকটি কারণ হলো আকাশ মেঘে ঢাকা থাকার কারণে স্যাটেলাইটের কার্যকারিতা কমে যাওয়া। রাশিয়ার সেনাবাহিনীর অবস্থান সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত, প্রায় তাৎক্ষণিক গোয়েন্দা তথ্য ইউক্রেনকে জানাচ্ছে। এই তথ্য ইউক্রেনীয় সেনারা তাদের অভিযানের পরিকল্পনা ও হামলায় ব্যবহার এবং নিজেদের প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, কিন্তু মার্কিন জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ জেনারেল মার্ক অ্যা. মাইলি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন-এর মতো শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা শুধু তাদের কৌশলগত লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন, তাদের আভিযানিক পরিকল্পনার বিস্তারিত জানাননি। ইউক্রেনীয়দের এই গোপনীয়তার কারণে মার্কিন সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বাধ্য হয়েছে ইউক্রেনে সক্রিয় অপর দেশগুলো, প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া ইউক্রেনীয় ও জেলেনস্কির প্রকাশ্য মন্তব্য থেকে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।

কর্মকর্তারা বলেছেন, জনগণ ও মিত্র দেশের কাছে ইউক্রেন নিজেদের শক্তিশালী হিসেবে ভাবমূর্তি তুলে ধরতে চায়। নিজেদের দুর্বলতা বা তারা যুদ্ধে জিততে পারবেন না বলে হাজির করে এমন কোনও তথ্য দেশটির সরকার দিতে চায় না। প্রকৃত অর্থে, ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা চান না এমন কোনও তথ্য দিতে যাতে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্ররা অস্ত্র সরবরাহ কমিয়ে দিতে উৎসাহী হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশ ইউক্রেন কয়েক বছর ধরে নিজেদের সামরিক ও গোয়েন্দা সংস্থাকে রাশিয়ার কাছ থেকে সুরক্ষিত রাখতে কাজ করেছে। ফলে তারা হয়ত মনে করছে, অন্য দেশের সঙ্গে তাদের পরিকল্পনা ও আভিযানিক অবস্থার তথ্য বিনিময় করলে দুর্বলতা মস্কোর চোখে ধরা পড়তে পারে। যদি রুশ সেনাবাহিনী এগুলো সম্পর্কে জেনে যায়।

অবশ্য আমেরিকার কর্মপরিকল্পনা নিয়ে ইউক্রেনীয়রা সব সময় এই সতর্কতা অবলম্বন করে না। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কিয়েভ সফরের কথা জেলেনস্কি প্রকাশ্যে জানিয়েছেন। যদিও মার্কিন কর্মকর্তারা এই সফরকে গোপন রাখার চেষ্টা করেছেন।

ড. ব্রিডেল বলেন, ইউক্রেনীয়দের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সামনে আনলে যদি রাশিয়ার যুদ্ধ প্রচেষ্টা লাভবান হয় তাহলে এরপক্ষে মার্কিন জনগণ বা ইউক্রেনীয়দের স্বার্থ থাকতে পারে বলে আমি নিশ্চিত না। তবে এর অর্থ হলো আমরা উভয়পক্ষের কথা প্রকৃত অর্থে জানি না।

এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, রাশিয়ার সেনা হতাহত ও সরঞ্জামের ক্ষয়ক্ষতির সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র অনেক ভালো ধারণা রাখে। যেমন- ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির ধারণা প্রায় রাশিয়ার সমান সংখ্যক ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হয়েছে। কিন্তু ইউক্রেনীয় ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থাটির ধারণায় আত্মবিশ্বাসের মাত্রা খুব কম।

স্যানার মনে করেন, জনগণ বা কংগ্রেসের কাছে গোয়েন্দা সংস্থাসগুলো যদি ইউক্রেনের সামরিক লক্ষ্য সম্পর্কে স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরতে না পারে তাহলে এর সম্ভাব্য মূল্য দেওয়া লাগতে পারে। রাশিয়া যদি আরও অগ্রসর হয় তাহলে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর পরিস্থিতি অনুধাবনে ব্যর্থতায় গোয়েন্দা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ আসতে পারে।

স্যানার বলেন, সবকিছু রাশিয়ার লক্ষ্য এবং রাশিয়ার লক্ষ্য অর্জনের অবস্থা সম্পর্কে। আমরা কথা বলছি না ইউক্রেন তাদেরকে হারাতে পারবে কিনা তা নিয়ে। আমার কাছে মনে হচ্ছে আমরা এই বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা না বলে আরেকটি গোয়েন্দা ব্যর্থতার পটভূমি তৈরি করছি।


   আরও সংবাদ