ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৪ জুন, ২০২২ ০৮:৩৩ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪০২ বার
বিদ্যমান বৈশ্বিক সংকটে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে সতর্কতামূলক মুদ্রা ও রাজস্ব নীতি অনুসরণের সুপারিশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগামীতে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ও মূল্যস্ফীতির হার আরও বেড়ে যেতে পারে-এমন শঙ্কাও প্রকাশ করেছে ব্যাংকটি। এতে আগামী ত্রৈমাসিকে মুদ্রাবাজারে ও মূল্যস্ফীতিতে অস্থিতিশীলতা আরও বাড়তে পারে। এই পরিস্থিতি মুদ্রার বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা রক্ষা ও মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে রাখতে যে কোনো ধরনের সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে মোটেও দেরি করা হবে না।
রোববার রাতে দেশের হালনাগাদ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ত্রৈমাসিক’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতি তিন মাস পর পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার পর হঠাৎ করে চাহিদা বাড়া ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিতে প্রবল চাপের সৃষ্টি হয়েছে। এ চাপের বড় অংশই এসেছে বৈশ্বিক খাত থেকে। এতে বিশ্বে পণ্যের সরবরাহ পরিস্থিতি বাধাগ্রস্ত হয়ে দাম বেড়ে গেছে। এগুলো আমদানি করার ফলে একদিকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় বেশি বেড়েছে। অন্যদিকে বৈশ্বিক মন্দায় রেমিট্যান্স কমেছে। আগের বকেয়া আমদানি ব্যয় ও স্বল্পকালীন বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের ফলে বৈদেশিক মুদ্রার খরচ বেড়েছে। কিন্তু সে হারে আয় বাড়েনি। এতে একদিকে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাবে ঘাটতি বেড়ে মুদ্রা বাজারে চাপ পড়েছে। ফলে ডলারের বিপরীতে টাকা মান হারাচ্ছে। একই সঙ্গে পণ্যমূল্য বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা রাখতে আর্থিক ও রাজস্ব নীতিতে সতর্ক থাকতে হবে। আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও চলতি হিসাবে ঘাটতি রোধ করতে হবে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, চলমান করোনাপরবর্তী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে বিশ্বব্যাপী পণ্য সরবরাহের ধাক্কা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি বড় পরিসরে পুনরুদ্ধার কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। শিল্প, কৃষি ও সেবা খাতে অর্থনৈতিক বিকাশ ছিল উল্লেখযোগ্য। কিন্তু সম্প্রতি বৈশ্বিক সংকটে বড় ধাক্কা লেগেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলসহ প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতির হার বেশি মাত্রায় বেড়ে গেছে। আমদানির নামে বাংলাদেশ একধরনের মূল্যস্ফীতি দেশে নিয়ে আসছে, যা দেশে এসে ভেতরের মূল্যস্ফীতির হারকেও উসকে দিচ্ছে। এ অবস্থায় রপ্তানির তুলনায় আমদানি ব্যয় মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি ও রেমিট্যান্স কমে যাওয়া অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক অস্থিরতার পাশাপাশি ব্যাংকিং ব্যবস্থায়ও অস্থিরতার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে ঋণ প্রবাহ যেভাবে বেড়েছে তার বিপরীতে আমানত প্রবাহ কমেছে। এতে ব্যাংকে তারল্য কমে গেছে। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বেশি হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানিতে চাপ বেড়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণে সম্পদের গুণগত মান কমে গেছে। এসব কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে যে উচ্চ আশা ব্যক্ত করেছিল তা এখন মেঘাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। কেননা, ইউরোপের দেশগুলোতে রপ্তানিতে নেতিবাচক পরিস্থিতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুদ্ধের কারণে ইউরোপের অনেক দেশ এখন সংকটে পড়েছে। চড়া মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ করতে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে। এতে ভোগের প্রবণতা কমেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে দেশের বাজারেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে খাদ্যমূল্য সহনীয় রাখতে সরকার থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে খাদ্যসামগ্রীর দামও কমাতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে খাদ্য নিরাপত্তা। আন্তর্জাতিক বাজারে সারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে। এতে কৃষি উৎপাদন উৎপাদনে চাপ বাড়াতে পারে। অথবা সরকারকে ভর্তুকি বেশি দিত হবে, যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করবে।