ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

অর্থ পাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেই

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১৬ জুন, ২০২২ ০৮:৫৫ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩৯০ বার


অর্থ পাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেই

দেশ থেকে অর্থ পাচার বাড়ছে। এক বছরে যে টাকা পাচার হয়, তা ৩টি পদ্মা সেতুর ব্যয়ের সমান। ঋণের নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের টাকা, বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ এবং ঘুস-দুর্নীতির টাকা দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্টে পাচারের তথ্য উঠে আসছে।

কিন্তু অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে পাচারকারীদের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারি সিদ্ধান্তে অর্থ ফিরে আসা তো দূরের কথা, পাচারকারী আরও উৎসাহিত হবে।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, কয়েক বছর ধরে টাকা পাচার বাড়ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্টে সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য উঠে আসছে। আর অর্থ পাচারের এই বিষয়টি সরকারও স্বীকার করেছে। কিন্তু পাচার রোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা সামনে আসছে না।

জানতে চাইলে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বুধবার লেন, পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেটি ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে। তিনি বলেন, আইন অনুসারে পাচার করা সব অর্থ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, যে পরিমাণ অর্থ পাচার করা হয়েছে, তার দ্বিগুণ জরিমানা করতে হবে। তৃতীয়ত, ৪ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আর পাচারকৃত টাকা ফেরত আনতে চাইলে কোন দেশে টাকা আছে চিহ্নিত করতে হবে। এরপর ওই দেশের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। কিন্তু সে ধরনের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা দেখছি না। উলটো বাজেটে পাচারকারীদের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। যেমন পাচারের অর্থ ফেরত আনলে মাত্র ৭ শতাংশ কর দিলেই হবে। কিন্তু একজন নিয়মিত করদাতাকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কর দিতে হয়। এ ধরনের সিদ্ধান্ত পাচারকারীদের দায়মুক্তি দেওয়া, আইনের সাংঘর্ষিক, বৈষম্যমূলক, অসাংবিধানিক, দুর্নীতি সহায়ক এবং গুরুতর অপরাধ। তিনি বলেন, পাচারকারীদের জামাই আদর করে ফুলের মালা দেওয়া হবে, কিন্তু নিয়মিত করদাতারা শাস্তি পাবে এটা হতে পারে না। এতে টাকা ফেরত আসার সম্ভাবনা কম।

আন্তর্জাতিক ৬টি সংস্থার রিপোর্টে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের তথ্য এসেছে। এগুলো হলো-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই), সুইস ব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম (আইসিআইজে) প্রকাশিত পানামা প্যারাডাইস ও পেনডোরা পেপারস, জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রোগ্রামের (ইউএনডিপি) রিপোর্ট এবং মালয়েশিয়ার প্রকাশিত সেদেশের সেকেন্ড হোম রিপোর্ট। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও সিঙ্গাপুরে বেশ কিছু বাংলাদেশির অর্থ পাচারের তথ্য মিলেছে।

গত বছরের ডিসেম্বরে প্রকাশিত জিএফআইর প্রতিবেদনে বলা হয়, ৬ বছরে দেশ থেকে ৪ হাজার ৯৬৫ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। প্রতি ডলার ৯২ টাকা হিসাবে স্থানীয় মুদ্রায় সাড়ে ৪ লাখ কোটি। গড়ে প্রতিবছর পাচার হচ্ছে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা। প্রতিবছর বৈদেশিক বাণিজ্যের ১৮ শতাংশই পাচার হয়। শুধু এক বছরের পাচার করা অর্থ দিয়েই ৩টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। জিএফআইর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২টি প্রক্রিয়ায় এই অর্থ পাচার হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি মূল্য বেশি দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং) এবং রপ্তানিতে মূল্য কম দেখানো (আন্ডার ইনভয়েসিং)। এছাড়া সরাসরি ব্রিফকেস ভরে ডলার নিয়ে যাওয়া, বিওআইপি ব্যবসা, হুন্ডি ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অর্থ পাচারের তথ্য মিলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে পিকে হালদার ধরা পড়ার পর পাচারের বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে। নাটোরের এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের কানাডায় অর্থ পাচারের তথ্য মিলেছে। বাংলাদেশি আরেকজন এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর মালয়েশিয়ায় অর্থ পাচারের তথ্য মিলেছে। যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ পাচার করেছেন সাউথ বাংলা ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম আমজাদ হোসাইন ও ফারইস্টের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম। কুয়েতে অর্থ পাচার করেছেন এমপি শহিদুল ইসলাম পাপুল। ফরিদপুরে দুই ছাত্রলীগ নেতার ২ হাজার কোটি টাকা পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে।


   আরও সংবাদ